যশোরের জেলা প্রশাসন কেনাবেচার জন্যে অনলাইন সাইট যশোর হাট.কম চালু করেছে।অনলাইন কেনাবেঁচায় লোকসান দেখছে বিক্রেতা’রা
যশোর ব্যুরো
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দেওয়া চলমান শাটডাউন ঈদুল আযহা উপলক্ষে শিথিলের দেশব্যাপী পশুর হাট বসানোর অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু করোনা’র হটজোন হিসেবে বিবেচিত যশোরে বসছে না পশুর হাট।
যশোরের জেলা প্রশাসন কেনাবেচার জন্যে অনলাইন সাইট যশোর হাট.কম চালু করেছে।
অন্যদিকে অনলাইনের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি ও সকল সরকারি বিধি-নিষেধ মেনেই সারা দেশে পশুর হাট বসাবে হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
স্থানীয় সরকার বিভাগ আয়োজিত ঈদুল আজহায় পশুরহাট ব্যবস্থাপনা নিয়ে আন্তমন্ত্রণালয় কমিটির সভাপতির বক্তব্যে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম কথা জানান।
‘মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ঈদুল আজহার সঙ্গে মানুষের আবেগ-অনুভূতি জড়িত। গত বছরও করোনা মহামারির মধ্যে ব্যবসা ও অন্যান্য কারণে সরকার থেকে পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, এ বছর করোনার প্রাদুর্ভাব বেশি থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
-স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম
তিনি বলেন, ‘পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের একমুখী চলাচল থাকতে হবে, সেজন্য প্রবেশ ও বহির পথ আলাদা হবে। পাশাপাশি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।’
পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা প্রত্যেকের জন্য তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র এবং হাত ধোয়ায় পর্যাপ্ত বেসিন, পানি এবং জীবাণুনাশক সাবান রাখার নির্দেশনা দেন মন্ত্রী।
এ ছাড়া পশু কোরবানির ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সকল বর্জ্য অপসারণ কিভাবে করা হবে সেটার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী।
একইসাথে অনলাইনে পশু কেনাবেচায় সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘অনলাইনের মাধ্যমে পশু কেনাবেচার জন্য সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সাথে সশরীরে পশুর হাট যেন যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচালনা করা হয়, সে জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে- এমন স্থানে পশুর হাট বসানো যাবে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এ নির্দেশ অমান্যকরাীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘পশু ক্রয়-বিক্রয়ের অনলাইন পদ্ধতির বিষয়ে ইতোমধ্যে জনগণকে সচেতন করার জন্য টিভিতে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে। পশু ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবস্থাপনা, কোরবানি এবং বর্জ্য অপসারণের বিষয়েও স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে গাইডলাইন প্রণয়ন করা হয়েছে। গাইডলাইন যথাযথ অনুসরণ করে এই কাজগুলো নির্বিঘ্নে করা সম্ভব হবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ‘সারা দেশে সশরীরে পশুর হাটগুলোতে সার্বিক বিষয় তদারকির জন্য জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। কেননা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বার, পৌরসভার মেয়র, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাধারণ মানুষের নিবিড় সম্পর্ক এবং সার্বক্ষণিক যোগাযোগ থাকে।’
এসব কারণে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সরকারি নির্দেশনা সঠিকভাবে পালন করার নির্দেশনা দিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী।
গত বছরও করোনা মহামারীর মাঝেই পশুর হাট বসানো হয়েছিল ও পশুর হাটে পশু ক্রয়-বিক্রয় ছাড়া এখনও অনলাইন যুৎসই বিকল্প হয়ে উঠেনি বলে মন্ত্রব্য করেছেন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
কোরবানি যতটা সম্ভব নির্বিঘ্নে করা যায়, সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে সব কার্যক্রম পরিচালনা করার পরিকল্পনার তথা সভায় জানান তাজুল ইসলাম।
ভার্চুয়াল সভায় সব সিটি করপোরেশনের মেয়র, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়েয় বিভিন্ন বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন।
যশোরে হাঁট নয়, কেনাবেঁচা অনলাইনে
করোনার কারণে এবারও যশোরে অনলাইনে কোরবানীর পশু বিক্রি শুরু হয়েছে। যশোর জেলা প্রশাসন এই উদ্যোগ নিয়েছে। সোমবার যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কথা জানান জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ বিশ্বব্যাপী মানুষের সামাজিক ও স্বাভাবিক জীবনে বিশাল প্রভাব ফেলেছে। বর্তমানে যশোরসহ সারাদেশে মানুষের সুরক্ষার জন্য চলাচল ও সার্বিক কার্যাবলিতে বিশেষ বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
সার্বিক পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের নিজেদের সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যবিধি মানা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে যশোরের অনলাইন হাট থেকে অনেক গরু বিক্রিও হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, একটি বৈরী পরিস্থিতিতে ইদ-উল-আযহা সমাগত। বিগত এক বছর ধরে ক্ষুদ্র-মাঝারি বা বৃহৎ পরিসরে খামারীগণ ইদের হাটে বিক্রির উদ্দেশ্যে তাদের পশু লালন-পালন করেছেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যমতে যশোর জেলায় প্রায় ১২ হাজার খামারী ৯০ হাজারেরও অধিক পশুকে কোরবানী’তে বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুত করেছেন।
পশুর হাটে উচ্চমাত্রার সংক্রমণ ঝুঁকি থাকায় বিকল্প হিসেবে গতবছরের মতো এ বছরও জেলা প্রশাসন যশোর এর উদ্যোগে অনলাইনে পশু ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা হয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদফতর এবং ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাগণের সহায়তায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে চলছে প্ল্যাটফর্মটি-
যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান
এবছর ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেইজ এর মাধ্যমে অনলাইনে ক্রেতা-বিক্রেতাগণ তাদের পছন্দমত পশু ক্রয় বা বিক্রয় করতে পারবেন। এজন্য যশোর হাট ডট কম নামে একটি ওয়েব সাইট এবং ‘অনলাইন পশুর হাট, যশোর’ নামের ফেসবুক পেজ তৈরি করা হয়েছে। এতে সহজেই খামারী ও ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা, প্রাণিসম্পদ অধিদফরের প্রতিনিধিগণ বিনামূল্যে পশুর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করতে পারবেন।
যশোর হাট.কম ওয়েব সাইটে পশুর বিজ্ঞাপন দিতে ওয়েবসাইটিতে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। সাইটটি ভিজিট করার সময় লগইন/ রেজিস্টার লেখার উপর ক্লিক করে তারপর নিজের অপশনে যেতে হবে। সেটি থেকে বিক্রেতারা অপশন বাছাই করলে নাম, ইমেইল এড্রেস ও ফোন নম্বর দিয়ে খুব সহজেই একাউন্ট তৈরি করা যাবে।
একাউন্ট তৈরি হয়ে গেলে ভেন্ডর ড্যাশবোর্ড হতে পশুর বিজ্ঞাপন আপলোড এবং প্রচার করতে পারবেন। পশুর বিজ্ঞাপন তৈরির সময় পশুর ছবি, সুন্দর একটি টাইটেল, পশুর বয়স, ওজন, রং, দাম, বিক্রেতা ও খামারীর নাম, উপজেলা-ইউনিয়ন-গ্রামের নাম উল্লেখপূর্বক ঠিকানা, মোবাইল নং ইত্যাদি তথ্য দিতে হবে।
ক্রেতাগণও ওয়েবসাইটটি ভিজিট করে পশু পছন্দ করতে পারবেন। প্রত্যেক পশুর মালিকের নাম মোবাইল নম্বরে তারা যোগাযোগ করে দরদাম ঠিক করতে পারবেন। খামারীদের সাথে যোগাযোগ করে পছন্দের লোকেশন হতে পশু সংগ্রহ করতে পারবেন। ক্রেতাদের সুবিধায় ইউনিয়ন ভিত্তিক তথ্য আপলোড করা হয়েছে। এতে ক্রেতারা চাইলে ইউনিয়ন ভিত্তিক খামারীদের নিকট হতে পশু ক্রয় করতে পারবেন।
একইভাবে ফেসবুক পেইজেও বিজ্ঞাপনসমূহ প্রকাশ করা হচ্ছে। সেখান থেকেও বিক্রেতার সাথে যোগাযোগ করে পশু ক্রয় করা যাবে। খামারিরা বিনামূল্যে আমাদের ফেসবুক পেইজ ও সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ আপত্তিকর বিজ্ঞাপন প্রকাশের ক্ষেত্রে যেকোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রাখেন।
ফেসবুক পেইজ ও ওয়েব সাইট শুধু খামারিদের সাথে ক্রেতাদের যোগাযোগের জন্য তৈরি করা হয়েছে। টাকা পয়সা লেনদেনের বিষয়ে জেলা প্রশাসন কোনক্রমেই সংশ্লিষ্ট নয়। এ কারণে পশুটি ভালোভাবে দেখে ক্রয় করতে হবে। কোন ত্রুটির জন্য জেলা প্রশাসনকে দায়ী করা যাবেনা।
জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান আরও বলেন, ‘ইদের সময় পশুহাটগুলোতে ভিড়, দালালদের দৌরাত্ম্য, নিরাপত্তাহীনতা এবং কোভিড সংক্রান্ত স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ বিভিন্ন প্রতিকূলতা বদলে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’
একইসাথে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে মানসম্মত সেবা দ্রুত জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছানোর এ উদ্যোগ প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প-২০২১ অর্জনের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ হবে বলে মনে করছেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান।