প্রভাতি সংবাদ ডেস্ক:
বৈচিত্রময় প্রাণি জগতে কিছু প্রাণি আছে ব্যতিক্রম। এরা দেখতে যেমন অদ্ভুত এবং আচরণগতভাবেও ভিন্ন। প্রতিটি প্রাণিই আকর্ষণীয়, কিন্তু কিছু প্রাণি অন্যদের চেয়ে বেশি আকর্ষণীয়। কিছু প্রাণির বৈশিষ্ট্যের সংমিশ্রণ থেকে মুগ্ধতা আসতে পারে। বিশ্বের নয়টি আর্কষণীয় প্রাণির বৈশিষ্ট্যি সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক-
হাইড্রা
হাইড্রা হলো ক্ষুদ্র প্রাণি, যারা মিঠা পানিতে বাস করে। তাদের প্রজনন চক্র খুবই অদ্ভূত। এরা নিজেদের টিস্যুগুলোকে পুনরুত্থিত করতে পারে। হাইড্রা যৌন বা অযৌনভাবে প্রজনন করতে পারে। প্রজননের সময় কুঁড়ি গজানোর মাধ্যমে মাতৃদেহ থেকে নতুন হাইড্রার ক্লোন হয়। তবে যখন খাদ্যের অভাব হয় বা জলবায়ু আতিথেয়তাহীন হয়, তখন এরা যৌনভাবে প্রজনন করে।
একই হাইড্রা ডিম্বাশয়, অন্ডকোষ বা কখনও কখনও উভয়টিই উৎপাদন করে। অন্ডকোষ হলে শুক্রাণু ছেড়ে দেয় যা শেষ পর্যন্ত অন্য হাইড্রার ডিম্বাশয়ে ডিমগুলিকে নিষিক্ত করে। এই নিষিক্ত ডিমগুলো একটি শক্ত আবরণ তৈরি করে এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মৃত্যু হলে এই শক্তিশালী ডিমগুলো জলের নিচে ডুবে যায় এবং অবস্থার উন্নতির জন্য অপেক্ষা করে। তার পরেই ডিম ফুটে হাইড্রা নিম্ফ হয়ে যায়।
কাকাপো
কাকাপো টিয়ার একমাত্র প্রজাতি যারা উড়তে পারেনা। প্রাণিটি শুধুমাত্র নিউজিল্যান্ডে পাওয়া যায়। কাকাপো বড় এবং নিশাচর পাখি যার দৈর্ঘ্য ২৩ থেকে ২৫ ইঞ্চি এবং ওজন ২ থেকে ৯ পাউন্ডের মধ্যে। এটির মুখে চাকতি রয়েছে, যার কারণে দেখতে কিছুটা পেঁচার মতো। এর ডানা এবং লেজ ছোট। তুলতুলে জলপাই সবুজ এবং বাদামী-ধূসর বা কালো রঙের পালকের কারণে এরা সহজইে বনের মাটিতে বানানো বাসার সাথে মিশে যেতে পারে। এরা ১০০ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচতে পারে। বর্তমানে কাকাপো বিপন্ন এবং শুধুমাত্র নিউজিল্যান্ডের কডফিশ এবং অ্যাঙ্কর দ্বীপপুঞ্জে পাওয়া যায়।
প্লাটিপাস
অর্ধেক হাঁসের মত দেখতে বড় আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণি প্লাটিপাস। এরা ডিম দেয় এবং পুরুষদের পিছনের পায়ে বিষাক্ত স্পার্স থাকে যার মাধ্যমে এরা শিকার করে থাকে। মহিলাদের দুটি ডিম্বাশয় থাকলেও শুধুমাত্র বাম পাশেরটি কাজ করে। যখন এদের বাচ্চারা ডিম থেকে বের হয়, তখন তাদের স্তন থেকে দুধ খাওয়ানো হয় না কারণ মা প্লাটিপাসের স্তন নেই। কিন্তু ত্বকের ছিদ্র থেকে তাদের খাওয়ানো হয়।
