More

    করোনায় মৃত্যু: চৌগাছায় হিন্দু বৃদ্ধার সৎকারে ‘অগ্রযাত্রা’র মুসলিম যুবকেরা

    এস এ সিয়ামঃ চৌগাছা প্রতিনিধিঃ

    মৃত্যু আমাদের অনেক কিছুই শেখায়। আপন চেনায়, পরও চেনায়। করোনার মৃত্যুটা মনেহয় ভয়াবহ। মুহুর্তেই আপন ব্যক্তি পর হয়ে যায়।

    যশোরের চৌগাছায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া জোসনা রানী (৭০) মারা যাওয়ার পরে আপন-পর চিনেছেন। তার লাশ সৎকারে আপনজন কেও এগিয়ে আসেনি।হিন্দু বৃদ্ধার সৎকারে এগিয়ে এসেছে কয়েকজন মুসলিম যুবক।

    সন্তানকে বাঁচানোর জন্য পিতামাতার আত্মত্যাগ দেখেছি আমরা। কোন কোন ক্ষেত্রে পিতা-মাতাকে বাঁচাতে সন্তানের আত্মত্যাগও দেখা যায়। তাহলে জোসনা রানী মারা গেলে তার আপনজনেরা নিজেদের গুটিয়ে নিল কেন সে প্রশ্নও থেকে যায়।

    শুক্রবার চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান হিন্দু বৃদ্ধা জোসনা রানী।
    মৃতের ছেলে ও মেয়ে মায়ের লাশ দূর থেকে দেখলেও সৎকারে এগিয়ে আসেনি। ৪ঘন্টা লাশ পড়ে থাকলেও আপন ভাই বা সম্প্রদায়ের কাওকে পাওয়া যায়নি।

    বিপদে ভাইয়ের পাশে বোন থাকে, বোনের পাশে ভাই। এইটাই আমাদের সামাজিক রীতি। এমন রীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালেন চৌগাছা বাজারের সেনকো জুয়েলার্সের মালিক রবিন সেন। বোনের মৃত্যুর সংবাদেও এগিয়ে আসেননি।

    তাই হিন্দু রীতিতে সৎকারের নিয়ম জানেনা ওরা। তবু এগিয়ে আসলেন। জাত-ধর্ম-বর্ণ ভুলে গিয়ে মুসলিম যুবকরাই লাশ নিয়ে গেলেন শ্বশানে।হাসিব, জাহিদ, ফয়সাল এবং এ্যাম্বুলেন্স চালক আলমরাই জোসনা রানীর সৎকার করলেন।

    তিন সন্তানের জননী জোসনা রানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশের মহল্লার মৃত নারায়ন কর্মকারের মেয়ে। স্বামী সন্তোষ কর্মকার অনেক আগেই মারা গেছেন।

    প্রেম ভালবাসা কিংবা মায়া মমতার কাছে মাঝেমধ্যে মৃত্যুরও পরাজয় ঘটে। করোনা মহামারিতে সেই ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বারেবার।

    আমরা দেখেছি একজন মাকে, যিনি অক্সিজেনের অভাবে মৃতপ্রায় শিশুবাচ্চার মুখে নিজের মুখ লাগিয়ে অক্সিজেন দেওয়ার চেষ্টারত অবস্থায় হাসপাতালে যাচ্ছেন। স্রষ্টায় কৃপায় আর মায়ের ভালবাসায় বেঁচে উঠেছে সে।

    করোনা আমাদের দেখিয়েছে মাকে বাচাতে পিঠে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেধে নিজ মটর সাইকেলেই হাসপাতালের উদ্দেশ্যে ছুটে চলেছে ছেলে।মাকে সুস্থ্য করে আবার বাসায়ও ফিরেছে।

    আফসোস জোসনা রানীর এমন একটা সন্তান ছিলোনা। সেদিন হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার নিলুফার ইয়াসমিন বললেন, ‘জোৎসা রানী শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে মারা যান। মৃত্যুর পরে আমি তার ছেলেকে কয়েকবার ফোন করেছিলাম’

    করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরে সন্তানের আহাজারি দেখেছি আমরা। মৃত প্রায় বাবাকে মুখে শেষ পানি দিতে শত বাধা পেরিয়ে মেয়ের এগিয়ে যাওয়া দৃশ্যের সাক্ষি বিশ্ববাসী।

