More

    সামাজিক নিরাপত্তাঃ ধর্মীয় অনুশাসন নাকি সামাজিক মূল্যবোধ গুরুত্বপূর্ণ

    সাইফুল আলম বাপ্পি:

    ২০২১, চল্লিশ বছর আগে আমার শিক্ষা জীবন শুরু হয়েছিলো যশোরের তৎকালীন সময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেক্রেড হার্ট স্কুল (বড় মিশন) এর নার্সারিতে পড়া শুরু করি। সেই শিশুকাল থেকেই কো-এডুকেশন শুরু।

    মাঝে যশোর জিলা স্কুলে তিন বছর বাদ দিলে পুরোটাই কো-এডুকেশন। তবে জিলা স্কুলে পড়াকালীন সময়েও প্রাইভেট পড়তাম কো-এডুকেশ নেই।

    তাই সেই ছোটোবেলা থেকেই ছেলেমেয়েরা একসাথে লেখাপড়া করে বড় হয়েছি। তখনকার সময়ে এখনকার মতো মেয়েদের এতো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে দেখিনি।

    এমনকি তখনকার সময়ে ধর্মীয় উন্মাদনাও এখনকার মতো এতো প্রকট ছিলো না। বোরকা পরে স্কুল কলেজে যাওয়া মেয়েদের সংখ্যাও খুবই নগন্য ছিলো। হিজাবেরতো অস্তিত্বও ছিলোনা। কিন্তু তখন ধর্ষণ শব্দটাও অপরিচিত ছিলো।

    এমনকি এই শব্দটা ছিলো উচ্চারণ অযোগ্য। বিকেল বেলা হলে এমন কোনো এলাকা খুঁজে পাওয়া যেতোনা যেখানে এলাকার সব ছেলে মেয়েরা একসাথে খেলাধুলা করতো না। মা খালারা একসাথে বসে গল্প করতো।

    সামজিকভাবে এমন পরিবেশ ছিলো যেখানে সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা সমাজের সদস্যদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের মাধ্যমেই গড়ে উঠেছিলো। এলাকায় কোনদিন পুলিশ আসতে দেখেছি বলেও মনে পড়ছে না।

    রাতের বেলা পুরুষদের তো দূরের ব্যাপার নারী বা মেয়েদেরও রাস্তায় চলাচলে কোনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হতো না। বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই আসলে সামাজিক অবক্ষয়ের সূচনা হতে থাকলো।

    সত্যি বলতে ধর্মীয় অনুশাসনের গোঁড়ামি গোটা সমাজের যে স্বাভাবিক প্রগতি, তা স্থবির করে ফেলতে শুরু করে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় শুরু হয় একের পর এক প্রতিক্রিয়াশীল কর্মকাণ্ড।

    কো-এডুকেশনের ভীত ভেঙ্গে যায়। মাদ্রাসা শিক্ষার নামে ধর্ম ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক বিস্তার ঘটতে থাকে।

    নতুন নতুন ফতোয়া জারি হতে থাকে। সমাজের মানুষদের পারস্পরিক বন্ধন ছিন্নভিন্ন হতে শুরু করে। বাংলা ভাই, হরকাতুল জিহাদ সহ অসংখ্য ধর্মীয় সংগঠন দাঁড়িয়ে যায়।

    শুরু হয় নারীবিদ্বেষী সমাজ বিনিমার্নের উদ্যোগ। একেবারে জবরদস্তি করে ধর্ম পালনের মহোৎসব শুরু হয়।

    রোজার মাসে মাইকিং করে খাবার দোকান বন্ধ করার কালচারও চালু হয়। এ সময়টাতেই অফিস আদালতে লাঞ্চের বিরতির পরিবর্তে নামাজের বিরতির নোটিশ লাগানো শুরু হয়।

    হাসপাতালে ডাক্তারের চেম্বারের সামনে রোগের বর্ণনার পোস্টারের পরিবর্তে রোগমুক্তির দোয়ার পোস্টার লাগানো শুরু হয়।

    এমনকি দেশের একমাত্র বিমানবন্দরের নামেও বাংলা ইংরেজির পাশাপাশি আরবী হরফ যুক্ত হয়। পাড়ার পাড়ার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পরিবর্তে শুরু হয় বিভিন্ন মতাদর্শের ওয়াজ মাহফিল।

