নিজস্ব প্রতিবেদক
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ আগুনে দুই নারী নিহত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার এ কারখানায় এ অগ্নিকাণ্ড বিকালের দিকে সুত্রপাত হয়ে সন্ধ্যা নাগাদ ভয়বহ রুপ নেয়।
সাড়ে ৪ ঘণ্টার চেষ্টায় রাত এগারোটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
অগ্নিকাণ্ডে স্বপ্না রানী (৪৫) ও মিনা আক্তার (৩৩) নামে কারখানার কর্মরত দুই নারী নিহত হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও ৫০ জনের বেশি।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এস এম সাহেদ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুজনের মৃত্যুসহ হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আহতদের উদ্ধার করে রুপগঞ্জের ইউএস-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর আহতদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ছয়জন’কে ভর্তি করা হয়েছে।
এ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ডেমড়া, কাঞ্চনসহ ফায়ার সার্ভিসের ১৮ টি ইউনিট কাজ করছে।
নিহত দুই নারীর মধ্যে সিলেট জেলার যতি সরকারের স্ত্রী স্বপ্না রানী ও উপজেলার গোলাকান্দাইল নতুনবাজার এলাকার হারুন মিয়ার স্ত্রী মিনা আক্তার।
এক শ্রমিক বলেন, ‘সেজান জুসের এ কারখানায় প্রায় সাত হাজার শ্রমিক কর্মচারী কাজ করে।
সাততলা ভবনের এ কারখানাটির নিচতলার একটি ফ্লোরের কার্টন থেকে হঠাৎ আগুনের সূত্রপাত হয়। এসময় আগুন বাড়তে থাকে, এক পর্যায়ে আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে ‘
এসময় কালো ধোঁয়াতে কারখানা সহ পুরো এলাকা অন্ধকার হয়ে যায়। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা ছোটাছুটি শুরু করে, কেউ কেউ ভবনের ছাদেও অবস্থান নেন।
অনেকে এসময় আতঙ্কিত হয়ে ছাদ থেকে লাফ দেন। এসময় ঘটনাস্থলেই রানী ও মিনা আক্তার নামের দুই নারী নিহত হন।
নিহত স্বপ্না রানীর মেয়ে শ্রমিক বিশা রানী বলেন, ‘মা ভিতরে আটকে পড়ে মারা গেছেন।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আব্দুল আল আরিফিন বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। সাথে সাথে আটকেপড়া শ্রমিকদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।’
ভেতরে এখনও অনেক শ্রমিক আটকে আছেন। কয়েকজনকে পুড়তেও দেখা গেছে বলে দাবী শ্রমিকদের।
ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মো. তানহারুল ইসলাম বলেন, ‘হাশেম ফুড বেভারেজ কোম্পানির কারখানার নিচতলার কার্টনের ফ্যাক্টরি থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে।
ডেমরা, কাঞ্চন, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট সাড়ে ৪ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে।’
তবে কীভাবে আগুন লেগেছে তা জানা যায়নি বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মো. তানহারুল ইসলাম।
‘কারখানায় আটকা পড়া সব শ্রমিককে ইতিমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত শুরু করবে ফায়ার সার্ভিস, তারপরেই জানা যাবে আগুনের সুত্রপাত’- যোগ করেন এই কর্মকর্তা।
রূপগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আগুন লাগার পর দগ্ধ দুই নারীকে হাসপাতালে শ্রমিকরা নিয়ে যাওয়ার পরে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।’
ইউএস-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘নিহতের স্বজনরা হাসপাতালে রয়েছেন।
ওই হাসপাতালে আরও ২১ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর আহত অন্যদের অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন পরিবহনে রাজধানীর একাধিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেজান জুস কারখানার সাততলা ভবনটির নিচতলায় কার্টন ফ্যাক্টরি থেকে আগুনের সূত্রপাত। আগুনের লেলিহান শিখা একপর্যায়ে পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে।