মিতু হত্যা মামলায় বাবুল আক্তারের সঙ্গে ইউএনএইচসিআরের ওই নারীকর্মীর পরকীয়া ছিল বলে অভিযোগ করেছেন মামলার বাদী ও মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চট্টগ্রামে আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার আসামি সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের কথিত প্রেমিকা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ খবর পাওয়া গেছে।
মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) জানায়, মামলার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ বেশি কিছু তথ্য ও নথি পাওয়া গেছে ।
মঙ্গলবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) পক্ষ থেকে এসব তথ্যের খোঁজ পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, ‘তাদের কাছ থেকে আমরা এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি, যা মামলার তদন্তকাজকে সামনে এগিয়ে নেবে। তবে ওই নারী বর্তমানে কোথায় আছেন, সে ব্যাপারে আমাদেরকে কোনো তথ্য দিতে পারেনি সংস্থাটি।’
২৩ মে ওই নারী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউএনএইচসিআরকে চিঠি দিয়েছিল পিবিআই। জুলাই মাসের শেষ দিকে ওই চিঠির উত্তর পায় সংস্থাটি।
সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘মামলার এজাহারে ওই নারীর ব্যাপারে কিছু তথ্য রয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে ওই নারীর সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি। এ জন্য ইউএনএইচসিআরের বাংলাদেশ প্রধান বরাবর রোববার একটি চিঠি দিয়েছি আমরা। সেই চিঠিতে তার বর্তমান অবস্থানসহ একাধিক বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে।’
এর আগে বাবুলকে দেয়া তার কথিত প্রেমিকার দেওয়া দুইটি বইয়ের ফরেনসিক পরীক্ষার কথা জানায় পিবিআই। তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, বই ল্যাবে পাঠানোর জন্য খুব দ্রুতই আদালতে আবেদন করবো আমরা।
তিনি জানান, ‘বই দুটি জব্দ করা হয়েছে, বইগুলোতে কিছু লিখিত বিষয় আছে। যেগুলো পরকীয়ার সম্পর্কের বিষয়ে ইঙ্গিত (নির্দেশ) করছে। মামলার তদন্তের স্বার্থে বই দুটির ফরেনসিক পরীক্ষা করা হবে, এ জন্য আদালতের অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে। তাই, শিগগিরই পরীক্ষার জন্য আমরা আদালতে আবেদন জানাবো।’
মিতু হত্যা মামলায় বাবুল আক্তারের সঙ্গে ইউএনএইচসিআরের ওই নারীকর্মীর পরকীয়া ছিল বলে অভিযোগ করেছেন মামলার বাদী ও মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থাকাকালে ২০১৩ সালে ইউএনএইচসিআরের এক কর্মীর সঙ্গে অবৈধ পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন বাবুল। এ নিয়ে মিতুর সঙ্গে দাম্পত্য কলহ চলছিলো আর এসময় মিতুকে বাবুল শারীরিক ও মানসিকভাবেও নির্যাতন করে ।
২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত সুদানে জাতিসংঘের শান্তিমিশনে ছিলেন বাবুল। এ সময় বাবুলের মোবাইল ফোনটি চট্টগ্রামের বাসায় ছিল। ওই মোবাইল ফোনে মোট ২৯ বার ক্ষুদেবার্তা দেন বাবুলের কথিত প্রেমিকা।
‘05/10/13, Coxs Bazar, Bangladesh. Hope the memory of me offering you this personal gist. shall eternalize our wonderful bond, love you…
First Meet: 11 Sep, 2013, First Beach walk 8th Oct 2013, G Birth day 10 October, First kissed 05 October 2013, Temple Ramu Prayed together, 13 October 2013, Ramu Rubber Garden Chakaria night beach walk.’- বাবুলকে প্রেমিকার উপহার দেয়া বইয়ে লেখা শুভেচ্ছাবাণী
এজাহারে বলা হয়েছে, এই পরকীয়া প্রেমের কারণে বাবুল-মিতুর দাম্পত্য অশান্তি চরমে পৌঁছে যায়। মিতু বাবুলের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করার ফলে তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনও শুরু হয়েছিলো।
বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে স্ত্রী মিতুকে হত্যার অভিযোগে বাবুলের বিরুদ্ধে ১২ মে পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের করা ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সেদিনই আদালতে তোলা হয় বাবুল আক্তারকে । সেদিন বাবুলকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন বিচারক।
২০১৬ সালের ৫ জুন ভোরে ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিতে বের হওয়ার পর চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় বাবুলের স্ত্রী মিতুকে।
ঘটনার পর সেই সময়ে তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, সম্ভবত তার জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য তার স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
তবে বাবুলের শ্বশুর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন ও শাশুড়ি সাহেদা মোশাররফ শুরু থেকেই এই হত্যার জন্য বাবুলকে দায়ী করে আসছিলেন।
শুরু থেকে চট্টগ্রাম পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) মামলাটির তদন্ত করছিলো। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে আদালত মামলাটির তদন্তের ভার পিবিআইকে হস্তান্তর করে।