    ধর্মীয় অনুশাসনের আবর্তে দুষ্টু লোকদের দৌরাত্ম বাড়তে থাকলো।

    নারী বিদ্বেষ, আস্তিকতা নাস্তিকতার ধোঁয়া তুলা, প্রতিটা আচরণের সাথে ধর্মীয় লেবাস ধারণ যুক্ত হয়। অথচ সমাজ থেকে হারিয়ে যেতে তাকে নিজস্ব স্বকীয়তা।

    বাঙ্গালীর চিরায়ত ঐতিহ্যের সর্বনাশ ঘটে। সামজিকভাবে শিশুদের শিশু হিসেবে বড় হতে না দিয়ে মেয়ে শিশু ও ছেলে শিশু হিসেবে আলাদা করা হয়।

    ছবি: সংগৃহীত

    ছেলেদের জন্য আলাদা মেয়েদের জন্য আলাদা স্কুল, আলাদা ক্লাসরুম এমনকি কোনও কোনও স্কুল কলেজে আলাদা প্রবেশ পথও তৈরি হয়।

    এসব উপাদান যুক্ত করে আমরা কি সমাজকে উন্নত রুচির সমাজ বানাতে পারলাম? ঘুষ দূর্নীতি চরম রুপ ধারণ করেছে।

    মেয়েদেরকে তেঁতুলের সাথে তুলনা করলে একদল ধর্মীয় লেবাসের তলে থেকে তাকে বাহবা জানাচ্ছে। যা একসময় বাংলাদেশে অসম্ভব ছিলো।

    এমন কোনো ওয়াজ পাওয়া যাবেনা যেখানে নারীকে প্রধান টার্গেট করে কথা বলা হয়না। এসব ওয়াজ শুনলে মনে হয়, কোরআনে যেন শুধু নারীদের বিষোদগারই করা হয়েছে।

    অথচ কোরানের বহু জায়গায় নারীদের সুউচ্চ আসনে বসানো হয়েছে। যে সমাজে ধীরে ধীরে এভাবে নারীদের হেয় করে দ্বিতীয় শ্রেনীর মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়, সেখানে ধর্ষণের তীব্রতা বাড়বে বৈ কমবে না।

    গির্জার ফাদার, মন্দিরের পুরোহিত, মসজিদের ইমাম কে বাদ যাচ্ছে ধর্ষকের খাতায় নাম লিখতে?

    স্কুলের শিক্ষক, কলেজের শিক্ষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও নাম বেরিয়ে আসছে। রাজনৈতিক দলের কর্মী কিংবা কর্পোরেটে সবার নামই ধর্ষকের খাতায়। এমনকি অনেক নারীকেও সহযোগী হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

    বাংলাদেশের সমাজকে তার নিজস্বতায় ফিরিয়ে আনা না গেলে, বিদেশি কালচারকে জোর করে চাপিয়ে দিয়ে এই অবক্ষয় রোধ করা যাবেনা।

    সামাজিক নিরাপত্তা সমাজভুক্ত সকলের পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমেই নিশ্চিত করা সম্ভব। তাই বাংলাদেশের প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা নিজস্ব সংস্কৃতির পুনরায় প্রতিস্থাপন জরুরী।

    ধর্ষণ রুখতে লিঙ্গ বৈষম্য, ধনী গরীবের বৈষম্য, ধর্মের বৈষম্য বন্ধ করতে হবে।।

    লেখক: এক্টিভিস্ট

    বি:দ্র: মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত কলামের দায়-দ্বায়িত্ব লেখকের। প্রভাতী সংবাদ কর্তৃপক্ষ কোন দায় বহন করবে না।

    © এই নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
    / month
    placeholder text

    সর্বশেষ

    রাজনীাত

    বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্য বিদেশে হাসপাতাল খোজা হচ্ছে

    প্রভাতী সংবাদ ডেস্ক: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্যে আবেদন করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা মনে করেন আবেদনে সরকারের দিক থেকে ইতিবাচক...

    আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ

    আরো পড়ুন

    Leave a reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    spot_imgspot_img