নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের নাগরিকদের অপহরণ করে নিয়ে নির্যাতন অভিযোগ উঠেছে ‘আল-ইয়াকিন’ নামে এক সন্ত্রাসী গোষ্ঠির বিরুদ্ধে। সশস্ত্র বাহিনী’টি মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা’দের দ্বারা পরিচালিত।
কক্সবাজার-বান্দরবনের গভীর পাহাড়ি জঙ্গলে বাংলাদেশের নাগরিকদের নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে। এরা আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) সহযোগী শাখা সংগঠন হিসেবে কাজ করে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে এ বাহিনীর। স্থানীয়’রা একে ‘জঙ্গি বাহিনী’ হিসেবে চিহিৃত করছে।
আরও পড়ুন: কে এই রোহিঙ্গা জঙ্গি নেতা আবদুল হাকিম
কক্সবাজার ও বান্দরবনে এদের তিন হাজার সদস্য রয়েছে। নারী সদস্যও রয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক। কক্সবাজার ও টেকনাফের প্রতিটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আছে এদের অবস্থান। তবে কুতুপালং ও বালুখালিতে তাদের সদস্য সংখ্যা বেশি।
নিজ দেশ মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুত হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল দেশটির সেনাবাহিনীর ওপর হামলা। ওই হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)। এখন তারা বাংলাদেশেও আধিপত্য বিস্তার করছে। এছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে মাদক বিক্রি, মানবপাচার, অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়, ডাকাতি ও মাদকের টাকায় আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহের কাজ করছে ‘আল-ইয়াকিন’।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মোহাম্মদ ওমর ফারুককে (৩০) গুলি করে হত্যা করা হয়। প্রথমে জানা যায়, স্থানীয় এক ডাকাত দল এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।
পরে বেরিয়ে আসে আসল রহস্য, ওই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ছিল আল-ইয়াকিনের সন্ত্রাসীরা। তাদের দুই সদস্য অবশ্য পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরে আল-ইয়াকিনের হাতে কমপক্ষে ২৫ রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি নাগরিক খুন হয়েছেন। প্রায়ই স্থানীয়দের অপহরণ করে তারা। নির্জন পাহাড়ে নিয়ে মুক্তিপণ আদায়ের সংবাদও শোনা যায়। ভুক্তভোগী এমন বেশ কয়েকটি পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ পাহাড়ে অভিযান চালায়। তবে এখন পর্যন্ত এ চক্রের একজন সদস্যকেও গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আল-ইয়াকিনের নেতারা দাবি করেন, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার আরাকানের অংশ। তারা এতদিন মিয়ানমারের রাখাইনে ছিলেন। এখন তাদের আরেক রাজ্য কক্সবাজারে এসেছেন। তারা এখানেই থাকবেন, রোহিঙ্গাদের দাবি আদায়ে কক্সবাজারের নিয়ন্ত্রণ নেবেন
২০১৯ সালে টেকনাফের বাহারছড়া টইগ্যা পাহাড়সহ বেশ কয়েকটি দুর্গম পাহাড়ে ড্রোন দিয়েও অভিযান চালায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তবে তাদের অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি।
আল-ইয়াকিন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
ইউটিউবে তাদের বেশ কয়েকজন নেতা নিয়মিত ভিডিও প্রচার করেন। এসব ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ডে (পারিপার্শ্বিক অবস্থা) নির্জন পাহাড় ও অস্ত্র দেখা যায়। তবে সেগুলো বাংলাদেশে ধারণকৃত কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আল-ইয়াকিনের নেতারা দাবি করেন, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার আরাকানের অংশ। তারা এতদিন মিয়ানমারের রাখাইনে ছিলেন। এখন তাদের আরেক রাজ্য কক্সবাজারে এসেছেন। তারা এখানেই থাকবেন, রোহিঙ্গাদের দাবি আদায়ে কক্সবাজারের নিয়ন্ত্রণ নেবেন।
