প্রভাতী বার্তাকক্ষঃ
ফলাফল প্রকাশের পর অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নিজের রিসোর্টে কয়েকদিন রাখার পরিকল্পনা নেন ব্যবসায়ী সুধীশ। সেখানেই তাদেরকে কয়েকদিন বিনামূল্যে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তিনি।
মাধ্যমিক পরীক্ষায় ফেল করা ছাত্রছাত্রীরা বিনামূল্যে হোটেলে থাকার সুবিধা পাচ্ছেন। বিনে পয়সায় তাদের বিরিয়ানি খাওয়ানো হচ্ছে। অবাক করা এই ঘটনা ঘটেছে ভারতের কেরালা রাজ্যে।
মাধ্যমিক পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হয়ার পরে তাদের বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে বিরিয়ানি। তাদেরকে আবার বিনা পয়সায় হোটেলে থাকতে দেওয়া হচ্ছে । অবাক করা এই ঘটনা ঘটেছে ভারতের কেরালা রাজ্যে। রাজ্যের কয়েকজন ব্যবসায়ী পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছেন।
করোনার মধ্যেও হয়েছে পরীক্ষা। ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায় সম্প্রতি চলতি বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। কেরালায় এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪ লাখ ২১ হাজার ২৩৬ জন শিক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করেছেন।
তাদের মধ্যে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ লাখ ১৯ হাজার। অনুত্তীর্ণ হয়েছেন ২ হাজার ২৩৬ জন শিক্ষার্থী। শতকরা হিসেবে যার হার শূন্য দশমিক ৫৩ শতাংশ।
কেরালার উপকূলীয় শহর কোঝিকোড়ের বড় ব্যবসায়ী সুধীশ। কেরালার নিকটবর্তী রাজ্য তামিলনাড়ুর পর্যটনকেন্দ্র কোড়াইকানালে একটি রিসোর্ট রয়েছে তার।
ফলাফল প্রকাশের পর অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নিজের রিসোর্টে কয়েকদিন রাখার পরিকল্পনা নেন এই ব্যবসায়ী। সেখানেই তাদেরকে কয়েকদিন বিনামূল্যে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তিনি।
ডেকান হেরাল্ডকে এ প্রসঙ্গে সুধীশ বলেন, ‘পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর দেখলাম যে কীভাবে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা আনন্দে মেতেছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করছে। এ পরিস্থিতিতে অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা কেমন হবে, তা আমি অনুভব করতে পারি এবং তখনই এই উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা আমার মাথায় আসে।’
পরিকল্পনা প্রকাশের পর থেকে এখন পর্যন্ত কয়েকশ শিক্ষার্থী তার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করছে। এদের মধ্যে কয়েকজন ছাত্রীও কল দিয়েছেন।
তিনি জানান, যেসব শিক্ষার্থী তাকে ফোন করেছে তাদের অধিকাংশই সামাজিক ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারের সদস্য।
এদিকে ব্যবসায়ী সুধীশ এই উদ্যোগ নেওয়ায় সাধুবাদ জানাচ্ছেন সকলে। কেরালার আরও কয়েকজন ব্যাবসায়ীও তার সহযোগী হিসেবে এগিয়ে এসেছেন।
পরীক্ষায় ফেল করা শিক্ষার্থীরা এখন মানষিকভাবে বিপর্যস্ত। তাদের সামান্য আনন্দ দেয়ার জন্য এই কাজগুলো করছেন এরা।
কেরালার পর্যটন শহর কোচির কাছে মুলানথুরুথি এলাকার এক ব্যবসায়ী মাধ্যমিকে ফেল করা এসব শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বিরিয়ানি খাওয়াচ্ছেন। তাদেরকে বিভিন্ন হোটেলে বিনামূল্যে থাকার বন্দোবস্তোও করেছেন আরও কয়েক জন ব্যবসায়ী। মানসিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে এই কার্যক্রম অবদান রাখবে বলে মনে করেন তারা।
কেরালা রাজ্যের বিভিন্ন মহল ব্যবসায়ীদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তাদের এই উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের মনোবল চাঙ্গা করবে বলে মনে করেন তারা।
অনেকসময় দেখা যায়, পরীক্ষায় ফেল করা শিক্ষার্থীদের একটা অংশ আত্মহত্যা করে বসে। তাদের মনোবল ফিরিয়ে আনার জন্য এই উদ্যোগ কার্যকর।
কেরালা রাজ্য শাসন করছে সিপিএম। তাদের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল বরাবরই ভারতের অন্যান্য রাজ্যের চেয়ে অনেক ভালো। এই রাজ্যে পরীক্ষার্থিদের পাসের হারও থাকে সর্বোচ্চ।
মহমারির কারণে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা হয়েছিল সহজ উপায়ে। তারপরও প্রশ্নপত্রও করা হয়েছিল বেশ সহজ। ফলে, চলতি বছর কেরালায় পাশের সংখ্যা বিগত বছরসমূহের তুলনায় অনেক বেশি। এমনটাই জানিয়েছে রাজ্যের শিক্ষা দফতর।
এ বছর ফেল করল দুই হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী ফেল করলো। কারণ জানতে চাওয়া হয় রাজ্যের শিক্ষা দফতরের কর্মকর্তা ও কেরালার শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞদের কাছে।
তারা জানিয়েছেন, অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই কেরালার সামাজিক ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারের সন্তান। ফলে, করোনাকালীন সময়ে তারা সেভাবে পড়াশোনার সুযোগ পায়নি।
আবার অনুত্তীর্ণদের মধ্যে এমন শিক্ষার্থীও আছে, যারা ঠিকমতো পড়াশোনা বুঝতে না পারার রোগ আছে। কেরালার এক স্কুল শিক্ষক জানিয়েছেন, তার স্কুলে দু’জন পড়ুয়া শিক্ষার্থী পাশ করতে পারেনি। তারা ‘লার্নিং ডিসঅর্ডারে’ ভুগছে।