নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
গত ২৪ ঘন্টায় খুলনার চার হাসপাতালে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে করোনায় মারা গেছে ১২ জন ও উপসর্গে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার (০৪ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে সোমবার (০৫ জুলাই) সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চারটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়।
এর মধ্যে খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালেই মারা গেছে ১০ জন। এছাড়া খুলনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে দুজন মারা যায়। আবু নাসের হাসপাতালে একজন ও বেসরকারি গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের ফোকাল পার্সন ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনায় পাঁচজন ও উপসর্গে পাঁচজন মারা গেছেন।
করোনায় মৃতরা হলেন- খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকার হাবিবুর (৮০), রাফেজা (৫৮), সুভাস (৮২), পাইকগাছার আ. রউফ (৪৫) ও যশোরের কেশবপুরের আ. জলিল খান (৫২)।
হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৮৭ জন। যার মধ্যে রেডজোনে ১১৭ জন, ইয়োলোজোনে ৩০ জন, আইসিইউতে ২০ জন ও এইচডিসিতে ২০ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৩৬ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৪৫ জন।
গাজী মেডিকেল হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী ডা. গাজী মিজানুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- নগরীর টুটপাড়ার মো. আব্দুল্লাহ (৭৭), খালিশপুর মুজগুন্নি এলাকার মোশারফ হোসেন (৬৮), বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার সরদার মো. আলী (৬৫) ও চিতলমারী গোয়ালিয়া এলাকার পুষ্প রানী বালা (৮১)।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও ১১৯ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে রয়েছেন ৯ জন ও এইচডিইউতে আছেন আটজন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ২৭ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৯ জন। পিসিআর ল্যাবে ৬৩টি নমুনা পরীক্ষায় ৪৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
খুলনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. কাজী আবু রাশেদ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- বটিয়াঘাটা উপজেলার হায়দার (৭৫) ও যোগীপোলের মমতাজ (৬০)। এ ছাড়া চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৬৩ জন। তার মধ্যে ৩৪ জন পুরুষ ও ২৯ জন নারী। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ১২ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১২ জন।
খুলনার আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. প্রকাশ চন্দ্র দেবনাথ জানান, হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত নগরীর নিরালা এলাকার ওয়াহিদুজ্জামান (৬৬) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। করোনা শনাক্ত হওয়া ৪১ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। যার মধ্যে আইসিইউতে রয়েছেন ১০ জন।
গতকাল ৪ জুলাই খুলনা বিভাগে এক দিনে রেকর্ড ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
করোনা সংক্রমণের খুলনা বিভাগে ভয়বহ থেকে আরও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হচ্ছে। ২৪ ঘন্টায় খুলনা বিভাগে করোনাভাইরাসে এক দিনে সর্বোচ্চ ৪৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে।
শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টার মধ্যে ২৪ ঘন্টায় তাদের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এই সময়ে নতুন ১ হাজার ৩০৪ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এক দিনে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন ৫৬৬ জন। করোনায় এর আগে খুলনায় গত ১ জুলাই সর্বোচ্চ ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক রাশেদা সুলতানা জানান, এক দিনে খুলনা ও কুষ্টিয়ায় ১৫ জন করে, যশোরে ৭ জন, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও মাগুরায় ২ জন করে মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া মেহেরপুর, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে ১ জন করে করোনা রোগীর মৃত্যু হয়।
খুলনা বিভাগের মধ্যে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় চুয়াডাঙ্গায় গত বছরের ১৯ মার্চ। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছেন ৬০ হাজার ৫৬৪ জন।
আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ হাজার ২১৪ জন। এ সময় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪০ হাজার ২১৮ জন।
যশোরে শাটডাউন পালনে কঠোরতা
আজ শনিবার যশোরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাদির হোসেন শামীম, হিল্লোল চাকমা ও আবু নাসিরের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত সকাল দশ’টায় যশোর সিভিল কোর্ট চত্বরে কয়েকজনকে জরিমানা করেছে।
শুক্রবার যশোরে শাট-ডাউনে করোনা বিধি না মানায় ১৩ অভিযানে ৫৪ জনকে ৩২,২৫০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছিলেন যশোরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাদির হোসেন শামীম।
করোনা’র দ্বিতীয় ধাক্কা প্রতিরোধে লকডাউন
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে শাটডাউন। শাটডাউন বাস্তবায়নে সরকার সর্বোচ্চ কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে।
শাটডাউনের সময় জরুরি কারণ ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে এলে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সরকারি এক তথ্য বিবরণী জারি করা হয়েছিল।
এতে বলা হয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে সারাদেশে সাতদিনের জন্য জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচল এবং বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এ সময়ে জরুরি পরিসেবা কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ছাড়া এবং জরুরি কারণ ছাড়া ঘরের বাইরে কেউ বের হতে পারবে না। যদি কেউ বের হয় তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গত বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বিধি নিষেধ ও নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রজ্ঞাপনে দেয়া হয়। সবাইকে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে সরকার।
মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে খোলা থাকবে কাঁচাবাজার। কিন্তু সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা করতে হবে। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন, বাজার কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় প্রশাসনকে দায়িত্ব দিয়েছে সরকার।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বৃহস্পতিবার থেকে সাত দিনের শাটডাউন বা কঠোর বিধিনিষেধে অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছে সরকার। এ নির্দেশ অমান্য করে কেউ বাড়ির বাইরে গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বুধবার দেয়া এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। এতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত এই শাটডাউন বা বিধিনিষেধ কার্যকর থাকবে।
তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আর জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্তরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তারা কারা সেটাও নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার।
এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন, বাজার কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় প্রশাসনকে দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। ফলে ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে এবং চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন বা সৎকারের জন্য বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে।
শাটডাউনে কারা বের হতে পারবে, কারা পারবে না?
যারা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকা নেবেন, তারা টিকা কার্ড দেখিয়ে বাইরে বের হতে পারবেন। আর খাবারের দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রি (অনলাইন/টেকওয়ে) করতে পারবে।
আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকায় বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট দেখিয়ে গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করতে পারবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় যেভাবে নির্দেশনা দেবে সেভাবে চলতে হবে।
সরকার শাটডাউন বাস্তবায়নে এবার সেনাবাহিনীকেও মাঠে নামাচ্ছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠপর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয়সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবে। এ ছাড়াও শাটডাউন বাস্তবায়নে মাঠে থাকবে বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও আনসার।
তারা কীভাবে টহল দেবে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সিদ্ধান্ত নেবেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। মাঠে থাকবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে।
আইনানুগ ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেবেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।