ভুক্তভোগী সিএনজিচালক কামরুল হাসান বলেন, ‘আমাকে লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে অপহরণ করা হয়। তারা আমার চোখ বেঁধে শালবন পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে যায়। সেখানে দিনে দু-তিনবার মারধর করা হতো, পরনের কাপড় খুলে নির্মমভাবে পেটানো হতো।’
বিভিন্ন ভিডিওতে রোহিঙ্গাদের দাবি আদায়ের কথা বললেও ক্যাম্পের ভেতরে খোদ রোহিঙ্গাদের নির্যাতন ও ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত আল-ইয়াকিনের সন্ত্রাসীরা।
আল-ইয়াকিনের ভয়াবহ নির্যাতন
কক্সবাজার জেলার শামলাপুরের এক ব্যবসায়ী জানান, জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সামনে থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় ১৫ দিন পর মুক্তিপণের পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে তাকে ফিরিয়ে আনে পরিবার।
এ ব্যবসায়ীর আরও বলেন, ‘‘আমাকে দিয়ে বাবাকে প্রতিদিন ফোন দিত তারা। মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। বাবাকে ফোন দিয়ে তারা ফাঁকা গুলি ছুড়ে শব্দ শোনাত, যাতে তিনি ভয় পান। দ্রুত মুক্তিপণের টাকার ব্যবস্থা করেন। অপহরণের ১১ দিনের মাথায় পাঁচ লাখ টাকা দিলে তারা আমাকে ছেড়ে দেয়। ক্যাম্পের কাছে আমার সামনেই তারা টাকাগুলো ভাগ করে নেয়।’
নাম প্রকাশ না করে কুতুপালং ক্যাম্পের বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা জানান, ক্যাম্পের অধিকাংশ মানুষই শান্তি চান। তারা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশনা অনুযায়ী চলাফেরা করেন। তবে আল-ইয়াকিনসহ বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী সংগঠন ক্যাম্পে অশান্তি সৃষ্টি করছে। শুধু বাংলাদেশি নয়, রোহিঙ্গারাও তাদের হাতে নির্যাতিত হচ্ছেন।
চলতি বছরের মার্চে উখিয়ার বালুখালি ক্যাম্পে ভয়াবহ যে আগুনের ঘটনা ঘটে তা ছিল আল-ইয়াকিনের কাজ। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তারা রোহিঙ্গাদের ঘর পুড়িয়ে দেয়।
তিনি আরও বলেন, ‘পাহাড়ের চূড়ায় থাকাবস্থায় মাঝেমধ্যে আমার চোখ খুলে দেয়া হতো। সেসময় দেখতাম, তারা সংখ্যায় ১২-১৪ জন। সবার কাছে নাইন এমএম পিস্তল। পর্যাপ্ত গুলিও থাকত তাদের সঙ্গে। চার/পাঁচজনের কাছে দুটা করে অস্ত্র থাকত।’
আল-ইয়াকিনের যোগাযোগের জাল
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পার্শ্ববর্তী স্থানীয়রা বলেন, শালবন ও কুতুপালং ক্যাম্পে এ বাহিনীর অধিকাংশ সদস্যের অবস্থান। বর্তমানে রোহিঙ্গাদের প্রতিটি ক্যাম্পে আল-ইয়াকিনের সদস্যরা আছে। অভিযোগ আছে, তারা ক্যাম্পের নারীদের মোটা অঙ্কের অর্থের লোভ দেখিয়ে নিজেদের সোর্স বানায়। তাদের দিয়ে অপহরণ ও মাদকপাচারের কাজও করায় এ বাহিনীর সন্ত্রাসীরা।
দিনে একবেলা তাদের খাবার দেওয়া হতো। অধিকাংশ সময় মিলত চিড়া-মুড়ি আর পানি। অন্যদিকে, সারাদিন চলত পাশবিক নির্যাতন। পুরোপুরি উলঙ্গ করে লাঠি দিয়ে পেটানো হতো। গলায় ছুরি ধরা হতো, মাঝেমধ্যে হাতে পোঁচ দিয়ে রক্ত বের করে দিত। ঘাড়ে ও মাথায় পিস্তল ঠেকাত, বাট দিয়ে আঘাতও করত। ভয় দেখাতে আকাশে ফাঁকা গুলি ছুড়ত। এ সময় তারা বলত, মুক্তিপণের টাকা না দিলে এখনই মেরে ফেলবে। বাঁচার জন্য ভুক্তভোগী যখন কান্না শুরু করত তখনই তারা পরিবারের কাছে ফোন দিত।
কুতবপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা জানান, সংগঠনটি (আল-ইয়াকিন) বর্তমানে নারী সদস্য নিয়োগ দিচ্ছে। ক্যাম্পের নানা তথ্য তারা সংগঠনের নেতাদের জানিয়ে দেয়। এছাড়া স্থানীয় বিত্তশালীদের (বাংলাদেশি) বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে ক্যাম্পে নিয়ে আসে আল-ইয়াকিনের সুন্দরী নারী সদস্যরা। পরে তাদের ক্যাম্প থেকে অপহরণ করা হয়। এ কাজের জন্য ১০ হাজার করে টাকা পায় তারা।
