আকিব মোহাম্মদ ফুয়াদ:
চরমপন্থী প্রচারক ও হেফাজতে ইসলামের উগ্রবাদী নেতা হারুন ইজহারাে সম্প্রতি চট্টগ্রামের লালখান বাজারের একটি মাদ্রাসা থেকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তারকৃত ইজহার হেফাজতের সাম্প্রতিক দেশব্যাপী সহিংসতায় জড়িত থাকার সাথে জড়িত। তাছাড়া গত বছর হেফাজতের সাবেক আমির আল্লামা শফির হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বর্তমানে মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
হারুন ইজহারের এই উগ্রবাদ এবং চরমপন্থার আতঙ্কবাদী ও সন্ত্রাসবাদী পরিচয় এবারই নতুন নয়।২০০৯ সালের নভেম্বরে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে হামলার পরিকল্পনা করার অভিযোগে হারুনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো।
আরও পড়ুন: হেফাজত নেতা হারুন ইজহার জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার
আরও পড়ুন: একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী কওমিপন্থী মুজাহিদ বাহিনী’র বিচার দাবী ইসলামী ফ্রন্টের
হারুন মুফতি ইজহারুলের ছেলে, যিনি ওসামা বিন লাদেনের দেহরক্ষী দ্বারা আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন।
ফেসবুক পোস্টের লিংক: এখানে ক্লিক করুন
তালেবানের সাথে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল, তার সঙ্গে সংযোগ ছিলো তালিবানের কমান্ডার ইন চিফ, মোল্লা ওমরের। আবার আরেক শীর্ষ আতঙ্কবাদী ও সন্ত্রাসী সংগঠন জন্য পরিচিত পাকিস্তান ভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়েবা(এলইটি) এর সাথে তার যোগাযোগ ছিল বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: একজন চিহ্নিত আফগানফেরত জঙ্গী কিভাবে রকমারিতে আলো ছড়ায়?
২০০৯ সালের ৫ নভেম্বর তারা ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন ও ভারতীয় দূতাবাসে হামলা পরিকল্পনার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিল। ২০১০ এর ১৫ ই ডিসেম্বর মুফতি ইজহারুলকে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হারকত-উল-জিহাদ(হুজি) এর সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব।
২০০১-০৬ এর বিএনপি-জামায়াত সরকারের যোগসাজশে প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করতে হুজি ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলা বাস্তবায়ন করে।
২০১৩ সালের ৭ অক্টোবরে তাদের নিজস্ব “আল জামিয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসা” এর আস্তানায় হ্যান্ডগ্রেনেড বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণে তিনজন ছাত্র মারা যায়। সেই বিষ্ফোরন মামলায় পিতার সাথে গ্রেফতার হন হেফাজত এই নেতা। বিভিন্ন সময় অভিযোগ এসেছে অবস্থানের দিক দিয়ে একটু বিচ্ছিন্ন এই মাদ্রাসাকে তারা জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের প্রশিক্ষণে ব্যবহার করে থাকেন।
বাবার মৃত্যুর পর আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো এখন হারুনের মাধ্যমে বজায় রাখা হয়েছে। সে তার রাজনৈতিক লক্ষ্য বাস্তবায়নে “সশস্ত্র জিহাদ” এবং সহিংসতার মতবাদের অন্যতম প্রধান আধ্যাত্মিক নেতা হিসাবে কাজ করেছেন।
সূত্র মতে, হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমির ও দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসার সাবেক মহাপরিচালক আহমদ শফীর মৃত্যুতেও জড়িত ছিলেন এই হারুন ইজহার। শফির মৃত্যুর পর দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রন নিতে চেষ্টা করে হারুন ইজহার। কিন্তু শফির ছেলের কারনে সেটা সম্ভব হয়নি। শফির পরিবারের দাবি তার মৃত্যুতে সরাসরি হাত ছিলো হেফাজত এই নেতার।
হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি করার সময় লালখান বাজার মাদরাসার পরিচালক মুফতি ইজহার হেফাজতের আমির হওয়ার জন্য জোর দাবি জানিয়েছিলেন এবং তার ছেলেদ্বয়কে (মুফতি হারুন ইজহার ও মুসা ইজাহার)-কে যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদক রাখার জন্য দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু শফির মৃত্যুতে তাদের জড়িতা থাকার কারনে বড় কোন পদে রাখা হয়নি কাউকে।
এই হারুন ইজহার এর একটি বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন সরকার ও দেশবিরোধী হিসেবে খ্যাত ফটোগ্রাফার শহিদুল আলম। আর এই পোস্টের পর থেকেই শুরু হয়েছে সমালোচনা।
হারুনের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে এবং জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার জন্য দীর্ঘদিন কারাগারে বন্দি ছিলেন তিনি। তার বাবা মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের অন্যতম সংগঠক হিসেবে পরিচিত।
অথচ এই চরমপন্থী, উগ্রবাদী, সন্ত্রাসবাদীকে ফেইসবুকে প্রচার করেন আমাদের প্রায়শই বিভ্রান্ত “লিবারেলদের” পছন্দের একজন জনাব শহীদুল আলম। ২৯ মার্চের শহীদুল আলমের সেই ফেইসবুক পোস্ট দেখা যায়, হারুন ইজহারকে শহীদুল আলম চরমপন্থী বা “extremist” বলতে নারাজ। বরং তার কাছে সরকার দলীয় যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগের বিকল্প হচ্ছে হারুন ইজহারের মতো “রাজনৈতিক শক্তি” (!!)
২০১৮ সালে স্কুল শিক্ষার্থী কিশোরদের অরাজনৈতিক ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলন’ এ শহীদুল আলম তার পেশাদার কাজের পশ্চিমাদের সাথে সক্ষতার অবস্থান ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর, মিথ্যা অপপ্রচার করে রাজনৈতিক রূপ দানে সহায়তা করে রাতারাতি “সুনাম” কুড়িয়ে নেন।
তারপর থেকে বারবার পশ্চিমা বিভিন্ন মিডিয়ায় উঠে এসে সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিকভাবে হেয়-প্রতিপন্নভাবে উপস্থাপনের কোন সুযোগ হাতছাড়া করেননি তিনি।
তবে অবাক করার বিষয় এই যে, পশ্চিম ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক সমাজের ঘনিষ্ঠ শহীদুল আলম সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে মার্কিন দূতাবাসে হামলার পরিকল্পনাকারী হারুণ ইজহার ও তার রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে সচেতন থেকেও তাকে সমর্থন করে প্রচারের দায়িত্ব নিজ কাঁধে নিয়েছেন। এরকম ব্যক্তিকে কি অনুমোদন করেন শহীদুল আলম?
বি:দ্র: মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত কলামের দায়-দ্বায়িত্ব লেখকের। প্রভাতী সংবাদ কর্তৃপক্ষ কোন দায় বহন করবে না।