যশোর ব্যুরো:
শনিবার দিবাগত রাতে বিদ্রোহের পরে তিন শিশু ‘বন্দি’দের পলায়ন ঘটনা ঘটেছে। যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে তিন ‘বন্দি’ পালিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন উপ-পরিচালক জাকির হোসেন।
তবে কোন তিনজন পালিয়েছে আর কখন পালিয়েছে সেটা এখনও তিনি জানেন না। এদিকে জেলা প্রশাসকের কার্যলয় থেকে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করার কথা জানা গেলেও উপ-পরিচালক জাকির জানান, তিনি শুনেছেন, কিন্তু ঠিকভাবে জানেন না।
তবে জেলা প্রশাসন সুত্রের তথ্যমতে, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান’কে প্রধান করে ২ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অন্য একটি সুত্র মতে, পলাতক তিন বন্দি হলেন- গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ থানার মৃত আইউব আলী’র ছেলে বাপ্পারাজ(১৬), বরগুনা জেলার আমতলীর উত্তর গদখালি গ্রামে ছেলে শাকিল(১২), পিতা-মোঃ মোস্তফা কাজী, নাটোর জেলার কান্দিভিটা গ্রামের মোঃ সাইফুল ইসলামের ছেলে মোঃ সোহান (১৬)।
যশোর চাঁচড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক রাকিবুজ্জামান বলেন, ‘আমি ঘটনা শুনেছি। এখন সেখানে যাচ্ছি। গেলে বিস্তারিত বলতে পারবো।’
এর আগে গতকাল রাতে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে আবারও ‘শিশু বন্দি’রা কেন্দ্রটিতে ব্যাপক ভাঙচুর ও বিদ্রোহ করেছে। এসময় এক পুলিশ কর্মকর্তা এবং একজন ‘বন্দি’ আহত হয়েছে।
মধ্যরাতে ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ পরিস্থিতি মোকাবেলা করে। যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান রাতে এসে পৌঁছান।
‘বন্দি’রা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা এবং চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ করে এ বিক্ষোভ করে। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, বন্দি’দের এ অভিযোগ পুরোপুরি ঠিক না, তাদের এ অভিযোগ তদন্ত করা হবে।
চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইনসপেক্টর মো. রোকিবুজ্জামান রাত ১২টার দিকে জানান, ‘শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে ‘বন্দি’রা বিভিন্ন দাবিতে ভাঙচুর শুরু করে। তারা বিভিন্ন ভবনের গ্লাস ভাঙা ছাড়াও ভেতরে আগুনও ধরিয়ে চিল্লাচিল্লি শুরু করে।’
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য রাত বারো’টায় কেন্দ্রে দ্রুত আসেন যশোরের এনডিসি, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ এম মামুনুর রশিদ।
রাত একটার কিছুক্ষণ আগে কেন্দ্রে পৌঁছান জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান।
আগে থেকেই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গির আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিলাল হোসেনের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সহযোগীতা করেছেন।
ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তারা শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ‘বন্দি’ বিক্ষোভ ও অসন্তোষের কারণ বোঝার চেষ্টা করছেন। কর্মকর্তারা রাকিব, সাব্বির ও শাকিল নামে ‘বন্দি’দের তিন প্রতিনিধিকে ডেকে নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
‘বন্দি’দের তিন প্রতিনিধ জানায়, ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করে, তাদের পেটপুরে খেতে দেওয়া হয় না। দুপুরে হাফ প্লেট ভাত, রাতে এক পিচ রুটি দেওয়া হয়।
এতে তাদের ক্ষুধা নিবারণ হয় না, এমনকি স্বজনরা এসে টাকা-খাবার দিয়ে গেলেও কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ তা ‘বন্দি’দের না দিয়ে আত্মসাৎ করে বলে অভিযোগ তুলেছে এ প্রতিনিধি’রা।
এ প্রতিনিধি’রা খাবারের পরিমাণ বৃদ্ধি ও মান উন্নয়নের দাবি জানায়। ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তারা ‘বন্দি’দের প্রতিনিধি’দের কথা মনোযোগ সহকারে শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
তারা বিক্ষোভ-ভাঙচুররত শিশু ‘বন্দি’দের নিবৃত করার জন্য ওই তিন প্রতিনিধিকে ভেতরে পাঠিয়েছেন।
কোতয়ালী থানার ওসি তাজুল ইসলাম জানান, ‘বন্দি’দের বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।’
এনডিসি এ এম মামুনুর রশিদ সেসময় জানান, ‘পরিবেশ শান্ত করে ‘বন্দি’দের প্রতিনিধিদের বোঝানো হয়েছে, এবার সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা হবে’।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক অসিতকুমার সরকার।
তিনি বলেন, ‘এ‘বন্দি’দের অভিযোগ পুরোপুরি ঠিক না। পুলিশ এসেছে, তারা বিষয়টি দেখছে।’
এর বেশি কিছু বলতে তিনি রাজি হননি সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক অসিতকুমার সরকার।
শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের উপ-পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, ‘আহত বন্দি’কে যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে ওই বন্দির নাম বলতে পারেননি উপ-পরিচালক জাকির। এছাড়া ডিবির একজন এসআই মফিজুল ইসলাম আহত হয়েছেন।
অপ্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীদের (ছেলে) জন্য দেশের দুটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের একটি যশোর শহরতলির পুলেরহাট এলাকায় অবস্থিত। এখানে নিয়মিত বিরতিতেই একের পর এক অঘটন ঘটে।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন এই প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও বন্দি নির্যাতনের অভিযোগে জেলা প্রশাসক তদন্ত কমিটি উদ্ঘাটন করেছিল। তবে সেই তদন্ত কমিটি ফল প্রকাশ্যে আসে নাই।
এমনকি কিছুদিন আগে এই কেন্দ্রে তিনজন ‘বন্দি’কে পিটিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ ওঠে কেন্দ্রের দায়িত্বরতদের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় হওয়া মামলা এখনো চলছে। পুলিশ সে ঘটনায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১২ জনের নামে চার্জশিট দিয়েছে।