নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশে ডলার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কমায় খোলাবাজারে বাড়ছে টাকার দাম। আকাশচুম্বী হয়ে ওঠা ডলারের দাম দিন দিন কমছে। তারপরও এখন ক্রেতা কম ডলারের।
ইতোমধ্যে খোলাবাজারে ডলারের দাম ১০৮ টাকায় নেমে এসেছে। বাজারসংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, আগামী সপ্তাহের মধ্যে তা ১০৩ বা ১০৫ টাকার মধ্যে নেমে আসবে।
সাম্প্রতিক সময়ে হঠাৎ করেই ডলারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত ডলার পাননি গ্রাহকরা। তাই বাধ্য হয়েই খোলাবাজার থেকে ডলার কিনতে হতো তাদের। এই সুযোগকে কাজে লাগায় ডলার সিন্ডিকেট চক্র। হু হু করে বেড়েছে ডলারের দাম। খোলা বাজারের সিন্ডিকেটের ফাঁদে পা দিয়ে অনেকেই চড়া মূল্যে ডলার কেনেন।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে ডলারের চাহিদা বাড়ায় একটি চক্র তা নিয়ে কারসাজি করে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশ কিছু পদক্ষেপের ফলে তাদের দৌরাত্ম্য শেষের পথে বলে মনে করছেন তারা।
ডলারের সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কিছু সুযোগসন্ধানী ব্যক্তি, ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ হাউজের যোগসাজশের তথ্য পায় বাংলাদেশ ব্যাংক। সুযোগসন্ধানী ব্যাংকার ও দালালচক্রের কারণে ৯৫ টাকার ডলার ১২০ টাকায় কিনতে বাধ্য হন সাধারণ ক্রেতারা। কারসাজিতে জড়িত থাকার দায়ে ছয়টি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠিও দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এদিকে, ডলার নিয়ে কারসাজিতে গড়ে ওঠা চক্রকে ধরতে তৎপর বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। তবে দালালদের দৌরাত্ম্য থামেনি। ক্রেতারা এক্সচেঞ্জ হাউজে যাওয়ার আগেই দালালচক্র তাদের ফাঁদে ফেলেন। বিভিন্ন প্রলোভনে তাদের কাছে ডলার বিক্রি করেন। অভিযোগ রয়েছে, দালালচক্রের সদস্যদের সঙ্গে এক্সচেঞ্জ হাউজের মালিক ও কর্মচারীদের সংযোগ রয়েছে।
খোলাবাজারে ডলারের লাগামহীন মূল্য নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই মধ্যে মানি এক্সচেঞ্জ হাউজ ও ব্যাংকগুলোকে ডলার কেনাবেচার সীমা বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মানি এক্সচেঞ্জ যে দামে ডলার কিনবে, তার চেয়ে এক থেকে সর্বোচ্চ দেড় টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে। আর ব্যাংক ডলার বিক্রি করবে এক টাকা বেশি দরে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এ পদক্ষেপের ফলে ডলারের ঊর্ধ্বগতি থামে। কমতে থাকে খোলাবাজারে ডলারের দাম। মঙ্গলবার খোলাবাজারে প্রতি ডলারের দাম ১১৪ টাকা ছিল। দুই দিনের ব্যবধানে তা কমে বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) ১০৮ থেকে ১০৯ টাকায় নেমে আসে।
খোলাবাজারের ডলার বিক্রেতারা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ি আরোপের কারণে বাজার বাড়ি খেয়েছে (দাম কমে গেছে)। যেভাবে টাকার মান বাড়ছে অর্থাৎ ডলারের দাম কমছে, আগামী সপ্তাহের মধ্যে ১০৫ টাকায় নেমে আসতে পারে।
রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় খুচরা বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রেতা হাসান জাবেদ জানান, এখন প্রতিদিন বিভিন্ন সংস্থা অভিযান চালাচ্ছে। একই সঙ্গে ডলার সরবরাহ বেড়েছে, দামও কমেছে। সেই অনুপাতে ক্রেতা নেই।
আরেক ব্যবসায়ী জুয়েল বলেন, ‘বাজারের অবস্থা বুঝে কিছু (ডলার) কিনে রেখেছিলাম। এখন ডলারের মান হারাচ্ছে, ক্রেতাও নেই। বাজারে এখন ডলারের ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতা বেশি। আজ ১০৯ টাকাতেও ক্রেতা নেই, অথচ আমার ১১৩ টাকায় কেনা রয়েছে। এভাবে দাম কমলে আগামী সপ্তাহে ১০৫-১০৬ টাকায় নেমে আসবে।’
এদিকে আন্তঃব্যাংকে এখন প্রতি ডলার ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এ দামেই ডলার কিনছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ‘সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রতিদিনই রিজার্ভ থেকে ডলার ছাড়া হচ্ছে। আশা করছি কম সময়ের মধ্যেই ডলারের (সংকট) পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘মানি এক্সচেঞ্জগুলোকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর গড় রেট থেকে এক টাকা বেশি দামে ডলার কিনে সর্বোচ্চ দেড় টাকা মুনাফা করতে বলা হয়েছে। এর আগে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সর্বোচ্চ মুনাফার সীমা এক টাকা বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিয়ম না মানলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ডলারের সংকট কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তার ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে উল্লেখ করে মুখপাত্র বলেন, ‘আশা করছি শিগগিরই বাজার স্থিতিশীল হয়ে যাবে।’
ডলারের বাজার অস্থিতিশীল করার অভিযোগে সম্প্রতি দেশি-বিদেশি ছয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) ব্যাখ্যা তলব (নোটিশ) করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো- ডাচ্-বাংলা, সাউথ ইস্ট, প্রাইম, দি সিটি, ব্র্যাক ও বিদেশি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।
গত বুধবার এসব ব্যাংকের এমডিদের এ-সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়। এর আগে বাজার অস্থিতিশীল করে অতিরিক্ত মুনাফা করার অভিযোগে এসব ব্যাংকের ট্রেজারি-প্রধানদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
প্রতি মুহূর্তের খবর পেতে ফলো করুন আমাদের Google News, Facebook, Twitter, Linkedin এবং Instagram পেজ