More

    দখলকৃত মোহাম্মাদপুর মাদ্রাসা থেকেও বিতারিত হচ্ছেন মামুনুল-মাহফুজুল

    অধ্যক্ষ হওয়ার পরেই আজিজুল হক জড়িয়ে পড়েন দুর্নীতির সাথে। দুর্নীতির কারণে ১৯৯৯ সালে তাকে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সঙ্গী ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা হওয়ায় মাদ্রাসাটি আবার দখল করে নেন অবৈধ ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে।

    উম্মে আম্মারা ইভা, ঢাকা:

    পারিবারিকভাবে করা ধারাবাহিক দূর্নীতির অভিযোগে মোহাম্মদপুরের আলোচিত কওমি মাদ্রাসা জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়ার উপরে কর্তৃত্ব হারাতে চলেছেন আলোচিত হেফাজত নেতা মামুনুল হকের বড় ভাই মাহফুজুল হক।

    মাদ্রাসাটি তিনি যাদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতেন, তাদের সবাইকেও বাদ দেয়া হচ্ছে পরিচালনা পরিষদ থেকে। মাহফুজুলের ভাই মামুনুল হক নিজেও এই মাদ্রাসার শিক্ষক।

    এপ্রিল মাসে নারায়ণগঞ্জের একটি রিসোর্টে আটক হওয়ার পরে মুক্তি পেয়েই পর বড় ভাই মাহফুজুল হককে নিয়ে লাইভে এসে মামুনুল হক দাবি করেন, রিসোর্টে তার সাথে থাকা নারীকে তিনি বিয়ে করেছেন।

    মামুনুল ও মাহফুজুলের বাবা আজিজুল হক ছিলেন মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বিএনপির শরিক দল ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা ছিলেন আজিজুল হক।

    পর্যায়ক্রমে, অধ্যক্ষ হওয়ার পরেই আজিজুল হক জড়িয়ে পড়েন দুর্নীতির সাথে। দুর্নীতির কারণে ১৯৯৯ সালে তাকে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সঙ্গী ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা হওয়ায় মাদ্রাসাটি আবার দখল করে নেন অবৈধ ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে।

    আজিজুল হকের মৃত্যুর পর মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন তার দুই ছেলে মামুনুল হক ও মাহফুজুল হক। মাহফুজুল হক এখন মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ। গত এপ্রিলে নারায়ণগঞ্জের একটি রিসোর্টের ঘটনায় গ্রেপ্তারের পর তার পরিবারের মাদ্রাসা দখলের বিষয়টি আবার নজরে আসে।

    মামুনুল বিতর্ক চলাকালেই মাহফুজুলকে তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হলো। মাহফুজুলের ব্যক্তিগত সহকারী মাহফুজ বিন হাবিব জানান, ‘যারা মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন, সবাই দায়িত্ব ছাড়ছেন, মাদ্রাসাও ছেড়ে দিচ্ছেন।’

    পরিচালনা পর্ষদের মাদ্রাসা ছাড়ার কারণ হিসেবে সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। কোনো নোটিশও দেওয়া হয়নি।’

    মাহফুজুল হক কওমি মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারাসিল আরাবিয়ার মহাসচিব পরে অধিষ্ঠিত। পাশাপাশি সদ্য বাতিল হয়ে যাওয়া হেফাজতে ইসলামের কমিটির নায়েবে আমিরও ছিলেন তিনি। তবে, নেতৃত্বে পরিবর্তন আসলেও মামুনুল হককে মাদ্রাসা থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে কি না, সেটি এখনো নিশ্চিত নয়।

    মামুনুল হক হেফাজতের যে কমিটিতে যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন, সেই কমিটিরই নায়েবে আমির ছিলেন মাহফুজুল হক। গত নভেম্বরের সম্মেলন শেষে হেফাজতের ওই কমিটি ঘোষণা করেছিলেন মাহফুজুলই।

    মাদ্রাসায় আজিজুল হকের আধিপত্য

    জামিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় রাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিলো। কিন্তু, অধ্যক্ষ হওয়ার পর আজিজুল হক সেই নিয়ম ভেঙ্গে রাজনীতির প্রবেশ ঘটান। রাজনৈতিক সংগঠন খেলাফত মজলিসের আমির হওয়ার পরে বিএনপি সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করেন।

    বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৯৯৯ সালে মাদ্রাসা থেকে চূড়ান্তভাবে আজিজুল হক’কে বহিষ্কার করে তখনকার মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।

    তবে ২০০১ সালে স্থানীয় বিএনপি ও পুলিশের সহায়তায় হামলা চালিয়ে আজিজুল হক পুনরায় মাদ্রাসাটি দখল করেন। সেই হামলায় নেতৃত্ব দেন মামুনুল হক এবং মাহফুজুল হক। চারদলীয় জোটের এমপি মুফতি শহীদুল ইসলামও ওই ঘটনায় তাদের সাথে ছিলেন।

    মাদ্রাসা দখল করার পরে এর প্রতিষ্ঠাতা শুধু পরিচালনা পর্ষদ নয় বরং মাদ্রাসা থেকেই বিতারিত করে মামুনুল-মাহফুজুল-শহীদুল গোষ্ঠী। একইসাথে সরকারের অনুমোদিত পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদেরকেও মাদ্রাসা থেকে বিতাড়িত করে এই অবৈধ দখলদার গোষ্ঠী।

    আদালতের আদেশ যেখানে উপেক্ষিত

    ২০০১ সালের অক্টোবরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসে। এর এক মাসের মধ্যে আজিজুল হক আবদুল মালেককে প্রধান করে ৯ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি করেন।

    সেই কমিটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা করে বিতাড়িত মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি। ঢাকাস্থ জেলা জজ আদালতে।সেই মামলার (নম্বর ৪১০/২০০১) রায় বিতাড়িত কমিটির বিপক্ষে যায় গেলে বিতাড়িত কমিটি আজিজুল হকের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যায়।

    এরপরে, ২০১২ সালে হাইকোর্ট বিতাড়িত কমিটির পক্ষে রায় দেয়। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে সেই আপিল ২০১৪ সালে খারিজ করেন আদালত।

    এর মধ্যেই ২০১২ সালের আগস্টে আজিজুল হকের মৃত্যুর পর থেকে তার ছেলেদের নিয়ন্ত্রণেই চলছে মোহাম্মদপুরের মাদ্রাসাটি।

    আদালতে মামলা চলার মধ্যেই ওয়াকফ প্রশাসন থেকে নিবন্ধন পাওয়ার পরে ২০০৬ সালে ২১ সদস্যের নতুন কমিটি গঠন করে মাদ্রাসার বিতাড়িত পুরনো কমিটি। নতুন কমিটির সভাপতি আহমদ ফজলুর রহমান জমির বৈধ কাগজের ভিত্তিতে প্রশাসনে আবেদন করেন যেন, আজিজুল হকের অবৈধ কমিটিকে উচ্ছেদ করা হয়। তাদের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতেও ওয়াকফ প্রশাসনে আবেদন করেন তিনি।

    এরপরে ২০০৭ সালে মাদ্রাসার অবৈধ কমিটিকে উচ্ছেদ করতে ওয়াকফ প্রশাসন জেলা প্রশাসক’কে চিঠি দিয়েছিল। পরে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অবৈধ মাদ্রাসা কমিটিকে উচ্ছেদের জন্য ২০০৮ ও ২০০৯ সালে দুইবার জেলা প্রশাসন থেকে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়। কিন্তু, তারা উচ্ছেদের কোনো পদক্ষেপ নেননি।

    অভিযোগ আছে, আওয়ামীলীগের এক প্রভাবশালী নেতার সহযোগীতার জন্যে ঐ সময় উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে একাধিক সুত্রে।

    © এই নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
    / month
    placeholder text

    সর্বশেষ

    রাজনীাত

    বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্য বিদেশে হাসপাতাল খোজা হচ্ছে

    প্রভাতী সংবাদ ডেস্ক: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্যে আবেদন করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা মনে করেন আবেদনে সরকারের দিক থেকে ইতিবাচক...

    আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ

    আরো পড়ুন

    Leave a reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    spot_imgspot_img