প্রভাতি সংবাদ ডেস্ক:
ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্র-ন্যাটোসহ বেশিরভাগ পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে ধারাবাহিক বৈরিতায় থাকা দুই দেশ রাশিয়া ও চীন জোট বাঁধছে। সামরিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে পরস্পরকে সহযোগিতা করতে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
বুধবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন দুই দেশের দুই শীর্ষ নেতা। বৈঠক শেষে এক যৌথ বিবৃতিতে পুতিন বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার একটি নতুন মডেল তৈরি হয়েছে। এই মডেলের ভিত্তি হলো- আমরা কেউই অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তÍক্ষেপ করব না, পরস্পরের স্বার্থের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকব এবং চিরস্থায়ী শান্তি ও ভাল প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক স্থাপনের জন্য যেসব আদান-প্রদান প্রয়োজন, তার সবই আমাদের হতে হবে।’
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, ‘চীন তার মৌলিক জাতীয় স্বার্থে কখনো ছাড় দেয় না এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট চীনের এই অবস্থানকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন জানিয়েছেন। যারা আমাদের দুই দেশের মধ্যে কাঁটা বিছিয়ে রাখতে চায়, তাদেরকে তীব্র ভর্ৎসনাও করেছেন তিনি।’
‘আমি পারস্পরিক সহযোগিতার এই ঐক্যকে স্বাগত জানাচ্ছি।’
সম্প্রতি ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক তিক্ততা চরমে পৌছেঁছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর। রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সেনা মোতায়েন নিয়ে শুরু এই তিক্ততার।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইতোমধ্যে হুমকি দিয়েছেন, ইউক্রেনে রাশিয়া যদি কোনো প্রকার হামলা বা আগ্রাসন চালায়, তাহলে দেশটির ওপর যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে- সেগুলো খুবই যন্ত্রণাদায়ক হবে রাশিয়ার জন্য। একই হুমকি দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটো।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের দফতর ক্রেমলিনের কর্মকর্তারা অবশ্য বলেছেন, ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর কোনো পরিকল্পনা রাশিয়ার নেই এবং পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াভীতিতে ভোগার কারণে এসব হুমকি-ধামকি দিচ্ছে।
বুধবার সকালের দিকে মস্কোতে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের পুতিন-জিনপিংয়ের আসন্ন বৈঠক সম্পর্কে নিশ্চিত করেছিলেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ।
সংবাদ সম্মেলনে পেসকভ বলেন, ‘সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে ইউরোপ মহাদেশের গতিবিধি খুবই উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। পাশাপাশি আমরা দেখছি- যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো যথেষ্ট আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে রাশিয়া সম্পর্কে মতামত দিচ্ছে।’
‘এই পরিস্থিতিতে চীনসহ অন্যান্য মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবেই আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।’
এদিকে চীনের সঙ্গে চরম কূটনৈতিক তিক্ততা চলছে যুক্তরাষ্ট্রের। জিনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলিমদের নিপীড়ণ, হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থীদের সঙ্গে চীনের বিরোধ এবং তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব দিন দিন বেড়েই চলছে যুক্তরাষ্ট্রের।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদক ও সংবাদ বিশ্লেষক ক্যাটরিনা ইউ জানিয়েছেন, রাশিয়া ও চীনের সাম্প্রতিক এই ঐক্য দুই দেশের মধ্যকার দৃঢ় আস্থার একটি নিদর্শন।
তিনি আরও বলেছেন, সামনের দিনে এই ঐক্য পশ্চিমা শক্তিগুলোর জন্য বড় মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠতে পারে।