নিজস্ব প্রতিবেদক;
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দইখাওয়া কলেজে একটির উপর আরেকটি বই দিয়ে ফটক তৈরি করেছেন অধ্যক্ষ মোফাজ্জল হোসেন। ফটকে জায়গা করে নিয়েছে দেশ-বিদেশের বিখ্যাত লেখকদের বই। তার উপরেই রাখা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পতাকা সম্বলিত একটি গ্লোব।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য কথাসাহিত্যিক ও লেখকদের উল্লেখযোগ্য ৫০টি বইয়ের মোড়ক দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এ ফটক। বইয়ের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক থাকা একটি প্রতিষ্ঠানের ফটক তো এমনই হওয়া উচিত।
কংক্রিটের ফটকটি এতটাই সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর যে, তা দেখতে প্রতিদিনই কলেজের সামনে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষসহ অন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।
কলেজের পুস্তক তোরণের উভয় পাশে ২৫টি করে ৫০টি বই দেয়া আছে। বাংলাদেশে সম্ভবত এটিই প্রথম বইয়ের আকারে বানানো গেট।
কলেজটির দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীতে এসে অনেক ছাত্র-ছাত্রী বই পড়ার আগ্রহ হারিয়েছে। এই গেটটি দেখার পর বই পড়ার আগ্রহ জাগে। কেননা দুই পাশে অনেক স্বনামধন্য সাহিত্যিকদের বই রয়েছে। যারা বইপ্রেমী বা যেই এর সামনে দিয়ে যাক না কেন গেটটি দেখার জন্য একটু তাকে দাঁড়াতেই হবে।’
হাতীবান্ধা-চাপারহাট সড়কের পাশেই এই কলেজটির ব্যতিক্রমী ফটকটি। তবে দূর থেকে দেখলে মনেই হয় না এটি সিমেন্টের তৈরি কোনো ফটক।
ফটকের দুই পিলারের প্রত্যেকটিতে রয়েছে কংক্রিট দিয়ে তৈরি ২৫টি করে বই। যার গায়ে রং করে লেখা আছে বিভিন্ন বিখ্যাত বই ও লেখকদের নাম। ফটকের উপরে রয়েছে বিভিন্ন দেশের পতাকা সম্বলিত একটি গ্লোব।
মনোমুগ্ধকর ফটকটি তৈরি করতে সময় লেগেছে প্রায় এক বছর। কলেজ ফান্ড থেকে কিছু টাকা বরাদ্দ দিয়ে গত বছর নির্মাণ কাজ শুরু করার পরে প্রায় এক বছর লাগলো নির্মাণ কাজ শেষ করতে।
কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোফাজ্জল হোসেন জানান, উপজেলার মদাতী ইউনিয়নের প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা করে কলেজটিতে। স্বভাবতই সেখানে নেই কোনো গণগ্রন্থাগার।
কলেজে যে গ্রন্থাগারটি আছে সেটিও ছোট। এজন্য শিক্ষার্থীদের বই পড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি করতে অন্যদের সঙ্গে কথা বলে তিনি এমন ফটক তৈরির উদ্যোগ নেন।
তিনি বলেন, ‘এখানে বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন লেখকের বই বিশেষ করে যারা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন তাদের বই আছে। আমরা যেহেতু রংপুর বিভাগের মানুষ। আমরা রংপুরের মানুষকে উপরে রেখেছি। সে কারনে আনিসুল হক, কবি শেখ ফজলুর করিমের বই রেখেছি।
‘এ ছাড়া বঙ্কিম চন্দ্র, রবীন্দ্রনাথসহ বিভিন্ন নাম করা লেখকের বই রেখেছি ফটকটিতে। যাতে ওইসব লেখকের বই পড়ার আগ্রহ জন্মে। এটি করা, যাতে ছেলে-মেয়েরা বই পড়ে।’
কলেজটির প্রধান ফটক মানুষের প্রধান আকর্ষণ হলেও ভেতরের পরিবেশও সুন্দর। রয়েছে দৃষ্টিনন্দন একটি শহীদ মিনার, যার পেছনেই রয়েছে একটি বই। দেখলে মনে হয় শহীদ মিনারটিকে আগলে রেখেছে বইটি। সেই বই জুড়ে রয়েছে কিছু বর্ণ। রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ছবি।