মঙ্গলবার (২০ জুলাই) সকাল সাড়ে ৮টায় দেশটির পেনাং রাজ্যের সুরাউ তামান পেলাংগি মসজিদে নামাজ আদায় করতে গেলে কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে একশো মুসল্লিকে নামাজ আদায়ের অনুমতি দেয়। কিন্তু নিয়ম ভেঙে প্রায় ২ শতাধিক মুসল্লি মসজিদ ও মসজিদের বাইরে নামাজ আদায় করে। এদের বেশিরভাগই অভিবাসী বাংলাদেশি।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
মালয়েশিয়ায় ইদুল আজহার নামাজ আদায়ের সময় সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি আদেশ ভঙ্গের অভিযোগে ৪৮ বাংলাদেশিকে ৪ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে দেশটির পুলিশ।
কোভিড-১৯ সংক্রমণরোধে আরোপিত স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ক স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেমের (এসওপি) নিয়ম ভেঙে মঙ্গলবার ইদের নামাজে অংশ নেওয়া ৪৮ বাংলাদেশিকে আটক করা হয়।
দেশটির সংবাদ মাধ্যম স্ট্রেইটস টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার সকালে অভিযুক্ত এক স্থানীয় নাগরিকসহ ৪৮ বাংলাদেশিকে আদালতে হাজির করা হয়।
পুলিশ তাদের রিমান্ড আবেদন করলে বুকিত মেরতাজম ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সহকারী রেজিস্ট্রার হাসলিজা রাজাক তা মঞ্জুর করে দেন। আটককৃত বাংলাদেশিদের ৪ দিনের আর মালয়েশিয়ার নাগরিককে ৩ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়।
মঙ্গলবার (২০ জুলাই) সকাল সাড়ে ৮টায় দেশটির পেনাং রাজ্যের সুরাউ তামান পেলাংগি মসজিদে নামাজ আদায় করতে গেলে কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে একশো মুসল্লিকে নামাজ আদায়ের অনুমতি দেয়। কিন্তু নিয়ম ভেঙে প্রায় ২ শতাধিক মুসল্লি মসজিদ ও মসজিদের বাইরে নামাজ আদায় করে। এদের বেশিরভাগই অভিবাসী বাংলাদেশি।
বিধিনিষেধ অমান্য করে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে নামাজ আদায়ের এমন ভিডিয়ো চিত্র স্থানীয় একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করার সঙ্গে সঙ্গে তা ভাইরাল হয়। এর পর নানা মহলে উঠে সমালোচনার ঝড়।
এঘটনার পরে অভিযান চালিয়ে ৪৮ বাংলাদেশি সহ একজন স্থানীয় (মালেশিয়ান) বৃদ্ধকে আটক করে পুলিশ।
এ ঘটনায় আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পেনাংয়ের পুলিশ প্রধানকে নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজা জয়নুদ্দিন। ‘কোনো ছাড় দেয়া হবে না’ উল্লেখ করে প্রয়োজনে এসব অভিবাসীদের দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেন মন্ত্রী।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে ইদুল আজহার আগের দিন মুসলিম অধ্যুষিত মালয়েশিয়ায় কার্যকর হতে যাচ্ছে দেশব্যাপী লকডাউন।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন সোমবার (১৯ জুলাই) এক ঘোষণায় জানান, বুধবার (২১ জুলাই) থেকে দেশজুড়ে কার্যকর হবে এই লকডাউন।
রাজধানী কুয়ালালামপুর সহ কয়েকটি শহরে আংশিক লকডাউনের পর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় সরকারের পক্ষ থেকে এসেছে কড়া নির্দেশনা।
গত ১২ মে থেকে কার্যকর হওয়া এই লকডাউন কার্যকর ছিল ৭ জুন পর্যন্ত।
এ সময় দেশটির সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু থাকলেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে ইদের সময় ভোজ, আত্মীয়ের বাড়িতে ভ্রমণ, বিয়ের অনুষ্ঠান সহ সকল ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনের ওপর।
এ সময় বন্ধ ছিল প্রদেশ ও জেলা থেকে অন্য প্রদেশ ও জেলায় জন-সাধারণের যাতায়াত।
নির্দেশনায় আরো বলা হয়, বড়ো মসজিদে ৫০ জন মুসল্লি ও ছোট মসজিদে ২০ জনের বেশি জমায়েত হতে পারবে না।
বন্ধ ছিলো স্কুল, কলেজ গুলো। তবে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক কোনো পরীক্ষায় অংশ নেয়, তাদের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিলো না।
কেন এমন নির্দেশনা
গত মাস থেকে দেশটিতে দেওয়া নিষেধাজ্ঞার কারণে কোভিড-১৯ আক্রান্তের হার ধীরে ধীরে কমে আসছিল। তবে রমজান মাসে স্কুল ও কলেজ খুলে দেওয়া সহ বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার পরই প্রতিদিনই বাড়তে থাকে সংক্রমণ। সম্প্রতি দেশটিতে দৈনিক সংক্রমণ ছাড়িয়ে গেছে ৪ হাজারের বেশি।
অন্যান্য দেশের তুলনায় মালয়েশিয়ায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ অনেকটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই ছিল। কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশটিতে শনাক্তের সংখ্যা ৪ লাখ ৪৪ হাজার। মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৭০০ জনের।
তবে সম্প্রতি কোভিড-১৯ এর দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতীয় ধরনের প্রভাবে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে সংক্রমণের হার বেড়ে গেছে।