বাচ্চা প্লাটপাস দাঁত নিয়ে জন্মায় কিন্তু বড় হতে হতে তাদের দাঁত হারিয়ে যায়। প্লাটিপাসরা তাদের খাবার পিষতে হাঁসের মত ঠোঁট ব্যবহার করে। অনেকেই প্লাটিপাসের চর্বিযুক্ত লেজ খাবার হিসেবে নেয়।
হিস্পানিওলান সোলেনোডন
এই প্রাণিটি দখেতে ইঁদুর এবং সজারুর সংমিশ্রণের মতো। হাইতি এবং ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের বন এবং ঝোপঝাড়ে এদের পাওয়া যায়। এরা হিস্পানিওলা দ্বীপের স্থানীয় দুটি স্থল প্রাণির মধ্যে একটি। সোলেনোডনের দেহের দৈর্ঘ্য ১৯ থেকে ২৮ ইঞ্চি এবং লেজ প্রায় ১০ ইঞ্চি লম্বা হতে পারে। ওজন দুই পাউন্ডের চেয়ে কিছুটা কম। এরা সাধারণত জীবাশ্মীয় এবং পোকামাকড়, কৃমি এবং ইঁদুরসহ ছোট প্রাণি শিকার করতে রাতে বের হয়।
স্ত্রী সোলোনোডনের পিঠে দুটি স্তন থাকে। এরা প্রাকৃতিকভাবে বিষাক্ত। সোলেনোডনের নিঃসৃত বিষ কয়েক মিনিটের মধ্যে একটি ইঁদুরকে মেরে ফেলতে পারে। এদের বিষ মানুষকে মারার মতো ক্ষতিকর নয়, তবে সোলেনোডনের কামড় খুব বেদনাদায়ক।
কমোডো ড্রাগন
ইন্দোনেশিয়ান গুইসাপের মতো বৃহৎ এই প্রাণি কি সত্যিই বিষাক্ত? কিছু জীববিজ্ঞানী দাবি করেন যে এদের লালা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এতটাই বিষাক্ত যে একটি কামড় অনিবার্যভাবে শিকারকে সেপ্টিক শকে পাঠায় এবং তাদের মেরেও ফেলে। কমোডো ড্রাগন সাপের মতো তার জিহ্বার নিচে একটি শ্বাস-প্রশ্বাসের নল প্রজেক্ট করে যাতে খাওয়ার সময় শ্বাস নিতে পারে।
আরমাডিলো
আরমিডোলো পূর্বে শুধু দক্ষিণ আমেরিকায় পাওয়া গেলেও এরা ধীরে ধীরে উত্তর-মধ্য আমেরিকা, আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিম এবং উত্তরে নেব্রাস্কায় এবং উত্তর ক্যারোলিনায় বংশ বিস্তার করেছে। এরা এদের গায়ের বর্মের জন্য বিখ্যাত যা স্কুট দিয়ে আবৃত হাড়ের প্লেট দিয়ে তৈরি। কিছু প্রজাতির আরমাডিলো বিপদের সম্মুখীন হলে বলের মতো গড়িয়ে যায় আত্মরক্ষা করতে।
আরমাডিলোর প্রজনন কৌশলটিও আকর্ষণীয়। যদিও এদের মাত্র একটি ডিম্বাণু নিষিক্ত হয়, তবে তা সাথে সাথইে জরায়ুতে রোপণ করে না। আরমাডিলো এমন কয়েকটি প্রাণির মধ্যে একটি যা কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হতে পারে এবং এরা ট্রাইপানোসোমা ক্রুজি পরজীবী রোগের আধার। এই পরজীবী ভয়ঙ্কর চাগাস রোগের কারণ।
স্লথ
দক্ষিণ এবং মধ্য আমেরিকান স্তন্যপায়ী প্রাণি ম্লথ। এরা প্রিয় গাছে উল্টো হয়ে ঝুলে থাকা ছাড়া আর কিছুই করতে পছন্দ করে না। এরা খায়, ঘুমায়, সঙ্গি বানায়,বাচ্চা জন্ম দেয়, এমনকি গাছেই উল্টো হয়ে ঝুলে থেকে মারা যায়।
