নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
হেফাজত কান্ডে বাবুনগরী বিরোধী জোটে যোগ দিলেন মধুপুরের পীর আবদুল হামিদ। রবিবার হেফাজতের প্রয়াত আমির শাহ আমদের শফীর অনুসারীদের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলেন তিনি।
ভেঙে দেয়া কমিটির নায়েবে আমির মধুপুরের পীর আবুদল হামিদ সেই সংবাদ সম্মেলনে যোগ দিয়ে বাবুনগরীকে গ্রেপ্তার ও আহ্বায়ক কমিটিকে অবৈধ ঘোষণার দাবির প্রতি একাত্মতা জানিয়েছেন। তবে তিনি কোনো বক্তব্য দেননি।
বরং আগেই জানানো হয়েছে, মধুপুরের পীর কোনো বক্তব্য দেবেন না। প্রশ্নের সব জবাবই দেন হেফাজতে শফীর নেতৃত্বাধীন কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ।
মধুপুরের পীরের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে। গত মার্চ ও এপ্রিলে হেফাজতের সহিংসতায় তার মধুপুর হাফেজিয়া আসলামিয়া মাদ্রাসা মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকদেরও অংশগ্রহণ ছিল। মধুপুরের পীর সেদিন পুলিশের গুলিতে আহতও হন।
গত ২৮ মার্চের হরতালে মসজিদের মাইক ব্যবহার করে স্থানীয়দের জড়ো করে সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে থানা থেকে বের করে পেটানো হয়।
এই ঘটনায় করা মামলায় মধুপুরের পীরের দুই ছেলে ও জামাতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আসামি আরও তিন ছেলে। তারা পলাতক।
মধুপুরের পীর কোনো চাপের মুখে বা ছেলেদের বাঁচাতে পক্ষ ত্যাগ করেছেন কি না, এই প্রশ্নে মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘আমি মনে করি না, মধুপুরের পীর (আবুদল হামিদ) মতো মানুষ চাপের মধ্যে নতী স্বীকার করে তার অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। তিনি মেরুদণ্ড সোজা করে চলতে পারেন।’
পরক্ষণে শফীপন্থি এই হেফাজত নেতা যেটা বলেন, তার অর্থ হচ্ছে মধুপুরের পীর আগে থেকেই তাদের পক্ষের মানুষ।
ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘আহমদ শফীর যখন হাসপাতালে ছিলেন তখন থেকেই তিনি আমাদের ধারার সঙ্গেই আছেন। আপনারা শুনে অবাগ হবেন, বাবুনগরীর কমিটিতে অনেককে পদ দেয়া হয়েছিল, যারা নিজেরাও জানত না।’
গত ২৮ মে মধুপুরের পীর একটি ঘোষণা পাঠান গণমাধ্যমে। এতে তিনি বলেন, ‘আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করছি, হেফাজতে ইসলামের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই এবং নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির প্রতিও আমার কোনো সমর্থন নেই। এই কমিটিকে আমি বৈধ মনে করি না।’
মার্চের শেষে সিরাজদিখানে তার মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকদের সহিংসতার ঘটনাতেও দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
মার্চের শেষে হেফাজতের হরতালে সহিংসতায় অংশগ্রহণ ছিল মধুপুরের পীরেরও। সেদিন তিনি আহতও হন
মধুপুরের পীর লেখেন, ‘আমি হেফাজতে ইসলামের মোদিবিরোধী কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে মুন্সীগঞ্জের মধুপুরে অপ্রত্যাশিত ঘটনাবলীর জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। বিশেষ করে আমার অত্যন্ত স্নেহভাজন মেজর জেনারেল আবুল কালাম হুমায়ুনের আম্মার আহত হওয়ার খবর শুনে অত্যন্ত দুঃখিত ও ব্যথিত হয়েছি। বিশেষ করে মেজর জেনারেল সাহেবের বাড়িঘরসহ অন্যান্যদের বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
গত বছরের সেপ্টেম্বরে হেফাজতের সদরদপ্তর চট্টগ্রাম হাটজাহারী মাদ্রাসায় ব্যাপক হাঙ্গামার পর হাসপাতালে মারা যান আল্লামা শফী। অভিযোগ উঠে, বাবুনগরী ও মামুনুল হকের অনুসারীরাই এই হাঙ্গামার সঙ্গে জড়িত এবং তারা আল্লামা শফীর চিকিৎসাতেও বাধা দিয়েছে।
গত নভেম্বরে হেফাজতের যে সম্মেলন হয়, তাতে শফীর অনুসারীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। আর হাঙ্গামার পর থেকেই প্রয়াত আমিরের ছেলে আনাস মাদানীকে হাটহাজারী মাদ্রাসায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন বাবুনগরীরা।
সম্মেলনের আগে শফীর শ্যালক মাওলানা মঈন উদ্দীন, আগের কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাঈনুদ্দিন রুহী সংবাদ সম্মেলন করে হেফাজতের কাউন্সিল স্থগিতের দাবি জানান। তারা অভিযোগ করেন, বিএনপি-জামায়াতের অনুসারীরা হেফাজতকে দখল করতে চাইছে।
পরে সম্মেলন শেষে ১৫১ সদস্যের যে কমিটি ঘোষণা করা হয়, তাতে শফীপন্থি সবাইকে বাদ দেয়া হয়। আর কমিটিতে বিএনপি-জামায়াতের জোটের শরিক কওমিমাদ্রাসাকেন্দ্রিক বিভিন্ন দলের নেতাদের রাখা হয়।
২০১৩ সালের মে সাসে শাপলা চত্বরের তাণ্ডবের পর থেকে হেফাজত ধীরে ধীরে নিজেদেরকে সরকারের কাছাকাছি নিয়ে আসলেও বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন কমিটি হাঁটে উল্টোপথে। দৃশ্যত তারা সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়ায়। এক পর্যায়ে এমন বক্তব্যও আসে যে সরকারকে তাদের কথা শুনেই দেশ চালাতে হবে। নইলে দেশে সরকার পতনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হবে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে ভারতের সরকার প্রধান নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরোধিতা করে কর্মসূচিতে সহিংসতার পরেও হেফাজত নেতাদের কিছু বলেনি সরকার।
তবে এপ্রিলের শুরুতে মামুনুল হক নারায়ণগঞ্জের রয়্যাল রিসোর্টে নারী নিয়ে অবরুদ্ধ হওয়ার পর হেফাজত আবার তাণ্ডব শুরু করলে পরিস্থিতি ঘুরে যায়।
এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হয় গ্রেপ্তার অভিযান। নায়েবে আমির, যুগ্ম মহাসচিব থেকে থেকে শুরু করে শীর্ষস্থানীয় বহু নেতা গ্রেপ্তার হন।
পরে হেফাজত সমঝোতার চেষ্টা করে। আর এর অংশ হিসেবে ২৫ এপ্রিল এক ভিডিওবার্তায় হেফাজতের কমিটি ভেঙে দেন বাবুনগরী। ওই রাতেই আবার নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করার কথা জানানো হয়।
এরপর ঘোষণা হয়, কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা আর রাজনীতি করবে না। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত কেউ হেফাজতের সদস্য হবেন না। যদিও আহ্বায়ক কমিটি এখনও পূর্ণাঙ্গ হয়নি। আর তাদের দৃশ্যমান কোনো তৎপরতাও নেই।