More

    ইভ্যালির লোকসান ৩১৬ কোটি টাকা, ঊর্ধ্বতনদের মাসিক বেতন ১৮ লাখ

    নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

    কাস্টমারকে আশ্চর্যজনক অফার দিয়ে পণ্য বিক্রি করা প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া তথ্যমতে, চলতি বছরের ১৪ই মার্চ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির নিট লোকসানের পরিমান ৩১৬ কোটি টাকা

    অনলাইনে পণ্য কেনাবেচার প্রতিষ্ঠানটি প্রচুর লোকসানে থাকার পরেও কোম্পানির ঊর্ধ্বতনরা মাসে বেতন নিচ্ছেন ১৮ লাখ টাকা। অথচ নীট লসের হিসাবে তাদের শেয়ার মূলধনের দুইশত গুণেরও বেশি হারে লোকসানে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

    এমন লসের পরেও কোম্পানিটির এমডি ও চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতনরা মাসিক বেতন পাচ্ছেন ১৮ লাখ টাকা। এছাড়া বিলাসবহুল গাড়িসহ তারা অন্যান্য সকল সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন।

    এসব লোভনীয় অফারের কারণে ব্যাপক সমালোচিত হয় অনলাইনে কেনাবেচার প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি। তারই পরিপেক্ষিতে গত মাসে ইভ্যালি নিয়ে ৬ সদস্যের পরিদর্শন টিম গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

    তাদের দেয়া গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালির নিট লোকসানের পরিমাণ ছিল ৩১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৬ হাজার ১৪৮ টাকা।

    প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইভ্যালির লোকসান ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের মোট সম্পদের দ্বিগুণের বেশি দেনা রয়েছে৷ এছাড়া শেয়ার মূলধনের দুইশত গুণেরও অধিক হারে লোকসান হওয়াই কোম্পানিটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

    প্রতিবেদনে তাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনার অন্যতম ঘাটতি উঠে এসেছে । ভবিষ্যতে এই বিপুল পরিমাণ লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবে কিনা কিংবা দীর্ঘ মেয়াদে কোম্পানির অস্তিত্ব রক্ষা সম্ভব হবে কিনা সেবিষয়ে আশংকা প্রকাশ করা হয়। কোম্পানির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে কোন গ্রহণযোগ্য পরিকল্পনা পাওয়া যায়নি।

    প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালির ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৬ হাজার ১৪৮ টাকা।

    সে হিসেবে তাদের শেয়ার মূলধনের ৩১৫.৪৪ গুণ ইকুইটি ঘাটতি রয়েছে। এতো লোকসানের মধ্যেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ৪০ শতাংশ শেয়ারের মালিক মোহাম্মদ রাসেল মাসিক সাড়ে ৪ লাখ টাকা বেতন নেন।

    কোম্পানিটির চেয়ারম্যান ও ৬০ শতাংশ শেয়ারের মালিক হিসেবে শামীমা নাসরীন মাসিক বেতিন নেন ৫ লাখ টাকা।

    চেয়ারম্যান ও এমডি হওয়ার সুবাদে তারা কোম্পানি থেকে গাড়িসহ অন্যান্য সকল সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন।

    এছাড়া কোম্পানির কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ৮ লাখ ২ হাজার ২৩০ টাকা বেতন নিয়েছেন।

    অন্যদিকে কোন কাস্টমার যদি তার ক্র‍য় অর্ডার বাতিল করতে চায় তাহলে আসে আরেক ভোগান্তি। অর্ডারের পরে অগ্রীম টাকা নিয়ে নিলেও বাতিলের কারণে সেই অর্থ ফেরতের ক্ষেত্রে তারা কোন নীতিমালা অনুসরণ করেনা।

    অর্থ ফেরতের ক্ষেত্রে তারা কোন আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনা বরং কোম্পানির নিজস্ব পছন্দের প্রক্রিয়া প্রয়োগের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

    এদিকে ইভ্যালি কর্তৃক বাতিলকৃত অর্ডারের পরিশোধিত মূল্য ফেরতের পরিমাণ নিয়েও অনেক অস্বচ্ছতা উঠে এসেছে তদন্ত প্রতিবেদনে।

    এইক্ষেত্রে গ্রাহকের পরিশোধিত মূল্য অপেক্ষা অধিক পরিমাণে অর্থ ফেরত প্রদানের বিষয়টিও বিভিন্নভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে।

    এসব কারণে বিভিন্ন উচ্চ মূলের পণ্য যেমন- হোম অ্যাপ্লায়েন্স, মোটরসাইকেল, গাড়ি ইত্যাদির ক্ষেত্রে এক শ্রেণির গ্রাহক বেশি অর্থ ফেরত পাওয়ার আশায় ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে অর্থ লগ্নি করছেন বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

    এদিকে, ইভ্যালির বিরুদ্ধে ওঠা নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখছে দুদক। দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে উপসহকারী পরিচালক মুহাম্মদ শিহাব সালাম তদন্ত করছেন।

    তারা জানান, বেশ কয়েকটি অভিযোগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।

    এ বিষয়ে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আসা অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই অনুসন্ধান নথি চালু হয়। অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এর আগেও এ বিষয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। ওই অভিযোগ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ সকল বিষয়ে অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

    গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে নগদ ও পণ্য মিলিয়ে অগ্রিম হিসাবে প্রায় ৩৩৯ কোটি টাকা নিয়েছে ইভ্যালি।

    এই টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না মর্মে ৪ জুলাই বিভিন্ন অনিয়ম খতিয়ে দেখতে দুদকসহ সরকারের চার প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

    দুদক চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক ইভ্যালির বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

    প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৪ মার্চে ইভ্যালির মোট সম্পদ ৯১ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার ৮৪৬ টাকা ( চলতি সম্পদ ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা) এবং মোট দায় ৪০৭ কোটি ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৯৯৪ টাকা। ওই তারিখে গ্রাহকের কাছে ইভ্যালির দায় ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টের কাছে দায় ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকা। গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়া ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টদের কাছ থেকে ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকার মালামাল নেওয়ার পর স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ৪০৩ কোটি ৮০ লাখ ১ হাজার ৯১৪ টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ রয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা।

    বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বিষয়টি স্পষ্ঠ হয় যে, যদি ইভ্যালি অগ্রীম গৃহিত অর্থের বিপক্ষে পণ্য সরবরাহ করতে চায় তাহলে মাত্র ১৬ দশমিক ১৪ শতাংশ গ্রাহককে পণ্য কিংবা অর্থ ফেরত পাবেন।

    এই মুহুর্তে তাদের পক্ষে বাকি ৮৩.৮৬ শতাংশ গ্রাহক এবং মার্চেন্টের পাওনা পরিশোধ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

    এক্ষেত্রে গ্রাহক ও মার্চেন্টের কাছ থেকে গৃহীত ৩৩৮ কোটি ৬২ লাখ ১৮ হাজার ১৭৮ টাকা আত্মসাৎ কিংবা অবৈধভাবে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে।

    সার্বিক বিষয়ে জানতে ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলের মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

    © এই নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
    / month
    placeholder text

    সর্বশেষ

    রাজনীাত

    বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্য বিদেশে হাসপাতাল খোজা হচ্ছে

    প্রভাতী সংবাদ ডেস্ক: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্যে আবেদন করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা মনে করেন আবেদনে সরকারের দিক থেকে ইতিবাচক...

    আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ

    আরো পড়ুন

    Leave a reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    spot_imgspot_img