More

    সেই অস্ত্রধারীর পরিচয় মিলেছে

    প্রভাতী সংবাদ ডেস্ক:

    কয়েক দিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নৃশংস ভিডিওচিত্রে নিউমার্কেট এলাকার দোকানকর্মী ও ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সধ্যে কুরিয়ারকর্মী নাহিদ মিয়ার নিস্তেজ দেহ পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। যাকে একের পর এক ধারালো অস্ত্রের কোপ দেয়া হয়েছিল।

    যিনি এই নৃশংস কাজটি করছিলেন তিনি কে? কালো হেলমেট ও ধূসর টি-শার্ট পরা ধারালো অস্ত্রধারী সেই ছেলেটির পরিচয় কি? এটা নিয়ে আজ কয়েকদিন ধরেই আলোচনায় ছিল বিষয়টি। অবশেষে তার পরিচয় মিলেছে।

    অস্ত্রধারী সেই ছেলেটি ঢাকা কলেজের ছাত্র নাম জাকির হোসেন। গত মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটে। সে সময় নাহিদ মিয়াকে প্রথমে পিটিয়ে ফুটপাতে ফেলে রাখেন কাইয়ুম।

    ওই সময়ে তার পরনে নীল-সাদা চেকের টি-শার্ট ছিল। এর পরই হলুদ হেলমেট ও লাল গেঞ্জি পরা এক তরুণ নাহিদকে ইট দিয়ে আঘাত করে। তার নাম সুজন ইসলাম বলে জানা গেছে। দুজনই ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও শিক্ষার্থীদের সূত্র সন্দেহভাজন ওই দুজনের পরিচয় শনাক্ত করেছে।

    সংঘর্ষের মধ্যে লাঠি ও অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করলে একপর্যায়ে ঢাকা কলেজের উল্টোপাশে নুরজাহান মার্কেটের ফুটপাতে পড়ে যান নাহিদ। সেখানে এক যুবক তাকে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে। আরেকজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকে।

    একই সময় একজন অস্ত্রধারীকে নিবৃত করতে দেখা যায়। দিনদুপুরে ঢাকার সড়কে ওই নৃশংসতার ভিডিও ও ছবি ছড়িয়ে পড়লে মানুষের বিবেককে নাড়া দেয়, শুরু হয় কঠোর সমালোচনা। ঘটনায় জড়িতদের ছবি প্রকাশ পেলেও তারা কোন পক্ষের, তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না এতদিন। শেষ পর্যন্ত অবয়ব ও পোশাক দেখে তিনজনের পরিচয় বেরিয়ে এলো।

    ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পুরো সংঘর্ষের সময় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়াও ব্যবসায়ীদের পক্ষের দিকেও ধারালো অস্ত্র ছিল। এই অস্ত্রধারীদের প্রায় সবার মাথায় ছিল হেলমেট।

    এ জন্য এদের শনাক্ত করতে সময় লাগছে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১২ জনকে ছবি দেখে শনাক্ত করা হয়েছে। এখন প্রযুক্তিগত তদন্তের মাধ্যমে ঘটনাস্থলে তারা উপস্থিত ছিলেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে।’

    সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সংঘর্ষের সময়ে ঢাকা কলেজের হয়ে অতিতৎপর ছিল জসিম, জুলফিকার ও ফিরোজ নামে তিন ছাত্রনেতার অনুসারীরা। জসিম নেত্রকোণার এবং ফিরোজ ও জুলফিকার বরিশাল অঞ্চলের। ক্যাম্পাসে কমিটি না থাকলেও তারা তিনজনই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয়।

    সন্দেহভাজন তিনজনের পরিচয় পাওয়ার পর ঢাকা কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হিংস্রতার সময়ে ছবি প্রকাশ পাওয়া জাকির, কাইয়ুম ও সুজনও ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত। তারা কলেজ হোস্টেলে থাকে। তবে নাহিদের ওপর নৃশংস হামলার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে তাদের আর ক্যাম্পাসে দেখা যায়নি।

    তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নাহিদের ওপর অস্ত্রধারী হামলাকারীকে অনেকে ঢাকা কলেজের ছাত্র ফজলে রাব্বী হিসেবে চিহ্নিত করলেও তদন্তে তাকে ঘটনার সময় সেখানে দেখা যায়নি। তার অবস্থান ছিল ঢাকার বাইরে।

