যশোর ব্যুরো
যশোরে হঠাৎ করেই করোনা আক্রমণে ভয়াবহ অবস্থা। যশোর জেনারেল হাসপাতালের করোনা ডেডিকেটেড ইউনিটের ৮০ শয্যা পূর্ণ হওয়ার পরে গুরুতর অসুস্থ রোগীদেরও ফ্লোরিং করতে হচ্ছে।
গত সাতদিনে করোনা ও করোনা উপসর্গে জেলায় মারা গিয়েছে ৫১ জন। এক সপ্তাহে এর আগে এতো রোগী মারা যায়নি।
এরমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে করোনা আক্রান্ত দুজন ও উপসর্গে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার ৩৪৩টি নমুনা পরীক্ষায় ১২১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ হিসেবে আক্রান্তের হার ৩৫ শতাংশ।
বুধবার (২৩ জুন) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো. সায়েমুজ্জামান।
তিনি জানান, জেনারেল হাসপাতালের করোনা ডেডিকেটেড ইউনিটে ভর্তি আছেন ৮৮জন এবং আইসোলেশন ওয়ার্ডে আছেন ৫৩ জন। করোনা সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় চলমান বিধিনিষেধ বাড়ানো হয়েছে আরও সাতদিন।
সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বিধিনিষেধ এলাকাভিত্তিক থেকে জেলাজুড়ে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। যা কার্যকর করতে এবার আরও কঠোর হবে প্রশাসন। ওষুধের দোকান ছাড়া নিত্যপণ্যের দোকান খোলা থাকবে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। এছাড়া পণ্যবাহী ট্রাক ও অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া সব গণপরিবহন বন্ধ থাকবে।
করোনা সংক্রমণের রুখতে ৭ দিনের কঠোর লকডাউনে যশোর। আজ বুধবার থেকে কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য ও কৃষি সেবা ছাড়া বাকি সবকিছুই লকডাউনের আওতাভূক্ত।
জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আগামী ২৩ জুন ২০২১ তারিখ রাত ১২.০১ টা হতে ৩০ জুন, ২০২১ তারিখ পর্যন্ত যশোর জেলায় এসব বিধি-নিষেধ জারি থাকবে।
মঙ্গলবার দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন।
শয্যা খালি না থাকায় অন্তত ৩০ জনকে হাসপাতালের মেঝেতে রাখা হয়েছে। এখন হাসপাতালের মেঝেতেও জায়গা নেই।
যশোর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আরিফ আহমেদ বলেন, ‘যশোরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। কঠোর লকডাউন ছাড়া এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। হাসপাতালে করোনা রোগীদের জায়গা দেয়া যাচ্ছে না। চাপ কমানোর জন্য মঙ্গলবার থেকে বেসরকারি জনতা হাসপাতালে ভারতফেরত রোগীদের রাখা হচ্ছে।’
বিধি-নিষেধ সমূহ-
(ক) বিধি-নিষেধ চলাকালীন যশোর জেলার অভ্যন্তরীণ সকল রুটে এবং আন্তজেলা বাস, ট্রেন ও সকল প্রকার গণপরিবহণসহ সিএনজি, রিক্সা, ভ্যান, অটোরিক্সা, মোটরসাইকেল, থ্রিহুইলার, হিউম্যান হলার চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে রোগী পরিবহনকারী/এ্যাম্বুলেন্স, জরুরি পণ্য বহনকারী ট্রাক এবং জরুরি সেবা দানের ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে না;
(খ) কাঁচাবাজার, ফুল ও নিত্য প্রয়োজনীয় (মুদিখানা) পণ্যের দোকান দুপুর ১২.০০টা পর্যন্ত খোলা ধাকবে। এছাড়া সকল ধরণের দোকানপাট, শপিংমল, হোটেল, রেস্তোরা, চায়ের দোকান, বিপণীবিতান বন্ধ থাকবে। ওষুধের দোকান সার্বক্ষণিক খোলা রাখা যাবে;
(গ) আইন-শৃঙ্খলা ও জরুরি পরিষেবা যেমন-কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য, দুগ্ধ পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা কার্যক্রম, বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বেনাপোল স্থলবন্দরে জরুরি আমদানি-রপ্তানি, নওয়াপাড়া বন্দরের সার সরবরাহসহ অন্যান্য কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি, বেসরকারি) গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাকসেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ, স্থানীয় সরকারের অধীন অফিসসমূহ, সরকারি অফিসসমূহ, তাদের কর্মচারি ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভুত থাকবে;
(ঘ) সবাইকে অবশ্যই ঘরে অবস্হান করতে হবে। অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। জরুরি প্রয়োজনে চলাচলকারী সকলকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধান করতে হবে;
(ঙ) শিল্প-কলকারখানাসমূহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। শ্রমিকদের স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে;
(চ) সকল পর্যটনস্থল, পার্ক, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। জনসমাবেশ হয় এমন ধরণের সামাজিক (বিবাহ, জন্মদিন, পিকনিক, হালখাতা, পার্টি ইত্যাদি), রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জমায়েত বন্ধ থাকবে;
(ছ) স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ওয়াক্তের নামাজ মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জিন ও খাদেমসহ সর্বোচ্চ ৫ জন ও জুম্মার নামাজ সর্বোচ্চ ২০ জন জামাতে আদায় করবেন। অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও এর বেশি জমায়েত হওয়া যাবেনা;
(জ) সকল জরুরি নির্মাণ কাজ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে চলমান থাকবে এবং এ সংক্রান্ত পণ্য পরিবহন বিধি নিষেধের আওতাবহির্ভুত হবে;
(ঝ) জেলার সকল গরুর হাট বন্ধ থাকবে।