পারভেজ মাহমুদ হীরা
ক্ষমতার প্রথম দিকে নিজের চা বিক্রেতা পরিচয় নিয়ে বেশ গর্বিত ছিলেন মিস্টার নরেন্দ্র মোদী। আদতে ব্যাপারটা ছিলো পুরাই এক ভড়ং। ধীরে ধীরে তার উচ্চাকাঙ্খা প্রকাশ পেতে থাকে।
ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ধোঁয়া তুলে ভারতীয় জনগণকে দ্বিতীয়বারের মতো বিভ্রান্ত করে ক্ষমতায় আসবার কিছু পরেই অযোধ্যায় বাবরী মসজিদের স্থানে রাম মন্দির স্থাপন ও কাশ্মীরের স্বাধীনতার টুটি চেপে ধরা দুটি সিদ্ধান্তে তার আসল চেহারা প্রকাশিত হয়ে পড়ে।
প্রকৃতপক্ষে মোদীজি বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ থেকে ভারতকে উগ্র হিন্দুত্ববাদী দেশে পরিণত করবার বাসনা নিয়ে প্রবল বেগে এগিয়ে চলছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের সর্বশেষ বিধানসভা নির্বাচনে মোদী ক্যারিশমায় বেশ বড়সড় আঘাত পড়েছে মমতার তৃণমূল কংগ্রেসের নিরঙ্কুশ বিজয়ে। নির্বাচনের আগে মোদীজি ও তার কুকর্মের দোসর অমিত শাহ’র লম্ফঝম্প ছিলো দেখার মতো।
সাধারণ মানুষের তাই প্রবল আগ্রহ ছিলো কে জিতবে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে! একপর্যায়ে মানুষ ধরেই নিয়েছিলো মোদীর বিজেপি আসতে যাচ্ছে ক্ষমতায়। করোনা পরিস্থিতিতে মোদীর সীমাহীন ব্যর্থতায় অতিষ্ঠ মানুষ মমতা বন্দোপাধ্যায় তথা তার তৃণমূল কংগ্রেসকে তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এনে মোদীর প্রবল বেগে এগিয়ে চলা ট্রেনকে সপাটে থামিয়ে দিয়েছে।
তারপর ও রাজ্যে বিজেপির ৭৭টি আসনে জয় তাদেরকে প্রধান বিরোধী দলে পরিণত করেছে যা বেশ চমকপ্রদ ফল বলা যায়। কারণ ঐতিহাসিকভাবে অসাম্প্রদায়িক পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ঝান্ডাবাহী বিজেপি’র ৭৭টি আসনে জয় পাওয়া মানে এখানে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান বেশ ভালোভাবেই জানান দিচ্ছে।
বাংলাদেশের আমজনতা বেশ কৌতুহল নিয়েই পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিলো। নির্বাচনের কিছু আগে বাংলাদেশকে নিয়ে অমিত শাহ এক বক্তব্যে বেশ কটাক্ষ করে বলেছিলেন যে ‘বাংলাদেশের গরিব মানুষ খেতে পায় না তাই খাদ্যের আশায় তারা পশ্চিমবঙ্গে ভিড় করছে।’
সেই সাথে তিনি অঙ্গীকার করেছিলেন যে ‘নির্বাচনে জিতলে একজন বাংলাদেশিও যেন অনুপ্রবেশ করতে না পারে, তা তিনি নিশ্চিত করবেন।’ মমতার জয়ে বাংলাদেশিরা সন্তুষ্ট হলেও তিস্তা নিয়ে মমতার গোয়ার্তুমি এখনো ভুলে যায়নি। এখন দেখবার বিষয় ৭৭ আসনের বিজেপি তার সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিয়ে বাংলাতে কিভাবে প্রভাব বিস্তার করবার ফন্দি আঁটছে!
বি:দ্র: মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত কলামের দায়-দ্বায়িত্ব লেখকের। প্রভাতী সংবাদ কর্তৃপক্ষ কোন দায় বহন করবে না।