গত পাঁচ বছরে র্যাব-পুলিশ মাত্র দু-একবার সেখানে যৌথ অভিযান চালায়। এ কারণে এসব পাহাড় নিরাপদ মনে করে আল-ইয়াকিনের সন্ত্রাসীরা।
পাহাড়ের চূড়া আর জঙ্গলে গোপন আস্তানা
অপহরণের পরই ভুক্তভোগীদের চোখ-মুখ ও হাত বেঁধে নির্জন পাহাড়ে নেওয়া হয়। পাহাড়ে ওঠার পর তাদের পাও বেঁধে ফেলা হয়। সেখানে তিন-চার ফিট গভীর গর্তে রাখা হয় তাদের। মাথার ওপরে খোলা আকাশ। রোদ-ঝড়-বৃষ্টি যা-ই হোক না কেন সেখানেই থাকতে হয়। পাশের ঝুপড়ি ঘরে অবস্থান করতেন অপহরণকারীরা।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাস সৃষ্টি করা সশস্ত্র সংগঠন আল-ইয়াকিন সম্পর্কে মুখ খুলতে চান না কেউই। যদি তারা খুন করে ফেলে এ ভয়ে কেউ কিছু বলার সাহস দেখান না। প্রতিনিয়ত তাদের হাতে ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন অসংখ্য রোহিঙ্গা নারী। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় ক্যাম্পের আশপাশের পল্লীচিকিৎসকের শরণাপন্ন হন তারা। অনেকে বাধ্য হয়ে গর্ভবতী হয়েছেন, অনেকে আবার গর্ভপাতও করিয়েছেন।
অসংখ্য নারীর অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাত করানো টেকনাফের এক পল্লীচিকিৎসক বলেন, অনেক আগে থেকেই আল-ইয়াকিনের নির্মম বর্বরতার কথা শুনেছিলাম। কখনও নিজ চোখে তাদের দেখিনি। তবে গত কয়েক মাসে তাদের হাতে ধর্ষণের শিকার পাঁচ/ছয় নারীর চিকিৎসা করেছি। তাদের সবার বক্তব্য হলো, আল-ইয়াকিনের সদস্যরা তাদের সর্বনাশ করেছে। ক্যাম্পের ভেতরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তেমন বিচরণ নেই। এ সুযোগে যা ইচ্ছা তা-ই করার সুযোগ পায় আল-ইয়াকিন। ইচ্ছা হলে তারা পরিবারের সদস্যদের সামনেই নারীদের ধর্ষণ করে। সর্বশেষ মে মাসে আল-ইয়াকিন সদস্যদের হাতে ধর্ষণের শিকার, পরে গর্ভবতী হওয়া এক রোহিঙ্গা নারী আমার কাছে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং গর্ভপাত করিয়েছেন।
স্থানীয় থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের এপ্রিলে টেকনাফের জীমংখালি থেকে এক দিনমজুর ও দুই কৃষককে (জুমচাষি) তুলে নিয়ে যায় আল-ইয়াকিনের সশস্ত্র সদস্যরা। তারা তাদের পরিবারের কাছে মোট ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। ওই সময় তাদের উদ্ধারে টেকনাফের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উনচিপ্রাং, মিনাবাজার, জীমংখালিসহ বেশ কয়েকটি পাহাড়ে অভিযান চালান। তবে তাদের উদ্ধার করা যায়নি।
পরে তিন লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দিয়ে দুজন কৃষক ফিরে আসেন। তবে দিনমজুরের পরিবার টাকা দিতে না পারায় তাকে হত্যা করা হয়। পরে তার মাটিচাপা মরদেহ মেলে জীমংখালির পাহাড়ে।
এক ভূক্তভোগী বলেন, মে মাসে আল-ইয়াকিনের সদস্যরা আমার ছেলেকে অপহরণ করে। এরপর আমার কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। আমরা পুলিশ, র্যাবকে বলেছি। কিন্তু কেউ আমার ছেলেকে উদ্ধার করতে পারেনি। পরে বিকাশের মাধ্যমে ধাপে ধাপে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার পর তারা আমার ছেলেকে নির্জন রাস্তায় ফেলে যায়। এপিবিএন তাকে উদ্ধার করে।
স্থানীয় পুলিশ ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন জানায়, টেকনাফ ও কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসবিবিএল (একনলা বন্দুক), নাইন এমএম পিস্তল, থ্রি নট থ্রি রাইফেল, ওয়ান শুটারগান, এমনকি একে-৪৭ এর মতো মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। মাঝেমধ্যে কিছু অস্ত্র ধরাও পড়ে।
অপহরণের শিকার দুই ভুক্তভোগী ও দুই সিএনজি চালক জানান, কক্সবাজার থেকে টেকনাফের পথে শামলাপুর ও হুইংচংয়ের মাঝের বড়ডালার এক কিলোমিটার সড়কটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে আল-ইয়াকিনের সদস্যদের আনাগোনা বেশি। সিএনজি অটোরিকশা বা মোটরসাইকেল আটকে অহরহ তারা এখানে অপহরণের ঘটনা ঘটায়।
