প্রভাতী সংবাদ ডেস্ক:
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার কারণে নিষেধাজ্ঞা আসছে একের পর এক । মস্কোকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করতে অর্থনৈতিক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বহু দেশ।
এরই মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়ে রাশিয়া ছেড়েছে অসংখ্য করপোরেট প্রতিষ্ঠান। বিনিয়োগেও মস্কোকে না করছে অনেকেই। সর্বশেষ গতকাল বোয়িং, ইনি, এক্সনমোবিলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো সেখানে ব্যবসা বন্ধের ঘোষণা দেওয়ায় করপোরেট বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে রাশিয়া। খবর সিএনএন ও এএফপির।
গতকাল বিশ্বের শীর্ষ জ্বালানি ও শিপিং প্রতিষ্ঠান ইনি, এক্সনমোবিল ও বোয়িং রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা না করার ঘোষণা দেয়। এর আগে মঙ্গলবার অন্যতম শীর্ষ শিপিং করপোরেশন মায়ের্স্ক মস্কোর সঙ্গে কনটেইনার পরিষেবা স্থগিত করে। নরওয়ের এই প্রতিষ্ঠান দেশটির জ্বালানি ও পণ্য পরিবহনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এ ছাড়া ইউক্রেনে হামলার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত নাইকি রাশিয়াতে তাদের পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। রাশিয়ায় অনলাইন শপিংয়ে নাইকির পণ্য ক্রয় করা যাচ্ছে না।
এর আগে রাশিয়ায় সব ধরনের পণ্য বিক্রি বন্ধের ঘোষণা দেয় মার্কিন বহুজাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল। রাশিয়ায় অ্যাপল পে, অ্যাপল ম্যাপের মতো বেশ কিছু সেবার ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা আনা হয়েছে।
এমনকি গুগল তাদের ফিচার থেকে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যম আরটিকেও সরিয়ে ফেলেছে। এর পাশাপাশি অ্যামাজনও রাশিয়াকে বর্জন করেছে।
এ ছাড়া জার্মানির রাসায়নিক উৎপাদন প্রতিষ্ঠান বিএএসএফ, ব্রিটিশ তেল কোম্পানি বিপি, কোকা-কোলা এইচবিসি, ফরাসি দই উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ড্যানোন, গ্যাস পরিষেবা ইঞ্জি, জার্মানির মেট্রো, সুইজারল্যান্ডের নেসলে, ফরাসি গাড়ি নির্মাতা রেনল্ট, জ্বালানি প্রতিষ্ঠান টোটালএনার্জিস, ফাস্টফুড ম্যাকডোনাল্ডস, মন্ডেলেজ, জাপানি গাড়ি নির্মাতা মিতসুবিশি, টয়োটার মতো প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে রাশিয়াকে বর্জন করেছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার কারণে বিভিন্ন দেশে বিপাকে পড়েছে রুশ কোম্পানিগুলো। এরই মধ্যে বাধার মুখে পড়ে মঙ্গলবার দেশটির বৃহত্তম ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান এসবার ব্যাংক ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপের বাজার ছাড়ার।
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ জ্বালানি সরবরাহকারী দেশ রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় বিশ্ববাজারে তেলের দাম হুহু করে বাড়ছে। গতকাল এটি ১১০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।
এমন পরিস্থিতিতে এক বৈঠকের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘আমি ঘোষণা করছি যে আরও ৩০টি দেশের সঙ্গে যৌথভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে ৬০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল জোগান দেওয়া হবে। প্রয়োজনে জোগান আরও বাড়াতে প্রস্তুত ওয়াশিংটন।’
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। এরপর চলছে ভয়ংকর লড়াই। এমন বাস্তবতায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভদ্মাদিমির পুতিনকে বাগে আনতে অন্য আর্থিক নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংককে আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেনের ‘সুইফট’ ব্যবস্থা থেকে বাদ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এরই মধ্যে রাশিয়ায় যারা বিনিয়োগ করেছিল, তারা এখন ওই বিনিয়োগ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে। এরপরই এ প্রক্রিয়া আটকাতে তৎপর হয়েছে রাশিয়া।
এদিকে, মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় রাশিয়ার সব কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করেছেন বাইডেন। মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, মার্কিন আকাশসীমার ভেতর ব্যক্তিগত বা বাণিজ্যিকভাবে চালিত সব রুশ বিমান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
তবে রাশিয়া থেকে ইউরেনিয়াম আমদানি অব্যাহত রাখতে চেষ্টা চালাচ্ছে মার্কিন কোম্পানিগুলো। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে মার্কিন পারমাণবিক বিদ্যুৎ খাত-সংশ্নিষ্ট কোম্পানিগুলো ব্যাপক তদবির করছে।