প্রভাতি সংবাদ ডেস্ক:
নলিন যাদবকে গত বছরের শেষ দিকে ভারতীয় পুলিশ গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠালে তিনি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। তিনি জানতেন না কখন তিনি মুক্তি পাবেন। ২৬ বছর বয়সী এই উদীয়মান কমেডিয়ান বলেন, ‘আমি বুঝতে পারিনি কীভাবে বা কেন আমার সঙ্গে এমনটা করা হলো।’
যাদব প্রায় দুই মাস কারাগারে ছিলেন। সে সময়কার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘আমি ঘুমাতে বা খেতে পারতাম না। উদ্বেগ আমাকে গ্রাস করেছিল। আমার মন ছটফট করত।’ তার কথিত অপরাধ হলো- একটি কৌতুক শোর আয়োজন এবং অনুষ্ঠান শুরুর মাত্র পাঁচ মিনিট আগে একজন মুসলিম কৌতুক অভিনেতার সঙ্গে দেখা করা। তার বিরুদ্ধে হিন্দু ধর্মকে অবমাননা করে কৌতুক বলার অভিযোগ তুলেছে কট্টরপন্থি হিন্দুরা।
যাদব এবং অন্য চারজনের বিরুদ্ধে একটি কমেডি শোতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং উস্কানির অভিযোগে গত জানুয়ারিতে বিচার শুরু হয়েছে। তাদের দাবি, তারা দোষী নয়। তারা এখন বিচারের অপেক্ষায় আছেন এবং দোষী সাব্যস্ত হলে তিন বছরের কারাদন্ড ভোগ করতে হবে। তবে হিন্দু ধর্মাবলম্বী কৌতুক অভিনেতা যাদব বলেছেন, তিনি সেই রাতে হিন্দু ধর্মের কথা উল্লেখই করেননি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু-জাতীয়তাবাদী বিজেপি সরকার সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে এবং সেলফ-সেন্সরশিপকে উৎসাহিত করতে ঔপনিবেশিক যুগের আইন ব্যবহার করছে। বিপরীতে বিজেপির হিন্দু-জাতীয়তাবাদী এজেন্ডার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ডানপন্থি চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলোর বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের প্রতি চোখ বুজে থাকার নীতি নেয় কর্তৃপক্ষ।
যাদবের ঘটনা বিচ্ছিন্ন কোনো ব্যাপার নয়। দেশটিতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর দমন-পীড়নের অংশ হিসেবে সাংবাদিক, অধিকার কর্মী এবং বিনোদন তারকারা ক্রমবর্ধমান এ তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন।
চলতি বছরটি কৌতুক জগতে তার অবস্থান আরও পোক্ত করবে বলে আশা করেছিলেন যাদব। এজন্য নবাগত এ অভিনেতা বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে অভিজ্ঞ মুসলিম কৌতুক অভিনেতা মুনাওয়ার ফারুকীর সঙ্গে অনুষ্ঠানে অংশ নিতে চেয়েছিলেন।
যাদব বলেন, তিনি যৌনতা এবং ভারতীয় সমাজ সম্পর্কে কয়েকটি কৌতুক বলেছিলেন। তারপর ফারুকীর কৌতুক দেখতে শুরু করেন। কিন্তু ইন্দোরের বিজেপি মেয়রের ছেলে এবং কট্টরপন্থি গোষ্ঠী হিন্দু সুরক্ষা গোষ্ঠীর সদস্য একলব্য সিং গৌড় মঞ্চে এসে অভিযোগ তোলেন ফারুকী হিন্দু দেবতাদের অপমান করেছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যাদব পুলিশকে ফোন করে সাহায্য চান। তিনি ভেবেছিলাম পুলিশ এলে তারা নিরাপত্তা পাবেন। যাদব বলেন, ‘আমি ফারুকীকে রক্ষা করতে চেয়েছিলাম। এরপর যা হবে তা আমি ভাবিনি।’
সেই রাতে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। এ নিয়ে মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ফারুকী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সম্পর্কে রসিকতা করেছেন। কিন্তু তিনি কী বলেছেন, তা উল্লেখ করা হয়নি।
একাধিক আদালতের শুনানি এবং ৩৫ দিন জেলে থাকার পর ৫ ফেব্রুয়ারি ভারতের সর্বোচ্চ আদালত জামিনে মুক্তি দেন ফারুকীকে। আদালত বলেন, পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করার সময় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি। সূত্র : সিএনএন।