প্রভাতি সংবাদ ডেস্ক:
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস শিবিরে ব্যাপক রদবদল করা হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলটিকে সংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী করতে একই জেলাকে একাধিক সাংগঠনিক জেলায় ভাগ করা হয়েছে।
উত্তর থেকে দক্ষিণ, তৃণমূলের জেলা সভাপতি পদে এবার ব্যাপক রদবদল ঘটানো হলো। এছাড়া একাধিক জেলায় মন্ত্রীদের জেলা সভাপতির পদ থেকেও সরিয়ে দিয়েছে শাসক দলটি। এক পদ, এক ব্যক্তি। সম্প্রতি সংগঠন চালাতে এই নীতি কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেয় জোড়া-ফুল শিবির। মূলত এর জেরেই এদিনের রদবদল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
পশ্চিম মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা, নদীয়া, হাওড়াসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি জেলাকে সাংগঠনিক স্তরে ভেঙে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। সেখানকার সভাপতি পদের দায়িত্ব কাদের দেওয়া হয়েছে তাও এবার ঘোষণা করা হয়েছে।
বিগত বেশ কয়েক বছর যাবত উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সভাপতির পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এবারের রদবদলে তাকেও তার পদ থেকে সরানো হলো। আর জেলা সভাপতি পদের দায়িত্ব দেওয়া হয় নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিককে।
অন্য দিকে দক্ষিণ ২৪ পরগনাকে দুটি সাংগঠনিক জেলায় বিভক্ত করা হয়। যার মধ্যে একটি সুন্দরবন, আর অন্যটি যাদবপুর ডায়মন্ড হারবার। এবার সুন্দরবন সাংগঠনিক জেলার সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় যোগরঞ্জন হালদারকে। আর শুভাশিস চক্রবর্তীকে করা হয় যাদবপুর ডায়মন্ড হারবারের সভাপতি।
হুগলিতে ক্ষমতাসীন শিবিরে গোষ্ঠী কোন্দলের কথাও প্রকাশ্যে এসেছিল। গুরুত্বপূর্ণ এই জেলাকে দুটি সাংগঠনিক স্তরে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে একটি হুগলি-শ্রীরামপুর, আর অপরটি আরামবাগ। প্রথমটির দায়িত্বে বিধায়ক ¯েœহাশিস চক্রবর্তী এবং রমেন্দু সিনহা রায়কে করা হয় আরামবাগের সভাপতি। এর আগে হুগলির তৃণমূল সভাপতির পদে ছিলেন দিলীপ যাদব। বর্তমানে সাংগঠনিক জেলা ভাগ করা হলেও তাকে কোনো পদই দেওয়া হয়নি।
এছাড়া নদীয়া জেলাকে সাংগঠনিক স্তরে উত্তর ও দক্ষিণ ভাগে বিভক্ত করেছে তৃণমূল। এখানে উত্তরের সভাপতি জয়ন্ত সাহা, আর দক্ষিণের দায়িত্বে রক্তা ঘোষ কর। এই জেলায় আগে দলটির সভাপতি ছিলেন মহুয়া মৈত্র।
মোট চারটি সাংগঠনিক জেলায় হাওড়াকে বিভক্ত করা হয়। এগুলো হল- হাওড়া গ্রামীণ, হাওড়া শহরতলী, হাওড়া শহর ও হাওড়া সদর। হাওড়া গ্রামীণ জেলা সভাপতির পদ থেকে পুলক রায় এবং হাওড়া জেলা সভাপতির পদ থেকে সরলেন অরূপ রায়। হাওড়া গ্রামীণের সভাপতি বর্তমানে সমীর কুমার পাঁজা। তৃণমূলের হাওড়া শহরতলীর সভাপতি করা হয়েছে লগনদেও সিংকে। হাওয়া উলুবেড়িয়া শহরের সভাপতি করা হয়েছে অসীত বন্দ্যোপাধ্যায়কে এবং হাওড়া সদরের সভাপতি করা হয় অরিজিৎ বটব্যালকে।
এবার পূর্ব মেদিনীপুরের সভাপতি পদ থেকে মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রকে সরানো হলো। এই জেলাকেও সাংগঠনিক স্তরে মোট চারটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। মালদা জেলা সভাপতি পদ থেকে সরানো হলো মৌসম বেনজির নুরকে। এখানে তার জায়গায় এসেছেন আবদুর রহমান বক্সি। আর মহুয়া গোপকে করা হয় জলপাইগুড়ির জেলা সভাপতি।
সাংগঠনিক স্তরে কলকাতার দুই জেলা কমিটির সভাপতি পরিবর্তন করল তৃণমূল। এখানে উত্তর কলকাতা দলটির জেলা কমিটির সভাপতি করা হয় তাপস রায়কে। গুরুত্বপূর্ণ সেই পদে ছিলেন সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার তাকে করা হয়েছে উত্তর কলকাতা জেলা কমিটির চেয়ারপার্সন। আর দেবাশিস কুমারকে করা হয় দক্ষিণ কলকাতা জেলা কমিটির সভাপতি।
গুরুত্বপূর্ণ সেই রদবদল প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করেছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, সংগঠনে আরও যাতে নজর দেওয়া যায় তার জন্যই আমাদের এই কার্যক্রম। সংগঠনের সভাপতি পদে থাকলে দায়িত্ব অনেক থাকে। জনগণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে হয়।
তিনি আরও বলেন, মন্ত্রী বা সংসদ সদস্য পদের কাজ সামলে দলের জেলা সভাপতির কাজ পালন করা ভীষণ কঠিন। তাই এই রদবদল করা হলো।