মাগুরা জেলা প্রতিনিধি:
পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মাগুরা জেলার সদর উপজেলার বগিয়া ইউনিয়নের বরই গ্রামের আপন তিন ভাই এবং এক ভাইয়ের স্ত্রী কে নির্মমভাবে আহত করার ঘটনা ঘটেছে।
আহত ব্যাক্তিদের বর্ণনামতে জানা যায় সেজো ভাই সচীন কুমার বিশ্বাস একটি টিনের নতুন ঘর তুলেছে যার মেঝে পর্যন্ত ইট দিয়ে গেথেছে।
ঘটনার দিন ২৫ শে জুলাই রোজ রবিবার আনুমানিক সকাল নয়টার দিকে ঘরের মেঝে ভর্তি করার জন্য ছোট ট্রাকে করে ক্রয়কৃত বালু এনে পাশের বাড়ির সামনের রাস্তায় ফেলে রাখতে বাধ্য হয়।
কারণ রাস্তাটি কাচা হওয়ায ট্রাকটির ডান পাশের চাকা কাদা মাটিতে দেবে যায়। ফলে ট্রাকটি আর সামনে এগোতে পারেনি।
এরপর মেজ ভাই নিরঞ্জন কুমার এবং তার স্ত্রী রিতা রানি বিশ্বাস, ছোট ভাই সচীন কুমার বিশ্বাস এবং তাঁর স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েরা সবাই মিলে জমাকৃত বালু ঝুড়ি, বড় গামলায় করে নিয়ে এসে নির্মানকৃত ঘরের মেঝে ভর্তি করছিল।
একপর্যায়ে সকালের খাবার ও একটু বিশ্রাম নেয়ার জন্য কাজ থেকে তারা কিছুটা সময় বিরত ছিল।
তখন পাশের বাড়ির মনতোষ কুমার বিশ্বাস, সচীন কুমার বিশ্বাস (৩২) এর বড় ভাই কার্তিক কুমার বিশ্বাস (৪৫) কে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে রাস্তায় যায় এবং বলে তুমি আমার রাস্তার সামনের মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছ কেন?
তখন কার্তিক কুমার বিশ্বাস বলেন দেখ আমরা আমাদের বালু নিচ্ছি তোমার বাড়ির সামনের রাস্তার মাটি নিচ্ছি না। তখন সেখানে শুধুমাত্র মনতোষ বিশ্বাসের বাড়ির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মনতোষ কুমার বিশ্বাস,কার্তিক বিশ্বাসের ডান চোখ এবং মাথা বরাবর দা দিয়ে আঘাত করে এবং অন্য সদস্যরা এলোপাতাড়ি রড এবং লাঠি দিয়ে আঘাত তরতে থাকে।
এক পর্যায়ে কার্তিক বিশ্বাসের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী রীতা রাণী বিশ্বাস চীৎকার শুনে বাইরে বেরিয়ে এসে ভাসুরকে মারতে দেখে নিজেই চীৎকার করে সবাইকে ডাকলে তাঁদের বাড়ির সবাই বেরিয়ে রাস্তায় আসে।
এসময় তরা সবাই খালি হাতে ছিল। ওই সময় মনতোষ কুমার সাহা (৪২), অসীম কুমার বিশ্বাস (৫০), দীপংকর কুমার বিশ্বাস (৫৫), অসীম কুমার বিশ্বাসের ছেলে উৎসব কুমার বিশ্বাস (২০ বছর) এবং মনতোষ কুমার বিশ্বাসের ছেলে সৌরভ কুমার বিশ্বাস (১৮) সহ তাদের পরিবারের বাড়ির মহিলারাও দা, রড, কাঁচি এবং লাঠি দিয়ে সচীন ও কার্তিক এর পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে আঘাত করতে থাকে।
হাসপাতাল সুত্র জানিয়েছে আঘাতের ফলে কার্তিক কুমার বিশ্বাসের মাথায় আটটি সেলাই লেগেছে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
মেজ ভাই নিরঞ্জন কুমার বিশ্বাসের (৩৬) বাম হাতে ফাটল এবং সমস্ত শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে, সেজ ভাই সচীন কুমার বিশ্বাসের শরীরে আঘাতের চিহ্ন এক রকম।
এমনকি নিরঞ্জন কুমার বিশ্বাসের স্ত্রী রীতা রাণী বিশ্বাস ও আঘাত থেকে রেহাই পায়নি। প্রতিবেশীরা জানিয়েছে, এদেরকে আহত করে রাস্তায় ফেলে রেখে মনতোষ বিশ্বাসের বাড়ির সবাই ঘরে তালা লাগিয়ে পালিয়ে গেছে।
আহতদের এক চাচা এবং পরিবারের আরো দুএকজন সদস্য তাঁদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সবাই হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
আহতদের ভাষ্যমতে এটা একটি পরিকল্পিত ঘটনা। সবাই এক হয়ে এ ধরনের জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছে। এর কারণ হিসাবে তাঁরা বলেছেন কয়েকবছর আগে তাঁরা একই ঘটনা ঘটিয়েছিল যা আইনের ২৬ ধারায় পড়েছিল।
প্রভাতী সংবাদের মাগুরা প্রতিনিধি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয় জনসাধারনের সাথে কথা বলে আহতদের বর্ণনার সত্যতা খুঁজে পান। তিনি দেখেছেন ছোপ ছোপ রক্ত, রক্তমাখা রড পড়ে থাকতে দেখেছেন এবং বালুর গাড়ির ডান পাশের চাকার চিহ্নও দেখেছেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে এই প্রতিবেদক যখন বিবাদী পক্ষের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাঁদের বাড়ি তালাবন্ধ অবস্থায় দেখেন। পরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রনোক হোসেন ঝন্নু এর সাথে প্রতিবেদকের ফোনে কথা হয়।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,ঘটনাটি দেড় ঘন্টা আগে ঘটলেও তাকে কেউ জানানি। প্রতিবেদক স্থানীয় চেয়ারম্যান সাহেবকে বলেন আহত মানুষগুলোর চিকিৎসা আগে দরকার নাকি আপনাকে জানানো আগে দরকার।
একথা শুনেই তিনি ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে সন্ধা ৬ টার দিকে উক্ত ওয়ার্ডের মেম্বর বেলাল উদ্দীন বেলাল এর সাথে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তখন স্থানীয় মেম্বর এর সাথে ছিল মনতোষ কুমার বিশ্বাস এর অন্য এক ভায়ে স্ত্রী।
তিনি এই প্রতিবেদকে বলেন তাঁদের পরিবারের কেউ আঘাত করেন নি। আহতরা নিজেরা নিজেদের কে আহত করে হাসপাতালে গেছেন।
তিনি এসময় এই প্রতিবেদককে কিছু টাকা নিয়ে রিপোর্টটা তাঁদের কথামত হালকাভাবে করতে অনুরোধ করেন। তাদের কথায় প্রতিবেদক ক্ষোভ প্রকাশ করে এ স্থান ত্যাগ করেন।
এলাকাবাসি মনে করেন, বিবাদী পক্ষ ধনবান এবং ক্ষমতাশালী। ফলে তাদের হয়তো কিছুই হবে বলে মনে হয় না।
যদিও কার্তিক কুমার বিশ্বাস বাদী হয়ে মাগুরা চীফ জুডিশিয়াল মেজিস্ট্রেট কোর্টে এ ব্যাপারে একটি মামলা করার প্রস্ততি চলছে।
লকডাউনের কারণে আদালতের কার্যক্রম সংক্ষিপ্ত আকারে চলছে বলে মামলা এন্ট্রি করতে দেরী হচ্ছে বাদী জানিয়েছেন।