জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছন, ‘অফিস-আদালত, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, রপ্তানিমুখী- সবকিছু বন্ধ থাকবে তাই এটা এ পর্যন্ত যতগুলো লকডাউন হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে কঠোর হবে। এটি বাস্তবায়নে মাঠে পুলিশের পাশাপাশি থাকবে বিজিবি ও সেনাসদস্যরা ।’
শিশির ওয়াহিদ, ঢাকা:
ইদুল আজহার ছুটি শেষে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শুক্রবার (২৩ জুলাই) থেকেই দেশজুড়ে ফের শুরু হচ্ছে কঠোর ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন। এবার পূর্বের চাইতে আরো কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে লকডাউন পরিস্থিতি।
তবে প্রতিবারের মতো এবারো জরুরি সেবাকে আরোপিত বিধিনিষেধের বাইরে রাখা হয়েছে। ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনা, চিকিৎসেবা, মৃতদেহ সৎকারের মতো বিষয়গুলো রাখা হয়েছে অতি জরুরি সেবা খাতে। এছাড়াও জরুরি সেবার মধ্যে যারা আছেন, তাদেরও চিহ্নিত করেছে সরকার।
এবারও মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছন, ‘অফিস-আদালত, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, রপ্তানিমুখী- সবকিছু বন্ধ থাকবে তাই এটা এ পর্যন্ত যতগুলো লকডাউন হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে কঠোর হবে। এটি বাস্তবায়নে মাঠে পুলিশের পাশাপাশি থাকবে বিজিবি ও সেনাসদস্যরা ।’
সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায়। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনাবাহিনী কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।
জেলা ম্যজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, পুলিশ, র্যাব, আনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। একইসাথে স্থানীয়ভাবে বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।
বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগগুলো এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ইদুল আজহার আগেই প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছিল, ইদের তৃতীয় দিন ভোর থেকেই ফের দেওয়া হবে ১৪ দিনের বা দুই সপ্তাহের কঠোর লকডাউন, যা শেষ হবে আগামী ৫ আগস্ট ভোরে। একইসাথে বিধিনিষেধের বিষয়গুলো এবং লকডাউনের আওতা মুক্ত জরুরি পরিষেবার বিষয়গুলোও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করে দেওয়া হয়।
লকডাউনে বাইরে বের হওয়ার অনুমতি থাকছে যাদের
কোভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকা নিতে বাড়ির বাইরে আসা যাবে। তবে সঙ্গে রাখতে হবে টিকার রেজিস্ট্রেশন কার্ড। আর আন্তর্জাতিক উড্ডয়ন চালু থাকায় বিদেশগামী যাত্রীদের ভ্রমণের টিকিট দেখানোর শর্তে গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের সুযোগ দেওয়া হবে।
এছাড়াও, জরুরি পরিষেবার সাথে জড়িতদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাড়ির বাইরে আসার অনুমতি দিয়েছে সরকার। এসব পরিষেবার আওতায় কারা রয়েছে, তাদেরকেও চিহ্নিত করা হয়েছে।
এই তালিকায় রয়েছে কৃষিপণ্য ও উপকরণ, ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ, খাদ্যদ্রব্য ও খাদ্যশস্য পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ এর টিকাদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যক্রম, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, জ্বালানি ও ফায়ার সার্ভিস।
টেলিফোন, ইন্টারনেট, গণমাধ্যমের কর্মী ও সাংবাদিক , বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাকসেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালস কর্মী ও পরিবহন।
এ সকল জরুরি অত্যাবশকীয় পণ্য ও সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোর কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র দেখিয়ে যাতায়াত করতে পারবে।
মানুষের নিত্য প্রয়োজনী সামগ্রীর চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত কাঁচাবাজার বা সবজি বাজার ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য বিক্রির ব্যবস্থা রেখেছে সরকার। এ বাজারগুলো কীভাবে পরিচালিত হবে তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসন, বাণিজ্য সংগঠন, ও বাজার কর্তৃপক্ষকে।
এছাড়াও, খাবারের দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রি (অনলাইন/অফলাইনে) করতে পারবে। তবে কোনো ক্রেতাকে বসিয়ে খাওয়ানো যাবে না।
এছাড়া জরুরি পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান, নৌযান, পণ্যবাহী রেল, ফেরিকেও নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে রাখা হয়েছে । সচল থাকবে বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থলবন্দরসহ সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো।
সরকার থেকে বলা হয়েছে, লকডাউনের সময় অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির আসতে পারবে না । নির্দেশনা না মানলে নেওয়া হবে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা।
সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে নৌ চলাচল
এদিকে শুক্রবার থেকে শুরু হতে যাওয়া ১৪ দিনের কঠোর লকডাউনে বন্ধ থাকবে লঞ্চ সহ যাত্রীবাহী নৌ চলাচল। ফেরি চালু থাকবে শুধু পণ্যবাহী গাড়ির জন্য। ফেরিতে যাত্রী উঠতে পারবেনা।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় ১৩ জুলাই জারি করা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বি.আই.ডব্লিউ.টি.এ)।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) বলা হয়েছে, ‘২৩ জুলাই শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ নৌপথে সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌ-যান চলাচল বন্ধ থাকবে। নৌ-যানের মধ্যে রয়েছে লঞ্চ, স্পিডবোট, ট্রলার ও অন্যান্য।’
অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীবাহী নৌ-যানের মালিক, চালক, মাস্টার, কর্মচারী, যাত্রী-সাধারণ ও সংশ্লিষ্ট সকলকে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায়, আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
অন্য আরো একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘২৩ জুলাই সকাল থেকে ফেরিতে যাত্রীবাহী সব ধরনের গাড়ি ও যাত্রী পরিবহন বন্ধ থাকবে। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধু জরুরি পণ্যবাহী গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স পারাপার করা হবে।’
এর আগে, কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে ১ জুলাই থেকে কঠোর বিধিনিষেধ দিয়ে দেশজুড়ে মানুষের অবাধ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার, যা এবার পরিচিতি পেয়েছে শাটডাউন নামে। তবে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ আরো আগে থেকেই বন্ধ ছিল মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায়।
এই পরিস্থিতিতে এবার ইদে বাড়ি যাওয়া অনিশ্চয়তার মধ্যে সরকার হঠাৎ করেই ১৫ জুলাই থেকে আট দিনের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু হয় গণপরিবহন।
সে সময় জানিয়ে দেওয়া হয়, ২৩ জুলাই থেকে আবার বন্ধ হয়ে যাবে মানুষের চলাচল, অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিপণিকেন্দ্র । তবে ২০২০ সালের সাধারণ ছুটি ও চলতি বছরের এপ্রিল থেকে লকডাউন ও ১ জুলাই থেকে শাটডাউনে পোশাক কারখানা বন্ধ না থাকলেও এবার বন্ধ থাকবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়।
অর্থাৎ ইদে বাড়ি গেলে উৎসবের পরদিনই ফিরতে হবে, এমনটাই জানিয়ে দিয়েছিল সরকার। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে ২৭ জুলাই ভোর পর্যন্ত শিথিল থাকবে কঠোর বিধিনিষেধ। আর সেই গুজবে ভর করে এখন ভোগান্তিতে লাখো মানুষ।