যশোর প্রতিনিধি:
যশোরের চৌগাছার সীমান্তবর্তী ধুলিয়ানী বাজারের একটি মসজিদ ঘিরে গ্রামের দুইপক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এতে নারীসহ উভয় পক্ষের দশজন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। আহতদের চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। রোববার মাগরিবের নামাজের সময় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।
এলাকাবাসী ও আহতের স্বজনরা জানিয়েছেন, ধুলিয়ানী বাজারে দীর্ঘ দিনের একটি মসজিদ রয়েছে। এর ইমাম মাওলানা মমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ এনে তাকে বাদ দেন। পরবর্তীতে অভিযোগের কোনো সত্যতা না পাওয়ায় মুসল্লিরা রাগে ক্ষোভে ওই মসজিদে নামাজ আদায় করা বাদ দেন।
এক পর্যায়ে গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিয়ার রহমান নতুন মসজিদ নির্মাণে বাজারের পাশেই দুই শতক জমি দান করেন এবং সেখানে নতুন মসজিদ নির্মাণ করে পূর্বের ইমামকে নিয়োগ দিয়ে সেখানে নিয়মিত নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এ ঘটনায় ক্ষুব্দ হয় প্রতিপক্ষ সামছুল হকসহ তার অনুসারীরা। রোববার নতুন মসজিদে মুসল্লিরা মাগরিবের নামাজ পড়তে দাঁড়ান। সালাম ফেরানোর পর পরই প্রতিপক্ষ সামছুলের নেতৃত্বে তার অনুসারী বলে পরিচিত আবু সামা, মিলন হোসেন, আশা, ইলিয়াস হোসেন, হাসানসহ ১০/১২ জন লোহার রড, সাবল, হাতুড়ি নিয়ে মুসল্লিদের ওপর আকস্মিক হামলা চালায়।
হামলায় হতচকিত মুসল্লিদের চিৎকারে পাশের বাড়ি হতে নারীরা ছুটে এলে তাদের ওপরও হামলা করা হয় বলে অভিযোগ করেন আহতদের স্বজনরা। এসময় সংঘর্ষে এক পক্ষের সামছুল আলী (৫০), অপর পক্ষের মুক্তিযোদ্ধা শফিয়ার রহমান (৭১), জাহান আলী (৪০), জাহান আলীর স্ত্রী সোনাভান (৩৫), আতিয়ার রহমানের স্ত্রী জোসনা বেগম (৪০), হবিবর রহমান (৫৫), আল আমিনের স্ত্রী নয়নতারা (৪২), মনিরুল ইসলামের স্ত্রী রেখা বেগমসহ (৪০) অন্তত দশজন আহত হয়ন। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
আহত সামছুল বিশ্বাস জানান, তারা (নতুন মসজিদের প্রতিষ্ঠাতারা) পুরাতন মসজিদকে ধ্বংস কারার চক্রান্ত করছে। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষরা হামলা করে তাকে আহত করেন।
অপর পক্ষের আহত মুক্তিযোদ্ধা শফিয়ার রহমান বলেন, ‘একজন নিরাপদ মানুষকে (ইমাম) বিনা কারণে মসজিদ থেকে বিতাড়িত করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। গ্রামের মুসল্লিদের দাবিতে আমি দুই শতক জমি দিয়েছি মসজিদ করতে। এতে ক্ষুব্দ হয়ে সামছুল ও তার লোকজন নামাজ আদায় করার সময় হামলা করে বাড়ির মেয়ে-ছেলেসহ আমাদেরকে আহত করেছে’। এর সুষ্ঠু তদন্ত করে তিনি বিচারের দাবি করেন।
চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার আসিফ রায়হান বলেন, ‘অধিকাংশের আঘাত বেশ গুরুতর। এখন প্রাথমিক চিকিৎসা চলছে, এরপর আহতদের অবস্থা বুঝে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হয়।
ধুলিয়ানী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমান খাঁ জানান, মসজিদ নিয়ে দ্বন্দ্বে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের ১০/১২ জন আহত হয়েছেন বলে শুনেছি। তবে এলাকার পরিবেশ পুলিশের হস্তক্ষেপে শান্ত আছে।
চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, ‘ঘটনার সাথে সাথে সংবাদ পেয়ে পুলিশ যায়। পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। অভিযোগ পেলে সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে’।