প্রভাতী সংবাদ ডেস্ক:
৭৯ খ্রিস্টাব্দে ইতালির ভিসুভিয়াস পর্বতে যে অগ্ন্যুৎপাত ঘটে তা ইতিহাসের অন্যতম মারাত্মক অগ্নুৎপাতগুলির একটি। ভিসুভিয়াস পর্বতের অগ্নুৎপাতের কারণে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার উঁচু পর্যন্ত উঠেছিল অতি অতি উচ্চ তাপমাত্রার টেফরা এবং গ্যাসের মারাত্মক মেঘ, যা থেকে প্রতি সেকেন্ডে ১.৫ মিলিয়ন টন পরিমাণ বিগলিত শিলা, বিচূর্ণ ঝামা পাথর ও আগ্নেয়ভস্ম নির্গত হয়।
অনুমেয় যে এই উদ্গিরণের দ্বারা হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক হামলার চাইতে ১০০,০০০ গুণ বেশি তাপশক্তি উৎপন্ন হয়েছিল। ২৪ অক্টোবর, ৭৯ খ্রিস্টাব্দে ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুৎপাত পম্পেই এবং আশেপাশের শহরগুলি ওপ্লোনটিস, স্ট্যাবিয়া এবং হারকুলেনিয়ামকে ছাই, কাদা এবং শিলার টুকরোর নিচে সমাহিত করে।
প্রত্নতাত্তিক খননের ফলে উক্ত স্থানগুলির প্রাক্তন অধিবাসীদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়, ফলে স্থানটি এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র, একই সাথে যা ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান ও ভিসুভিয়াস জাতীয় উদ্যানের অংশ।
আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে পম্পেই নগরীতে মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। এদের অধিকাংশই জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির ছাই এবং গ্যাসের বিশাল মেঘের কারণে শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছিল।
মানুষের জন্য লাভার চেয়ে মেঘ অনেক বেশি বিপজ্জনক কারণ মেঘ অত্যন্ত দ্রæত ছড়িয়ে পড়ে যার সর্বোচ্চ গতিবেগ ৪৫০ মাইল পার আওয়ার পর্যন্ত।
আগ্নেয়গিরি থেকে ১২ মাইল ব্যাপী এলাকা মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে ছাইয়ের চাদরে ঢেকে যায়।
উল্লেখিত দুইটি শহরের মোট বাসিন্দা ছিলো ১৬,০০০-২০,০০০ জন। এখন পর্যন্ত ১৫০০ মরদেহের অবশিষ্টাংশ পম্পেই এবং হারকুলেনিয়ামে পাওয়া গিয়েছে, যদিও সর্বমোট মৃত্যু তালিকাটি এখনো অসম্পূর্ণ ও অস্পষ্ট।
তবে ধারণা করা হয় অগ্ন্যুৎপাতের ফলে কমপক্ষে ২ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ৭৯ খ্রিস্টাব্দে মাউন্ট ভিসুভিয়াসের অগ্নুৎপাতের সময় ভয়াবহ মৃত্যুতে মারা যাওয়া পলাতক’ ব্যক্তির কঙ্কালের অবশিষ্টাংশ পাওয়া গেছে, যা একসময় হারকুলেনিয়াম শহরে ছিল – গবেষকরা এটিকে ‘চাঞ্চল্যকর আবিষ্কার’ বলে অভিহিত করেছেন।
ইতালীয় প্রত্নতাত্তিক ফ্রান্সেসকো সিরানোর নেতৃত্বে গত ২৫ বছরের মধ্যে এই সাইটে প্রথম খনন কার্য পরিচালিত হয়। সিরানো এবং তার দলটি বিশেষ ধাতব ব্লেড ব্যবহার করে ধীরে ধীরে এবং সাবধানতার সাথে লাভা শিলায় ১,৯৪২ বছর ধরে আটকে থাকা কঙ্কালটি বের করে আনেন।
প্রত্নতাত্তিকরা এক বিবৃতিতে বলেছেন,
এই গল্পের নায়ক একজন কঙ্কাল। প্রত্নতাত্তিকরা ধারণা করছেন যে সম্ভবত সে পলাতক ছিল, যিনি ঝলসানো ম্যাগমা, ছাই এবং বিষাক্ত গ্যাস থেকে কভারের সন্ধানে ডক করা জাহাজ থেকে পালিয়েছিলেন
হাড় বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানা গেছে যে ব্যক্তিটি ছিলেন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এবং বয়স ৪০ থেকে ৪৫ এর মধ্যে। উদ্ধারকৃত কঙ্কালটির পরিচয় নিয়ে গবেষকদল বিভিন্ন ধারণা পোষণ করছেন।
যদিও গবেষকরা অনুমান করছেন যে লোকটি পলাতক ছিল, তারা এটাও ধারণা করছেন যে তিনি একজন সৈনিকও হতে পারেন যিনি আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সময় আটকে পড়া লোকদের উদ্ধার করতে সাহায্য করছিলেন।
উল্লেখ্য, ১৯৮০ এবং ১৯৯০ -এর দশকে অগ্ন্যৎপাতের কারণে মৃত ব্যক্তিদের দেহাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা এরমধ্যে একজন সৈনিকের মৃতদেহের বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন যিনি হারকুলেনিয়ামের বাসিন্দাদের উদ্ধারের জন্য ছাই এবং গ্যাসের মধ্যে দৌড়ে গিয়েছিলেন।
লোকটিকে পাওয়া গেছে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের পিছনে থাকা ছাইয়ের মধ্যে। তার মুখ ছিল বালির মধ্যে ঢোকানো এবং বাহুগুলি সামনের দিকে এমনভাবে পজিশনে ছিল যেন সে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসছে।
প্রত্নতাত্তিকরা রৌপ্য এবং স্বর্ণের প্লেট দিয়ে সজ্জিত একটি চামড়ার বেল্ট খুঁজে পেয়েছেন যেটাতে হাতির দছাতের তৈরি খাপে ব্যক্তিটির তলোয়ার বাঁধা ছিল। তার শরীরের অন্য পাশে বেল্টের সাথে আরেকটি খঞ্জর বাঁধা ছিল।
সিরানো আরও মন্তব্য করেন যে সে হয়তো পলাতকদের মধ্যে একজন, যারা দল থেকে দূরে সরে গিয়ে একটি লাইফবোটের উপর আরোহণ করার আশায় সমুদ্রে পৌঁছেছিল।
সাম্প্রতিক খননে তার বর্মের একটি অংশ এবং ছোট একটি ছুতার তৈরির সরঞ্জাম দ্বারা পরিপূর্ণ একটি ন্যাপস্যাক খুঁজে পাওয়া গেছে যা তাঁর আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের বিষয়ে ইঙ্গিত প্রদান করে।