    উল্লেখ্য, নিউমার্কেটের খাবারের দুই দোকানের কর্মচারীদের দ্বন্দ্বে ঢাকা কলেজের একদল শিক্ষার্থী জড়িয়ে যায়। ওই ঘটনার জেরে গত সোমবার (১৮ এপ্রিল) মধ্যরাতে ব্যবসায়ী-দোকানকর্মী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়, যা পরের দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে। এতে উভয় পক্ষের শতাধিক আহত হলেও কুরিয়ার সার্ভিস কর্মী নাহিদ মিয়া ও দোকানকর্মী মোহাম্মদ মুরসালিন নিহত হন। মোশারফ হোসেন নামের ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী এখনও আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া চার মামলার মধ্যে হত্যাকাণ্ডের দুটি মামলা ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) তদন্ত করছে।

    তদন্ত-সংশ্নিষ্ট সূত্র বলছে, ওই সংঘর্ষের মধ্যে হেলমেট পরিহিত কয়েকজনকে বেশ তৎপর দেখা যায়। তাদের অনেকের হাতে ছিল ধারালো অস্ত্র, রড ও লাঠি। এদের অনেকেই সংঘর্ষের পুরোভাগে ছিল। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের ছবি দেখা গেলেও গতকাল শনিবার পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।

    নাহিদ নিহত হওয়ার পর বলা হচ্ছিল, তিনি পথচারী। এলিফ্যান্ট রোডে নিজের কর্মস্থলে যাওয়ার পথে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে প্রাণ হারান। তবে গত দু’দিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা গেছে, নাহিদ দোকানকর্মীদের পক্ষে সক্রিয় ছিলেন।

    দুটি হত্যা মামলার তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা ডিবির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার এইচ এম আজিমুল হক বলেন, ‘সংঘর্ষের সময়ে ২ জনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যায় জড়িতদের শনাক্তে একাধিক দল কাজ করছে।

    সংঘর্ষে দুই পক্ষের শত শত ব্যক্তি অংশ নেওয়ায় শনাক্ত করতে একটু সময় লাগছে। তবে কোনো নির্দোষ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে জন্য কাজটি সতর্কতার সঙ্গে করা হচ্ছে।’

    ডিবির তদন্ত-সংশ্নিষ্ট অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ছাড়াও সিসিটিভি ফুটেজ থেকে ছবি নিয়ে দুই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ জন্য প্রত্যক্ষদর্শীদের সেই ছবিগুলো দেখানো হয়েছে।

    অনেকে দেহের গঠন, শরীরের উচ্চতা ও পোশাক দেখে শনাক্তে সহায়তা করছেন। তবে সরাসরি জড়িতদের প্রায় সবাই হেলমেট পরা থাকায় পুরোপুরি শনাক্ত করা যাচ্ছে না।

    ওই কর্মকর্তা বলেন, ছবি দেখালে ধারণা থেকে একেকজন ভিন্ন ভিন্ন নাম বলছেন। তবে তারা সেই নাম নিয়েই প্রযুক্তিগত তদন্ত করে দেখছেন, ঘটনার সময় শনাক্ত হওয়া ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত ছিলেন কিনা।

    অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, তারা ফুটেজ বিশ্নেষণ করে দেখেছেন, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল। পাশাপাশি দোকানকর্মীদের হাতেও দেখা গেছে অস্ত্র।

    এখন নাহিদ ও মুরসালিন ঠিক কোথায় হামলার শিকার হয়েছিলেন, সেই জায়গাটা ঠিকভাবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। এরপর পর্যবেক্ষণ করা হবে, ঘটনাস্থলটি কোন পক্ষের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

    © এই নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
    / month
    placeholder text

    সর্বশেষ

    রাজনীাত

    বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্য বিদেশে হাসপাতাল খোজা হচ্ছে

    প্রভাতী সংবাদ ডেস্ক: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্যে আবেদন করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা মনে করেন আবেদনে সরকারের দিক থেকে ইতিবাচক...

    আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ

    আরো পড়ুন

    Leave a reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    spot_imgspot_img