More

    বন্ধু ভাগ্য

    Friend Fate

    ফারজানা এ্যানি:

    সজল ও মনন দুই বন্ধুর খুব ভাব। জীবনের বেশিরভাগ সময় ওরা এক সাথে পাশাপাশি বেড়ে উঠা। তাই মানুষ দু’জন হলেও ওদের এক আত্মা। কোন কিছুই আলাদা ভাবে করে না কখনো ওরা। কলেজের পর যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শুরু হলো তখন একটা গোল বেঁধে গেল।

    মনন আর সজল দুই জনকে ভর্তি হতে হলো ভিন্ন ভিন্ন জায়গায়। পড়াশোনা করতে মনন পাড়ি দিলো দুরের শহরে আর সজল তার জেলা শহরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজে পড়াশোনা শুরু করলো। প্রথম প্রথম সজলকে ছেড়ে এসে ভাল লাগতো না মননের । তাই সাপ্তাহিক ছুটি পেলেই ট্রেনে উঠে পড়তো প্রিয় বন্ধুর সাথে সময় কাটাবে বলে।

    দিন গড়িয়ে দু’জন আস্তে আস্তে ছেড়ে থাকায় অভ্যস্থ হয়ে পড়ছিল।সময় সব কিছু মানিয়ে নেয় । ওরা তাই ওদের জগতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছিল ধীরে ধীরে। সজলের বাবা বড় ব্যবসায়ী। তিনি ছেলেকে তার ব্যবসায়িক হিসাব নিকাশ নিয়ে ভাবতে বলেছেন। সজলের এতে কোন আপত্তি নেই। সেই তো সব কিছু তাকেই দেখতে হবে ক্ষতি কি একটু মনোযোগ দিলে। তাই পড়াশোনার ফাঁকে সজল ব্যবসায় মনোনিবেশ করতে থাকলো।

    ওদিকে মনন পড়াশোনা করে বেশ এগিয়ে গেল । অনার্স পরীক্ষা হয়ে গেলে লম্বা ছুটিতে বাড়িতে এলে সজলকে আর আগের মত পেল না। এখন সজল পুরোদস্তুর একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তবুও সজল চেষ্টা করে সময় বেড় করে মননের সাথে আড্ডা দেয়। এত অল্প সময়ের জন্য আড্ডায় মননের মন ভরে না। ওর অনেক কথা জমা আছে সজলকে বলার । কিন্তু সব সময় এত ব্যস্ত থাকে যে কখন সে সব কথা বলবে বুঝে উঠতে পারে না।
    দেখতে দেখতে দিন গড়িয়ে গেল ।

    মনন ছুটি শেষে ফিরে গেল তার বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে। আর মাত্র একটা বছর পর মনন পাস করলে নতুন জীবন শুরু করবে। ওর মনে অনেক স্বপ্ন জমা হয়েছে ওর এক বছরের জুনিয়র এক শ্যামলা তরুণী কে দেখে। তাকে নিয়ে এখন অনেক স্বপ্ন বুনে মনন। একদিন ও সাহস করে বলেই ফেললো সে কথা। চন্দনা বড় শহরে বেড়ে উঠা মেয়ে। সুন্দরী না হলেও মিষ্টি মেয়ে বলে একটা পরিচিতি আছে ক্যাম্পাসে। অনেকেই ওকে চোখে চোখে রাখে।বলতে গেলে এটা নিয়ে ওর একটা চাঁপা আনন্দ হয় । কিন্তু প্রকাশ করে না কখনো।

    মননের কথার মধ্যে একটা কি যেন আছে । চন্দনা কে মননকে নিয়ে তাই আলাদা ভাবে ভাবতে বাধ্য করলো। চন্দনার তখন সবে মাস্টার্স ক্লাস শুরু হয়েছে।

    আর মনন মাস্টার্স ফাইনাল দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। পড়াশোনা করা ছাড়া তেমন কোন কাজ নেই হাতে। অবসরে তাই ও চন্দনাদের বিভাগের সামনে নিয়মিত আড্ডা দেওয়া শুরু করলো ।এর মধ্যে জেনে নিয়েছে চন্দনার ক্লাসের সময়সূচি।

    চন্দনা ক্লাস থেকে বেড়িয়ে চায়ের দোকানে চা খেতে এলেই তাই মননের সাথে দেখা হয়ে যায়। একটু আধটু কথা হয় । বিষয়টি বেশি দিন দু’জনের বন্ধু মহলে গোপন থাকলো না। দেখতে দেখতে মননের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল। এখন হোস্টেল ছেড়ে দিতে হবে।

    আপাতত বাড়ি গিয়ে পরের চিন্তা পরে করবে ঠিক করলো। কিন্তু বাড়ি ফিরে গেলে চন্দনা কে কিভাবে ও দেখতে পাবে তার কোন সমাধান হচ্ছে না।

