নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীতে এক কিশোরীকে মারধরের ঘটনায় সাদ্দাম হোসেন ওরফে টিকটক হৃদয়কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ তাকে সোমবার গ্রেপ্তার করে।
টিকটক, ফেসবুক ব্যবহার করে মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে সর্বস্বান্ত করে আসছিলো সাদ্দাম হোসেন ওরফে টিকটক হৃদয়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে ভিকটিমের নাম-পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
কিছুদিন আগে টিকটক হৃদয় নামে আরেক নারী পাচারকারীকে নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেফতার করে ভারতীয় পুলিশ।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল একটি ভিডিও বাংলাদেশ পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইংকে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি পাঠান একজন সচেতন নাগরিক।
ভিডিওতে দেখা যায়, কোনো একটি ওভারব্রিজে পথচারীদের উপস্থিতিতেই এক কিশোরীকে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির পাশাপাশি অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি এবং নির্বিচারে মাথায় ও গালে আঘাত করছেন এক যুবক। ঘটনাস্থলে যুবকের সঙ্গে একটি মেয়েসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে যাত্রাবাড়ী থানার শনির আখড়া ফুটওভার ব্রিজের ওপর ঘটনাটি ঘটে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক সোহেল রানা।
তিনি জানান, ভিডিওটি হাতে পেয়ে যাত্রাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাজহারুল ইসলামের কাছে পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয় মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি তাৎক্ষণিকভাবে অভিযুক্ত ও ভিকটিমকে খুঁজে বের করতে তার একটি টিমকে নিয়োজিত করেন।
ভিডিওতে কোনো নাম-ঠিকানা বা কোনো প্রাসঙ্গিক তথ্য না থাকায় গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে অভিযুক্তের নাম পরিচয় বের করা হয়। পরে জানা যায়, অভিযুক্ত যুবকের নাম সাদ্দাম হোসেন ওরফে হৃদয়। যাত্রাবাড়ী এলাকায় তার বসবাস।
পুলিশ কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, ‘ঘটনাস্থল বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভিকটিম মেয়েটিকে আগে কেউ কখনো দেখেনি। যাই হোক, হৃদয়কে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ নানা স্থানে অভিযান চালায়।
‘কিন্তু ঘটনার পরপরই চতুর হৃদয় এলাকা ত্যাগ করে। ভিন্ন ভিন্ন স্থানে অবস্থান করে সে। পুলিশও তার পিছনে দীর্ঘদিন লেগে থাকে। অবশেষে ১৪ জুন বিকেলে তাকে গ্রেপ্তার করে।’
তিনি বলেন, ‘হৃদয়কে গ্রেপ্তারের পর জানা যায়, সে টিকটকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে তার বিকৃত অদ্ভুত স্টাইল প্রচার করে মেয়েদেরকে কৌশলে আকৃষ্ট করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে সর্বস্বান্ত করে আসছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় মেয়েদেরকে জিম্মি করে টাকা-পয়সা আদায় করত সে। মেয়েদেরকে উত্ত্যক্ত করত ও সম্ভ্রমহানি করত।’
সোহেল রানা বলেন, ঘটনাটি ঘটেছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন্স-ডেতে। ভিকটিমকে খুঁজে বের করে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে বিষয়টির সঙ্গে লেগে থেকে অপরাধীকে খুঁজে বের করে তাকে আইনের আওতায় এনে পেশাগত আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছেন যাত্রাবাড়ীর ওসি।
তিনি জানান, এ বিষয়ে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ওয়ারী জোনের ডিসি শাহ ইফতেখার আহমেদ থানার সার্বিক কার্যক্রম নিবিড়ভাবে তদারকি করেছেন। মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং বিষয়টির সঙ্গে নিরন্তর যুক্ত থেকে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করেছে।
আটক সাদ্দাম হোসেন ওরফে হৃদয় একটি হত্যা মামলারও পলাতক আসামি ছিলেন বলে জানান তিনি।
সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক তরুণীকে বিবস্ত্র করে শারীরিক ও যৌন নিপীড়ন করছে তিন-চার যুবক ও একটি মেয়ে। পুলিশের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, ভারতে ওই যৌন নিপীড়নকারী যুবকদের একজন বাংলাদেশের ‘টিকটক হৃদয় বাবু’। আলোচিত ওই ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তারও করেছে বেঙ্গালুরু সিটি পুলিশ।