প্রভাতী বার্তাকক্ষ:
বৈশ্বিক মহামারী করোনার কাছে হেরে গিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন একাত্তরের কণ্ঠযোদ্ধা, কিংবদন্তী গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর (ইন্না ল্লিাহে ওয়া ইন্না ইলাহে রাজেউন)।
তিনি দিরাগত (শুক্রবার) রাত ১০.৫৬ মিনিটে ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।
এই প্রথীতযশা শিল্পী ইউনাইটেড হাসাপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
ফকির আলমগীর মৃত্যু সংবাদটি নিশ্চিত করেছেন উনার ছেলে মাশুক আলমগীর রাজীব।
রাজিব জানিয়েছেন, রাত দশটার একটু আগে লাইফ সাপোর্টে থাকা ফকির আলমগীরের হার্ট অ্যাটাক হয়।
এরপর থেকে মুহূর্তেই তার অবস্থা খারাপ হতে থাকে। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন, কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে তিনি রাত ১০টা ৫৬ মিনিটের দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তিনি কোভিড পজিটিভ হলে প্রথমে তাকে গ্রিন রোডের একটি হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল।
পরবর্তীতে বিগত ১৫ জুলাই থেকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসাপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন ফকির আলমগীর।
এর মধ্যে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১৯ জুলাই তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পাশ্চাত্য সংগীতের সঙ্গে দেশজ সুরের সেতুবন্ধন ঘটিয়ে বাংলা পপ গানের বিকাশে যে সকল শিল্পী ভূমিকা রেখেছিল তাদের মধ্যে ফকির আলমগীর অন্যতম।
ফকির আলমগীর এর দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বেশ কিছু গান ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এর মধ্যে ও সখিনা, নাম তার ছিলো জন হেনরি, মায়ের একধার ধুধের দাম, কালো কালো মানুষের দেশে সহ আরো অনেক গান এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
সংগীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সরকার ১৯৯৯ সালে ফকির আলমগীরকে একুশে পদক দেয়।
এ ছাড়াও তিনি সংগীতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ‘শেরেবাংলা পদক’, ‘ভাসানী পদক’, ‘সিকোয়েন্স অ্যাওয়ার্ড অব অনার’, ‘তর্কবাগীশ স্বর্ণপদক’, ‘জসীমউদ্দীন স্বর্ণপদক’, ‘কান্তকবি পদক’, ‘গণনাট্য পুরস্কার’, ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক মহাসম্মাননা’, ‘ত্রিপুরা সংস্কৃতি সমন্বয় পুরস্কার’, ‘ঢালিউড অ্যাওয়ার্ড যুক্তরাষ্ট্র’, ‘জনসংযোগ সমিতি বিশেষ সম্মাননা’, ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড বিশেষ সম্মাননা’ ও ‘বাংলা একাডেমি সম্মানসূচক ফেলোশিপ’ পদক পেয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা বিভাগে স্নাতকোত্তর পাশ করা ফকির আলমগীর লেখালেখি ও গান গাওয়ার পাশাপাশি বাঁশীবাদক হিসেবে তাঁর পরিচিতি ছিল।
বাংলাদেশের সকল আন্দোলন সংগ্রামে তিনি তাঁর গান দিয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছেন।
তিনি ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী ও গণশিল্পীগোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে ষাটের দশকে বিভিন্ন আন্দোলন–সংগ্রামে এবং ’৬৯-এর গণ–অভ্যুত্থানে গণসংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন।
৭১–এর মুক্তিযুদ্ধ ও ৯০–এর সামরিক শাসনবিরোধী গণ–আন্দোলনে তিনি শামিল হয়েছিলেন তাঁর গানের মাধ্যমে এজন্য তাকে কন্ঠযোদ্ধাও বলা হয়ে থাকে।
তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা।
এ ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি, জনসংযোগ সমিতির সদস্যসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক সংগঠনের দায়িত্ব পালন করেছেন।
এই গুণী শিল্পীর মৃত্যুতে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বরেণ্য শিল্পীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।