সড়কটি ‘সোনালী ব্যাংক’ নামেও পরিচিত। আলম নামের এক সিএনজিচালক বলেন, ‘এ সড়কে অপহরণের পাশাপাশি মুক্তিপণের টাকাও আদায় করা হয়। আল-ইয়াকিনের সদস্যরা অপহরণের পর মুক্তিপণের টাকা দিতে ভুক্তভোগীর পরিবারকে এখানে আসতে বলে। তারা এখানে স্থানীয় স্কুলশিক্ষার্থীদের দাঁড় করিয়ে রাখে। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা শিক্ষার্থীদের হাতে টাকা দেন। সেই টাকা চলে যায় অপহরণকারীদের কাছে। ক্যাম্প থেকে টাকাপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর ভুক্তভোগীকে মুক্তি দেওয়া হয়।’
কক্সবাজারের স্থানীয়রা (বাংলাদেশি) বলছেন, তারা কক্সবাজার ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অত্যাধুনিক অস্ত্র দেখেছেন। এগুলো অবৈধভাবে মিয়ানমার থেকে আনা। বিষয়টি স্থানীয় থানা পুলিশও স্বীকার করেছে। তবে সীমান্ত দিয়ে কীভাবে অস্ত্র প্রবেশ করছে— এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি কারও কাছে।
স্থানীয় পুলিশ ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন জানায়, টেকনাফ ও কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসবিবিএল (একনলা বন্দুক), নাইন এমএম পিস্তল, থ্রি নট থ্রি রাইফেল, ওয়ান শুটারগান, এমনকি একে-৪৭ এর মতো মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। মাঝেমধ্যে কিছু অস্ত্র ধরাও পড়ে।
টেকনাফ থানা পুলিশ জানায়, তাদের সঙ্গে প্রায়ই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এছাড়া সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে প্রায়ই পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে এসব অস্ত্র উদ্ধার করে।
কক্সবাজারের স্থায়ী বাসিন্দাদের দাবি, আব্দুল হাকিম ওরফে হাকিম ডাকাত সশস্ত্র সংগঠন আল-ইয়াকিন পরিচালনা করছেন। তাকে বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়েও ধরতে পারেনি পুলিশ।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আল-ইয়াকিন সদস্যদের অপতৎপরতা দেখেছেন উনচিপ্রাং ক্যাম্পের অনেক রোহিঙ্গা। তারা ক্যাম্পে নাশকতা করে। আমাদের মারধর করে। কেউ প্রতিবাদের সাহস দেখায় না। প্রতিবাদ করলে যে জবাই করে ফেলবে। একবার একজনের শরীর ও মাথা পাহাড়ে দুই স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়। আমরা শান্তির জন্য বাংলাদেশে এসেছিলাম। সন্ত্রাসীদের কারণে এখানেও শান্তি মিলছে না।
কক্সবাজারের স্থায়ী বাসিন্দাদের দাবি, আব্দুল হাকিম ওরফে হাকিম ডাকাত সশস্ত্র সংগঠন আল-ইয়াকিন পরিচালনা করছেন। তাকে বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়েও ধরতে পারেনি পুলিশ।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অন্য সন্ত্রাসী গ্রুপ
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মোট ১২টি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। তাদের মধ্যে মুন্না গ্রুপ, আনাস গ্রুপ, মাহাদ গ্রুপ, সালমান শাহ গ্রুপ, হাফেজ আহমদ গ্রুপ, হাকিম ডাকাত গ্রুপ, নুরে আলম বাহিনী, জকির ডাকাত গ্রুপকে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা জানান, সেখানে বর্তমানে আতাউল্লাহর বাহিনী, আরএসও, আরআরএসও নামের কয়েকটি সংগঠন সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
বাংলাদেশ পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কোনো সংগঠনের অস্তিত্ব নেই। তারপরও আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’
তবে ২০২০ সালের জুলাই মাসে কক্সবাজারের সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) এ বি এম মাসুদ হোসেন ‘আব্দুল হাকিম’ ওরফে ‘হাকিম ডাকাত’-কে গ্রেফতারে পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন।