নিজস্ব প্রতিবেদক
কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার (২১) রহস্যজনক মৃত্যুর পর গা ঢাকা দেওয়া তার প্রেমিক বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর দীর্ঘ ৩৩ দিন পরে প্রকাশ্যে এসেছেন। বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের নামে প্রতিষ্ঠিক ক্রীড়া সংগঠনের পরিচালক হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে সমালোচনার ঝড়।
গত ২৯ মে কুড়িল বিশ্বরোড সংলগ্ন বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে তাকে দেখা গেল। লোকচক্ষুর আড়ালে থাকার পর হঠাৎ করেই জনসমক্ষে এসেছেন মুনিয়া হত্যা মামলার প্রধান আসামি আনভীর।
এ নিয়ে উদ্বেগ, হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুনিয়ার বড় বোন ও মামলার বাদী নুসরাত জাহান তানিয়া ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি মেহেদী হাসান।
তারা বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধার কন্যা মোসারাত জাহান মুনিয়ার রহস্যজনক মৃত্যুকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড মনে করছি। এ মামলার প্রধান আসামি ও মুনিয়ার ঘাতক প্রেমিক বসুন্ধরা এমডিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এমন একজন আসামির প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া অত্যন্ত দুঃখজনক ও বেআইনি। ফলে জনগণের কাছে এমন বার্তা যাচ্ছে- ক্ষমতাশালী ও বিত্তবানরা যেন আইনের ঊর্ধ্বে। অথচ আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান হওয়ার কথা। মুনিয়া ‘হত্যাকাণ্ডে’ তার প্রেমিক আনভীরকে গ্রেফতার না করে প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দেয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভ‚মিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। মাত্র তিনদিন আগেও তার গ্রেফতারের দাবিতে আমরা জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছি।
রাশেদ আলম ফেসবুকে লিখেন, ‘শেখ রাসেল বেচে থাকলে, উনার বয়স হতো ৫৭। হয়তো উনিই হতেন শেখ রাসেল ক্রিড়া চক্রের প্রেসিডেন্ট। আনবিরের মতো এমন জঘন্য একটা লোককে কে শেখ রাসেল রাখতেন ক্লাবে? পাশে বসতে দিতেন?
নেত্রী আপনি ১৫ আগষ্ট নিয়ে যখন কথা বলেন, রাসেলের নাম নেয়ার সময় চোখ মুছতে দেখি। আপনার একার নয় রাসেলের প্রশ্নে দেশের কোটি মানুষের মন কাঁদে নিশ্চিত।’
রাশেদ আলমের স্ট্যাটাস শেয়ার দেন অনলাইন এক্টিভিস্ট শরিফুল হাসান। তার স্ট্যাটাসের কমেমন্টে বিভিন্ন এক্টিভিস্ট’রা এটার সমালোচনা করেছেন।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল পুলিশ কমকর্তারা কথা বলতে রাজি হননি। তারা শুধু বলছেন, আমরা এখনো ময়নাতদন্তসহ ফরেনসিক প্রতিবেদন পাইনি। তবে থেমে নেই তদন্ত।
তবে আরেকটি গোয়েন্দা সূত্র বলছে, দুই সন্তানের জনক আনভীরের পরকীয়াকাণ্ডে প্রেমিকা মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় আপাতত তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও শেষ রক্ষা নাও হতে পারে। এখনো তিনি গ্রেফতার না হলেও গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন। শীর্ষ মহলের সবুজ সংকেত পেলে যেকোনো সময় আনভীরকে গ্রেফতার করা হবে। কারণ মুনিয়া-আনভীরের গভীর প্রেম ও পরবর্র্তীতে বিয়ে না করে এক পর্যায়ে ওই তরুণীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার বিষয়টি মামলার তদন্তে উঠে এসেছে। হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা। মুনিয়ার ফ্ল্যাটে আনভীরের যাতায়াতের প্রমাণ তারা পেয়েছেন।
শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনকালে বসুন্ধরা এমডি সায়েম সোবহান আনভীরকে ছাইরঙা টুপি, কালো সানগ্লাস, কালো মাস্ক, কালো টি-শার্ট ও গাঢ় নীল প্যান্ট পরিহিত বসা অবস্থায় দেখা গেছে। এর খবর একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।