৭৬ বছর বয়সী বেগম খালেদা জিয়া অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাচল করতে পারেন না। তার চোখ-হাঁটুতে সমস্যা রয়েছে। তিনি উচ্চ রক্তচাপ ও আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন। এসব রোগের মধ্যে টিকা নেওয়ার জন্য শংসয় সৃষ্টি হয়। টিকা গ্রহণের জন্য তার শরীর কতটুকু উপযুক্ত সেটা পর্যালোচনা করে চিকিৎসকরা।
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
করোনা ভাইরাসের টিকা নিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।অনেক পর্যবেক্ষন ও পর্যালোচনা শেষে চিকিৎসকের পরামর্শে টিকা গ্রহণ করেন ৭৬ বছর বয়সী বেগম খালেদা জিয়া।
সোমবার (১৯ জুলাই) বিকালে রাজধানীর মহাখালীর ন্যাশনাল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালে আমেরিকার তৈরি মডার্নার টিকা টিকা গ্রহণ করেন তিনি।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইসচেয়ারম্যান ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, এই হাসপাতালে মডার্নার টিকা দেওয়া হচ্ছে। এজন্য ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) মডার্নার টিকাই নিয়েছেন।
টিকা নেয়ার জন্য বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে হাসপাতাল এলাকায় পৌঁছান খালেদা জিয়া। সরেজমিনে দেখা যায়, সেখানে উপস্থিত নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের ভিড় অনেক বেশি ছিল। নিরাপত্তাজনিত কারণে খালেদা জিয়াকে গাড়ি থেকে নামানো হয়নি। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে গাড়িতে রেখেই করোনার টিকা দেন।
এর আগে গত ১২ জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘সুরক্ষা’ ওয়েবসাইটে টিকার জন্য নিবন্ধন করেন খালেদা জিয়া। গতকাল রোববার (১৮ জুলাই) তিনি টিকা গ্রহনের এসএমএস পান।
ডা. জাহিদ হোসেন জানান, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নাগরিক হিসেবে সাধারণ মানুষের কাতারে এসে খালেদা জিয়া করোনার টিকা নিয়েছেন। টিকা নেয়ার সময় যাতে জমায়েত জমায়েত কম হয় এজন্য আজ তিনি কিছুক্ষণ দেরি করে টিকা নিতে এসেছেন। অন্য সময় আসলে মানুষের ভিড় আরো বেশি হতো।
তিনি বলেন, ‘অন্যদের মতো ম্যাডাম জিয়া মডার্নার টিকা নিয়েছেন। উনার কোনো আলাদা ইচ্ছা নেই। আপনাদের (সাংবাদিকদের) মাধ্যমে দেশবাসীকে তিনি ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।’
চিকিৎসক ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে,৭৬ বছর বয়সী বেগম খালেদা জিয়া অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাচল করতে পারেন না। তার চোখ-হাঁটুতে সমস্যা রয়েছে। তিনি উচ্চ রক্তচাপ ও আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন। এসব রোগের মধ্যে টিকা নেওয়ার জন্য শংসয় সৃষ্টি হয়। টিকা গ্রহণের জন্য তার শরীর কতটুকু উপযুক্ত সেটা পর্যালোচনা করে চিকিৎসকরা।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থায় প্রসঙ্গে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘করোনা পরবর্তী জটিলতা নিয়ে ম্যাডাম রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আল্লাহর রহমতে তিনি বেশ খানিকটা সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে এসেছেন। কিন্তু আগে থেকেই তার আর্থরাইটিস, ডায়াবেটিসসহ যেসব জটিলতা ছিল, সেইগুলো কমেনি। তার লিভার, হার্ট, কিডনির উন্নত চিকিৎসার জন্য এভার কেয়ার হাসপাতাল কতৃপক্ষ ও মেডিকেল বোর্ড তাকে বিদেশে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিতে আবেদন করেছে তার পরিবার।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনার দেখেছেন, ২০১৮ সালে খালেদা জিয়া পায়ে হেঁটে কারাগারে গেছেন। আর বের হয়েছেন হুইল চেয়ারে করে। এখন তিনি হুইল চেয়ার চলাফেরা করেন, বুঝতেই পারছেন তিনি কেমন আছেন।’
উল্লেখ্য, এর আগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন খালেদা জিয়া। চিকিৎসার জন্য তাকে গত ২৭ এপ্রিল রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রায় দুইমাস চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ্য হয়ে গত ১৯ জুন রাতে গুলশানের বাসভবনে ফেরেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত। এরপর প্রথমে তাকে রাজধানীর পুরান ঢাকার বিশেষ কারাগারে রাখা হয়।
পরে কারাবন্দি অবস্থায় বিএসএমইউ’র হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন তিনি। এরপর দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে সাজা মওকুফের আবেদন করে খালেদা জিয়ার পরিবার। আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার নির্বাহী আদেশে তার ৬ মাসের সাজা স্থগিত করে মুক্তি দেয়। এরপর আরও দুইবার তার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়।
খালেদা জিয়া টিকা নেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. জাহিদ হোসেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার ও শায়রুল কবির খান।