প্রভাতি সংবাদ:
চলমান ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সিলেট অঞ্চলে আর উঁচু করে কোনো রাস্তা করা হবে না। এলিভেটেড রাস্তা হবে। এলিভেটেড রাস্তা হলে সেটা সহজে নষ্ট হয় না, বন্যার মতো দুর্যোগে যাতায়াতেরও সুবিধা হয়।’
মঙ্গলবার সিলেট সার্কিট হাউসে সিলেট বিভাগের সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন বিষয়ে মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
বাংলাদেশের মানুষকে যে সব সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেই চলতে হয়েছে এবং হবে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে অঞ্চলভিত্তিক অবকাঠামোগুলো সেভাবে তৈরি করার ওপর জোর দেন সরকার প্রধান। বলেন, ‘বন্যা আসাটা আমার মনে হয় ঘাবড়ানোর কিছু নাই। বাংলাদেশের মানুষকে সব সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেই চলতে হবে। অবকাঠামোগুলোও সেভাবে তৈরি করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বন্যায় ঘাবড়ানোর কিছু নেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে এ দেশের মানুষ বসবাস করে। সরকার আপনাদের পাশে আছে। সব সময় আপনাদের পাশে থাকবে। বন্যার কারণে অনেক জায়গা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এ কারণে আমরা সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছি এবং তারা উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়েছে। এমন পরিস্থিতি আমাদের দলের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরাও নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। একজন তো দুর্গতদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে। সেজন্য বন্যার্ত এলাকায় বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সিলেট অঞ্চলে বন্যাদুর্গতদের তালিকা করে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে সরকারের তরফ থেকে সহায়তা দেওয়া হবে। প্রয়োজনীয় খাদ্য, ওষুধসহ সবকিছু দেওয়া হবে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘এই যে বন্যা হলো, এতে আমাদের কষ্ট-ক্ষতি হচ্ছে এটা ঠিক, আবার আমাদের লাভও আছে।’
বাংলাদেশ ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে যদি আমাদের আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার অর্থাৎ ভূগর্ভস্থ পানি যদি কমে যায়, ভূমিকম্পের সম্ভাবনা বেশি থাকে। কিন্তু ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার যদি ঠিক থাকে, ভূমিকম্প আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।’
নদীগর্ভ ঠিক রাখতে ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু একবার ক্যাপিটাল ড্রেজিং করলে হবে না। তারপর নিয়মিত মেনটেইন্যান্স ড্রেজিং করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বন্যায় মাছচাষিরা যাতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন সেজন্য ব্যবস্থা নেবে সরকার। বন্যায় যারা কাজ করছেন তাদেরও সাবধান ও সতর্ক থাকতে হবে। বন্যার পানিতে যাতে ঠান্ডা লেগে কেউ অসুস্থ না হন।’
শৈশবে সিলেটে বেড়াতে আসার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘বিশাল বিশাল ড্রেন ছিল, সব বাড়ির সামনে পানি যাওয়ার ড্রেন ছিল, তার ওপর স্ল্যাব দিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা। দুর্ভাগ্য, এখন কিন্তু নাই। বিল্ডিং বানিয়ে এমন অবস্থা, পানি যাওয়ার জায়গা নাই। পানি যাওয়ার জায়গা তো লাগবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সে সময় যারা তৈরি করেছিলেন, প্রকৃতির কথা চিন্তা করেই করেছেন। কিন্তু এখন আমাদের সময়ে যারা করছেন, তারা হয়তো চিন্তা ভাবনা করছেন না।’
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী সিলেট, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসকের হাতে তার পক্ষ থেকে সিলেট ও সুনামগঞ্জবাসীর জন্য ত্রাণ সহায়তা তুলে দেন।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে হেলিকপ্টারযোগে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। পরে সেখান থেকে সিলেট সার্কিট হাউজে যান।
এর আগে নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করতে সকাল ৮টায় তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারযোগে রওনা হন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দুটি হেলিকপ্টারে তার সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন তথ্যমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পরিবেশমন্ত্রী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম, আহমদ হোসেন ও সুজিত রায় নন্দী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব, এসএসএফের মহাপরিচালক, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব, একান্ত সচিব-১, ব্যক্তিগত চিকিৎসক, পিজিআরের কমান্ডার, এডিসি, প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার-১, এসএসএফের ৪ জন, বিটিভির ক্যামেরাম্যান এবং মিডিয়া সদস্য চারজন।
এদিকে সিলেটে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনে এসে শাহজালাল (র.) ও শাহপরানের (র.) মাজার জিয়ারত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাজার জিয়ারত শেষে মঙ্গলবার বিকাল ২টা ৪০ মিনিটে সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে বহনকারী গাড়ি পৌঁছায়। সেখান থেকে তাকে বহনকারী হেলিকপ্টার ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।
এর আগে সকাল ৮টায় নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেটের বন্যা কবলিত অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিনি সিলেট সার্কিট হাউসে স্থানীয় প্রশাসনের লোকজন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
এদিন দুপুর ১টা ২৯ মিনিটে হযরত শাহজালালের (র.) মাজার প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন তিনি। এ সময় তিনি জোহরের নামাজ আদায় করেন। দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী মাজার থেকে বের হয়ে যান। এর আগে তিনি সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও ফাতেহা পাঠ এবং মোনাজাত করেন।
এরপর শাহপরানের (র.) মাজার পরিদর্শন ও জিয়ারত শেষে তিনি সেখানেও পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও ফাতেহা পাঠ এবং মোনাজাত করেন।
পরে বেলা ২টা ৪০ মিনিটে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে তাকে বহনকারী হেলিকপ্টার ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেয়।