    চৌগাছায় করোনায় মারা যাওয়া জোসনা রানীর এমন একটা সন্তান ছিলোনা। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.লুৎফুন্নাহার লাকি বলেন, ‘জোসনা রানীর অবস্থা খুব খারাপ ছিল। আমরা তার ছেলেকে বলেছিলাম আরো ভাল চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে। কিন্তু সে বললো রোগীর সাথে থাকার মতো কেউ নেই’।

    করোনা আক্রান্ত একজন জনপ্রতিনিধিকে বাঁচাতে অন্য এক জনপ্রতিনিধির অক্লান্ত পরিশ্রম দেখা গেছে।করোনায় মারা যাওয়া রোগীদের সৎকারের জন্য সন্তানরা না এগিয়ে আসলেও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এগিয়ে আসে।

    এভাবেই জোসনা রানীর সৎকারের জন্য এগিয়ে এসেছিল চৌগাছার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অগ্রযাত্রা’। ডা.লুৎফুন্নাহার লাকি বলেন, মৃত্যুর প্রায় ২ ঘন্টা পরেও পরিবারের কেউ লাশ নিতে আসেননি। পরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অগ্রযাত্রাকে জানানো হলে তারাই মৃতদেহটি নিয়ে সৎকার করেন’।

    গত বছর করোনা মহামারি শুরুর পর চৌগাছায় প্রতিষ্টিত হয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অগ্রযাত্রা’।

    সংগঠনটির উপদেষ্টা, চৌগাছা পৌর মেয়র নূর উদ্দীন আল মামুন হিমেল। সভাপতি, ব্যবসায়ী হাসিবুর রহমান হাসিব সাধারন সম্পাদক জাহিদ। এরা ছাড়াও করোনায় মৃতদের সৎকার করেন সংগঠনের সদস্য, হোমিও ডাক্তার ফয়সাল এবং হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স চালক আলমসহ অনেকে।

    করোনা মোকাবেলায় সংগঠনটি উপজেলা প্রশাসনকে সার্বিক সহযোগিতা করে থাকে। এছাড়া করোনা ও করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরন করা প্রায় ২০জনকে সৎকার করেছেন তারা।

    শুক্রবার জোসনা রানীর মৃত্যুর ৪ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও যখন পরিবারের কেউ লাশ নিতে আসেনি।

    খবর পেয়ে সভাপতি হাসিব, পৌর মেয়র হিমেলের পরামর্শে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রকৌশলি এনামুল হক এর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করেন।

    ইউএনও এবং চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজের সার্বিক সহোযোগিতায় হাসিব,জাহিদ,ফয়সাল এবং এ্যাম্বুলেন্স চালক আলম পৌরসভার পান্টিপাড়া শ্বশানে নিয়ে লাশের সৎকার করেন।

    উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রকৌশলি এনামুল হক বলেন, “মৃতের আত্মীয়রা লাশ নিতে না আসায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অগ্রযাত্রা’র পক্ষ থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করা হয়। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় আমি তাদের লাশ সৎকারের অনুমতি দিই”।

    চৌগাছা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ বলয় চন্দ্র পাল বললেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন ‘লাশ সৎকারে কেও এগিয়ে না আসা দুঃখজনক। তবে মৃত্যুর বিষয়টি আমাদেরকে কেউ বলেনি’।

    মানুষ মানুষের জন্য স্লোগান নিয়ে ২০১৪ সালে অগ্রযাত্রা’র যাত্রা শুরু হয়। মানুষের কল্যানে প্রথমে রক্তদান কর্মসূচি দিয়ে আরম্ভ করা সংগঠনটির খাতায় রক্ত দিতে ইচ্ছুক এমন মানুষের তালিকায় এখন ৮০০ জনের নাম।

    © এই নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
    / month
    placeholder text

    সর্বশেষ

    রাজনীাত

    বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্য বিদেশে হাসপাতাল খোজা হচ্ছে

    প্রভাতী সংবাদ ডেস্ক: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্যে আবেদন করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা মনে করেন আবেদনে সরকারের দিক থেকে ইতিবাচক...

    আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ

    আরো পড়ুন

    Leave a reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    spot_imgspot_img