    মনন ঠিক করলো বাড়ি গিয়ে সজলকে সব কিছু খুলে বললে নিশ্চিত ও কোন ভাল পরামর্শ দিতে পারবে।
    সেই ছোটবেলা থেকে সব বিপদের সঙ্গী মননের সজল। নিজের শহরে ফিরে গিয়ে সজলকে চন্দনার সব কথা খুলে বললো। সজল খুব মনোযোগ দিয়ে ওর কথা শুনলো। চন্দনার ছবি দেখতে চাইলো।মনন ছবি না দেখিয়ে চন্দনা কে দেখাতে সজল জোর করে নিয়ে এলো ওদের ক্যাম্পাসে।ওকে দেখে তুই আমাকে ঠিক একটা সিদ্ধান্ত দিবি দোস্ত।

    ওরা যখন ক্যাম্পাসে পৌঁছালো তখন চন্দনা ক্লাসে।ক্লাস শেষে চায়ের দোকানে পা দিয়ে মননের সাথে সজলকে দেখতে পেল ।ও মননের কাছে সজলের অনেক কথা শুনেছে। তাই দেখেই চিনতে পারলো।সজল খুব ঠান্ডা চোখে ওকে পর্যবেক্ষণ করছে এতটুকু বুঝতে চন্দনার কোন কষ্ট হলো না। তাই একটু হেসে এগিয়ে গিয়ে সজলকে জিজ্ঞেস করলো তা কেমন দেখলে,পছন্দ হয় ?

    চন্দনার কথায় মননের চোখে একটা দুষ্টু হাসি খেলে গেল। ঠিক চিনতে পেরেছো দেখছি।আজ সারাদিন ও তোমার সাথে থাকবে। আমি এই ফাঁকে হলের কিছু কাজ আছে, সেরে ফেলি কি বলো? তুমি ওকে একটু আমাদের ক্যাম্পাস ঘুরিয়ে দেখাও। দুপুরে তিনজন এক সাথে খাবো।বলেই সে তার হলের দিকে রওনা দিলো।
    এখন পর্যন্ত সজল কোন কথা বলেনি। শুধু ওর ঠোঁটে কোনে একটা অদৃশ্য হাসি। খুব ভাল করে খেয়াল করলে তবে চোখে পড়বে। চন্দনা কে সজলের কেমন লেগেছে বুঝার জন্য নানা কথা বলতে থাকলো।শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে চন্দনা বলেই ফেললো কিভাবে তোমরা দুজন বন্ধু হলে বুঝতে পারি না বাবা। এক জনের মুখে কথার তুবড়ি ছোটে আর একজন একদম মুখে তালা।

    সজল একটু হেসে এগিয়ে গিয়ে বললো চল তোমাদের ক্যাম্পাস ঘুরে দেখি। হাঁটবে না কোন বাহন নেবে ?চল হেঁটেই দেখি।

    তারপর মননের সাথে কিভাবে পরিচয় হলো,কতটা ওকে জানে নানা বিষয়ে কথা জানতে চাইলো চন্দনার কাছে।আরো জানতে চাইলো সজলের সাথে হাঁটতে চন্দনার খারাপ লাগছে কিনা? প্রশ্নটার মাথা মুন্ডু বুঝলো না চন্দনা। এ নিয়ে পরে মনন কে জিজ্ঞেস করবে ভাবলো ও।

    দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা হলে মনন চন্দনা কে জানালো ও ওকে বিয়ে করতে চাই। সজল থাকা অবস্থায় সেটা সেরে ফেলতে চাই।আপাতত কাছের দুই একজন বিষয়টি জানবে ।তারপর সময় সুযোগ বুঝে বিষয়টাকে পারিবারিক ভাবে সমাধান করে নিবে।

    চন্দনার বুঝতে বাকি রইল না মনন সজলের উপর কতখানি নির্ভরশীল।এতে ওর কোন আপত্তি নেই । ওদের দুজনের জীবন সুন্দর করে গুছিয়ে দেওয়ার জন্য যে এমন একজন বন্ধু আছে তাতেই ও খুশি। সবার জীবনে তো এমন বন্ধু ভাগ্য হয় না।

    লেখক: কবি, গল্পকার ও উন্নয়ন কর্মী

    © এই নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
    / month
    placeholder text

    সর্বশেষ

    রাজনীাত

    বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্য বিদেশে হাসপাতাল খোজা হচ্ছে

    প্রভাতী সংবাদ ডেস্ক: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্যে আবেদন করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা মনে করেন আবেদনে সরকারের দিক থেকে ইতিবাচক...

    আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ

    আরো পড়ুন

    spot_imgspot_img