স্লথরা কিছুটা ঠান্ডা রক্তের হয়, কারণ তাদের শরীরের তাপমাত্রা চারপাশের পরিবেশের ওপর নির্ভর করে। একটি স্বাভাবিক, সুস্থ স্লথের তাপমাত্রা ৭৭ থেকে ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মধ্যে। যদি শরীরের তাপমাত্রা ৬৮ ডিগ্রি পর্যন্ত নেমে যায়, তাহলে প্রাণিটি টর্পোরে বা ইতিমধ্যে যে অবস্থায় আছে তার চেয়ে গভীর টর্পোরে চলে যায়৷
স্লথ সম্পর্কে অন্যান্য আকর্ষণীয় তথ্য:
ম্লথরা হাঁটতে পারে না। তিন আঙ্গুলের স্লথের বাহু তার পায়ের চেয়ে ৫০ শতাংশ লম্বা। দীর্ঘ বাহুর কারণে এরা চমৎকারভাবে দক্ষ সাঁতারুর মতো সাঁতার কাটতে পারে। এরা পানির নিচে ৪০ মিনিটের জন্য শ্বাস ধরে রাখতে পারে।
বেশিরভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণির বিপরীতে এদের ঘাড়ে সবসময় সাতটি কশেরুকা থাকে না। তবে প্রজাতির ওপর নির্ভর করে এই সংখ্যা কম বেশি হতে পারে।
স্পার্ম হোয়েল
স্মার্ম হোয়েল সবচেয়ে আকর্ষণীয় সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণিগুলোর মধ্যে একটি। মাথার জন্য বিখ্যাত এই বিশাল এবং বুদ্ধিমান প্রাণীটি এখনও বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। যদিও এদের বিশ্বের বেশিরভাগ মহাসাগরে পাওয়া যায়।
স্পার্ম হোয়েল সবচেয়ে বড় দাঁতযুক্ত মাংসাশী, সবচেয়ে বড় মস্তিষ্কের অধিকারী এবং পৃথিবীতে সবচেয়ে জোরে শব্দ করতে পারা প্রাণি। এদের মধ্যে ভোকালাইজেশনের জটিল এক ভান্ডার রয়েছে যা অন্যান্য স্পার্ম হোয়েলের সাথে যোগাযোগ করতে এবং শিকার খুঁজে পেতে সাহায্য করে। এই পদ্ধতি এরা শিখে নেয়, প্রকৃতি প্রদত্ত নয়।
যেহেতু এই তিমি অন্য যেকোনো সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণির চেয়ে গভীরে ডুব দেয়, তাই এটি সমুদ্রের আলোহীন গভীরতায় শিকার করতে ইকোলোকেশন ব্যবহার করে।
স্পার্ম হোয়েলের অন্যতম প্রিয় খাবার দানবাকার স্কুইডের সন্ধানে ছয় হাজার ৬০০ ফুট গভীরে পর্যন্ত ডুব দিতে পারে। এরা জলের পৃষ্ঠের ঠিক নিচে মাথা রেখে উল্লম্বভাবে কেন ঘুমায় তা সঠিকভাবে কেউই জানে না।
হাইরাক্স
হাইরাক্স বা ‘ড্যাসি’ বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রাণি। হাইরাক্স দেখতে খরগোশ এবং গিনিপিগের সংকর বলে মনে হয়। পূর্ব এবং দক্ষিণ আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে এদের পাওয়া যায়। এদের নিকটতম প্রজাতি গোত্র হিসেবে হাতিকে মনে করা হয়। এদের দাঁত গজায় যা সারাজীবন বাড়তে থাকে এবং এর গালের মধ্যে থাকা দাঁতগুলি দেখতে গন্ডারের দাঁতের মতো।