Contents
- 1 খুলনার কুখ্যাত খুনি এরশাদ শিকদারের একসময়ের সহযোগী সাহাদৎ হোসেন মামুন। পেশা বদলে এখন হয়েছেন এই দালাল চক্রের মূলহোতা। রোগী ভাগিয়ে আনতে দালালদের ঈদ উপলক্ষে ‘বিশেষ উপহার’ কোরবানির গরু দিচ্ছেন তিনি। মানুষের জীবন নিয়ে বানিজ্য করাই এই মামুনের কাজ।
- 2 র্যাবের অভিযানে চার প্রতারক আটক
- 3 ঈদ উপলক্ষে বিশেষ উপহার
- 4 প্রতারণার মাধ্যমে ২৭ বিয়ে
- 5 এরশাদ শিকদারের অন্যতম সহযোগী
খুলনার কুখ্যাত খুনি এরশাদ শিকদারের একসময়ের সহযোগী সাহাদৎ হোসেন মামুন। পেশা বদলে এখন হয়েছেন এই দালাল চক্রের মূলহোতা। রোগী ভাগিয়ে আনতে দালালদের ঈদ উপলক্ষে ‘বিশেষ উপহার’ কোরবানির গরু দিচ্ছেন তিনি। মানুষের জীবন নিয়ে বানিজ্য করাই এই মামুনের কাজ।
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
সরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি করতে এনে দালালের খপ্পরে পড়ে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় রোগী। বাংলাদেশে এই চিত্র খুব বেশি অচেনা নয়।
সম্প্রতি র্যাব-২ এর হাতে ধরা পড়েছে এই দালাল চক্রের মূলহোতা সাহাদৎ হোসেন মামুন। ঈদ উপলক্ষে বিশেষ বিশেষ দালাল ও অ্যাম্বুলেন্সচালকদের তিনি কুরবানির গরু উপহার দিচ্ছেন। তিনি কুখ্যাত খুনি ফাঁসির দন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামী এরশাদ শিকদারের এক সময়ের সহযোগী।
রোগীর জীবন বাঁচাতে তার আত্মীয়রা কোন চেষ্টার ত্রুটি রাখেন না। তাদের এই ব্যাকুলতার সুযোগ নেই দালাল চক্র। ভাল চিকিৎসার প্রলোভনে এই অসহায় মানুশগুলো দালালের খপ্পরে পড়েন।
সহজ-সরল অসহায় মানুষের এ দুর্বলতাকে পুঁজি করেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে দালালচক্র। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে আসা রোগীদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়াই তাদের কাজ। দিন গড়ানোর সাথে সাথেই এসব প্রতারকের সংখ্যা বাড়ছে। শুধু রোগীরাই নয়, মূলহোতা চক্র রোগী ভাগিয়ে আনার জন্য এইসব দালালদের এখন বিশেষ অফার দিচ্ছেন।
খুলনার কুখ্যাত খুনি এরশাদ শিকদারের একসময়ের সহযোগী সাহাদৎ হোসেন মামুন। পেশা বদলে এখন হয়েছেন এই দালাল চক্রের মূলহোতা। রোগী ভাগিয়ে আনতে দালালদের ঈদ উপলক্ষে ‘বিশেষ উপহার’ কোরবানির গরু দিচ্ছেন তিনি। মানুষের জীবন নিয়ে বানিজ্য করাই এই মামুনের কাজ।
আজ বুধবার (১৪ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যা ব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে র্যা ব-২।অধিনায়ক (সিও) খন্দকার সাইফুল আলম জানালেন এসব তথ্য।
তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এদের দালালচক্র আছে। তাদের সাথে যোগাযোগ করে রোগী ভর্তি করানো হতো রাজধানীর শ্যামলীর ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার হাসপাতালে। অ্যাম্বুলেন্সচালক ও হাসপাতালের দালালদের এই কাজের জন্য নির্দিষ্ট কমিশন দেয়া হত।
তারা রোগীকে প্রথমে বলতেন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা ভাল না। এরপর উন্নত চিকিৎসার প্রলোভন দিয়ে শ্যামলীর ওই হাসপাতালে ভর্তি করানো হত। এরপরেই শুরু হতো প্রতারণার প্রথম ধাপ। দালালদের কমিশনের টাকা দিতে রোগীকে দেয়া হয় অপ্রয়োজনীয় টেস্ট। এভাবে নানা খাতে রোগীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হতো ।
গতকাল মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল থেকে ৪ প্রতারককে আটক করা হয়।
র্যাবের অভিযানে চার প্রতারক আটক
পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই প্রতারকদের আটক করা হয়। এ সময় মূলহোতা সাহাদতের কাছ থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার জাল টাকা ও ৫৫০ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। প্রতারকরা হলেন- শ্যামলীর ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার হাসপাতালের তিনজন স্টাফ, মহিন উদ্দিন মামুন (৩৬), রহমত উল্লাহ্ (৩২) ও আকরাম হোসেন (৫২)।
র্যাব-২ এর সিও খন্দকার সাইফুল আলম বলেন, মহামারি করোনাকালেও দালালচক্র সক্রিয়। তারা রাজধানীর কিছু হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আতাত করে সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে এনে ভর্তি করছেন। এসময় মোটা অংকের কমিশন পেয়ে রোগীদের হেনস্থা করা হচ্ছে। রোগীদের হয়রানির কারণ হিসেবে বিভিন্ন অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটও দায়ী। অ্যাম্বুলেন্সচালকরা অনেক ক্ষেত্রে রোগী পরিবহনে উচ্চ ভাড়া দিতে বাধ্য করেন।
এমন পরিস্থিতিতে র্যাব-২ এর ছায়া তদন্তে দালালচক্রের হোতা সাহাদৎ হোসেন ওরফে মামুনের নাম উঠে আসে।তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ও তদন্তে জানা যায়- উন্নত চিকিৎসার নামে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল থেকে দালালরা রোগী এনে আইসিইউ’তে ভর্তি করে। পরে বিভিন্ন চেকআপের নামে অপ্রয়োজনীয় টেস্টের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়।
ঈদ উপলক্ষে বিশেষ উপহার
চক্রটির কৌশল সম্পর্কে র্যাব-২ এর সিও বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ আছে চক্রটির। বেসরকারি হাসপাতালে রোগী পাঠানোর জন্য তারা নির্দিষ্ট কমিশন নিয়ে থাকে। এছাড়া জেলা শহরের অ্যাম্বুলেন্সচালক এবং হাসপাতালের দালালরা মোটা অংকের কমিশন বিনিময়ে রোগী পাঠায়।
দালাল ও অ্যাম্বুলেন্সচালকদের লোভনীয় কমিশন দিতেন সাহাদৎ। একারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তারা রোগী ভাগিয়ে আনতেন তারা। কমিশনের বাইরেও বিভিন্ন উৎসবে বোনাস হিসেবে দিতেন বিশেষ অফার। বিশেষ অফারের আওতায় ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিশেষ বিশেষ দালাল ও অ্যাম্বুলেন্সচালককে কোরবানির গরু উপহার দেন তিনি।
প্রতারণার মাধ্যমে ২৭ বিয়ে
সাহাদতের সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে খন্দকার সাইফুল আলম বলেন, সাহাদৎ হোসেন মামুন প্রতারণার উদ্দেশ্যে এখন পর্যন্ত ২৭টি বিয়ে করেছেন। বিয়ের পর তাদের জিম্মি করে মূলত যৌতুক ও টাকা আদায় করা হত।
স্ত্রী ও আত্মীয়দের দিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাতেন সাহাদত। তার প্রতারণার ফাঁদে পা দেয়া অধিকাংশই হাসপাতালের নার্সিং পেশার সঙ্গে জড়িত নারী। এছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসা রোগী ও রোগীর আত্মীয়দেরও বিয়ে করেছেন তিনি।
এরশাদ শিকদারের অন্যতম সহযোগী
প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, প্রতারক সাহাদৎ হোসেন মামুন খুলনা অঞ্চলের বহুল আলোচিত ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামি এরশাদ শিকদারের অন্যতম সহযোগী ছিলেন। এরশাদ শিকদারের ফাঁসির পর মামুন পেশা বদলে দালালি শুরু করেন।
ঢাকায় এসে তিনি হাসপাতাল চক্রের দালালিতে নিজের শক্ত অবস্থান গড়ে তোলেন। এছাড়া মাদক ও জাল টাকার ব্যবসাও আছে তার। তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা রয়েছে। আটকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন র্যাব-২ এর অধিনায়ক (সিও) খন্দকার সাইফুল আলম।
রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ছড়িয়ে থাকা এইসব দালালচক্রদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি। অলরেডি বেশসংখ্যক দালালচক্র চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের ধরার জন্য অভিযান চলমান থাকবে বলে জানান তিনি।