এ বছরের এপ্রিলেই পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ বেলুচিস্তানে চীনা রাষ্ট্রদূত নং রংকে লক্ষ্য করে হামলা করে বেলুচ স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী। যদিও সে হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যান রাষ্ট্রদূত। উত্তরাঞ্চল জুড়ে সক্রিয় রয়েছে সশস্ত্র বেশ কিছু স্বাধীনতাকামী সংগঠন। তারা প্রায়সই পাকিস্তানী বাহিনীর উপর হামলা করে। এ হামলার প্রেক্ষিতে পাকিস্তানী বাহিনী প্রচন্ড নিপীড়নও করে এ অঞ্চলে সাধারণ বাসিন্দাদের প্রতি।
প্রভাতী বার্তাকক্ষ:
পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে বোমা হামলায় চীনের ছয় নাগরিকসহ প্রাণ গেছে আটজন। নিহতদের মধ্যে একজন পাকিস্তানি সেনাও আছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম গুলো।
এ ঘটনায় এখনও নিখোঁজ আছেন এক চীনা প্রকৌশলী ও আরেক পাকিস্তানি সেনা, ফলে বাড়তে পারে মৃতের সংখ্যা, আহত হয়েছেন আরও অনেকে।
বুধবার খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের আপার কোহিস্তানে এ বোমা বিস্ফোরণ ঘটে, তবে কী কারণে এ বোমা বিস্ফোরণ তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে বাসের ভেতরে অথবা রাস্তার ধারে বিস্ফোরক পুঁতে রাখা হয়েছিল বলে ধারণা করছে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স তার প্রতিবেদনে বলছে, চীনা নাগরিকদের বহনকারী একটি বাসে হামলার লক্ষ্যেই এ বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। এ বোমা হামলার সময় ৩০ জন চীনা প্রকৌশলী ছিলেন বাসটিতে।
‘দাসু বাঁধ এলাকায় এ হামলায় চীনা প্রকৌশলীদের সঙ্গে থাকা পাকিস্তানি আধা-সামরিক নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও নিহত হয়েছেন।বিস্ফোরণের পরপরই বাসটি একটি খাদে ছিটকে পড়ে যায়, তারপর থেকে এ ঘটনায় উদ্ধার অভিযান চলছে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় উদ্ধার অভিযানে সহযোগিতা করা হচ্ছে। উদ্ধারকৃতদের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজধানী ইসলামাবাদের হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে।’
– বলেছেন হাজারা অঞ্চলের দ্বায়িত্বরত পাকিস্তানী কর্মকর্তা
বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল দাসু পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প, যা চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের (সিপিইসি) অংশ। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড কর্মসূচির আওতাভুক্ত সিপিইসি প্রকল্পে সাড়ে ছয় হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে চীনের কমিউনিস্ট সরকার।
পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় গাদার সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে চীনের পশ্চিমাঞ্চল সংযুক্ত হবে এ প্রকল্পের মাধ্যমে কিন্তু স্থানীয় বেলুচ সহ একাধিক স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী এ পদক্ষেপকে নিজেদের অস্তিত্বের জন্যে সংকট বলে মনে করছে।
দাসু পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কয়েক বছর ধরে অঞ্চলটিতে চীনা প্রকৌশলী’রা কাজ করছে। তাদের সঙ্গে এ প্রকল্পে পাকিস্তানি নির্মাণ শ্রমিকরাও কাজ করছে।
বেলুচিস্তানে হামলার শিকার হয়েছিল চীনা রাষ্ট্রদূত
এ বছরের এপ্রিলেই পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ বেলুচিস্তানে চীনা রাষ্ট্রদূত নং রংকে লক্ষ্য করে হামলা করে বেলুচ স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী। যদিও সে হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যান রাষ্ট্রদূত।
গ্যাস, তেলসহ নানা খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদসমৃদ্ধ পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চল, কিন্তু দেশটির অন্যতম দরিদ্র অঞ্চলও এটি। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে অঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে কারণ তারা নিজেদেরকে পরাধীন মনে করে। উত্তরাঞ্চল জুড়ে সক্রিয় রয়েছে সশস্ত্র বেশ কিছু স্বাধীনতাকামী সংগঠন।
তারা প্রায়সই পাকিস্তানী বাহিনীর উপর হামলা করে। এ হামলার প্রেক্ষিতে পাকিস্তানী বাহিনী প্রচন্ড নিপীড়নও করে এ অঞ্চলে সাধারণ বাসিন্দাদের প্রতি।
বিশেষ করে সম্প্রতি সিপিইসির মাধ্যমে অঞ্চলটিতে চীনের বিনিয়োগ ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে বিদেশী সৈন্য’দের নিজ অঞ্চলে দেখে ক্ষোভ আরও বেড়েছে।
এতে স্থানীয়রা কোনোভাবে উপকৃত হচ্ছেন না ক্ষোভ বাড়ছে আর সেটাকে কাজে লাগাচ্ছে স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী। সিপিইসির নানাবিধ প্রকল্পে নিয়োগ পাওয়া বেশির ভাগ মানুষই পাকিস্তানের পাঞ্জাব অঞ্চলের কিংবা চীনা নাগরিক।।
২০১৯ সালের হামলায় ৮ জনকে হত্যা করে বেলুচ স্বাধীনতাকামী’রা
২০১৯ সালে সিপিইসির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কর্মরত আটজনকে হত্যা করে বেলুচ স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী। বেলুচিস্তানের বিলাসবহুল হোটেলে এ হামলা চালায় এ স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী।
আরব সাগরে চীনের সহজ প্রবেশ নিশ্চিতে বেলুচিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে নির্মিত গভীর সমুদ্রবন্দরের শহর গদারে চীন তার প্রকল্প এড়িয়া স্থাপন করেছে।
তারও আগে ২০২০ সালের জুনে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো’র বিনিয়োগ থাকা পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জেও হামলা চালিয়েছিল বেলুচ স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী।