ফারজানা রহমান, এ্যানি:
যে মেয়েটি প্রতিদিন সকালে ভিড়ে ভরা বাসে আপনাদের ঠেলে অফিস করতে ঘর থেকে বের হচ্ছে
তাকে দেখে আপনি খুব বিরক্ত হন , তাই না?
স্বভাব বসত বলে ফেলেন কি দরকার বাহিরে বের হওয়ার ;
একবার ভেবেছেন কেন তাকে ঘর হতে ছুটতে হচ্ছে বাহিরে,
তার জন্য বাসের সীমিত সংরক্ষিত আসন নিয়েও আপনার বড় আপত্তি,
কেন থাকবে আসন তাদের জন্য!
তারাতো সম অধিকার বিশ্বাস করে,
তাহলে তাদের জন্য কেন এই বিশেষ আয়োজন?
তাই শ্রমজীবি নারী প্রতিনিয়ত বাস স্ট্রপে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় প্রতিদিন;
বাসের হেলপার,যাত্রী অথবা চালক সবার আপত্তি,
কি দরকার ভির ঠেলে বাসে উঠার?
তারপর যদিও উঠতে পারে বাসে,
সেখানেও নানা বিপত্তি;
কেউ কনুই দিয়ে বিশেষ জায়গায় স্পর্শের চেষ্টা,
ইচ্ছে করে শরীর ছুঁয়ে চলে যাওয়া;
আপনি প্রতিবাদ করবেন,
উত্তর আপনার মুখস্থ;
শরীর যদি সোনা দিয়ে তৈরি হয়
তবে লোকাল বাসে চড়া কেন, সাথে বিকৃত হাসি?
সেই হাসির সাথে যুক্ত হয়ে যায় বাসের আর সব যাত্রীরাও,
কেউ পছন্দ না করলেও প্রতিবাদে রাজী নন,
এমন ভাব আপনার তাতে কি যায় আসে!
এতো আপনার মা,স্ত্রী অথবা মেয়ে নয়,
নয় স্বজন বা পরিজন;
তাহলে আপনার কেন এত মাথা ব্যাথা?
ভেবেছেন কখনো,আপনাদের বাড়ির মেয়েটির প্রয়োজন পরে ঘরের বাহির হবার।
তখন যদি কেউ এভাবেই তাকে অপদস্থ করে?
তখন কি আপনাদের খারাপ লাগবে?
আপনি প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠবেন?
প্রতিরোধের জন্য সচেষ্ট হবেন?
অথবা সহ্য করতে না পেরে একটা কিছু করেবেন?
এমনিই তো হওয়ার কথা;
তবে যাদের আপনার চোখের সামনে প্রতিনিয়ত এভাবেই নিগৃহীত হতে দেখেন ,
তাদের জন্য না হয় একটু আওয়াজ তুলুন,
দেখবেন যে মেয়েটি প্রতিদিন কাক ডাকা ভোরে
হাতে টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে ছুটছে কারখানায়,
অথবা বাসে করে সময় মত সংসার সামলিয়ে
ছুটছে অফিস পাড়ায়;
খোঁজ নিয়ে দেখুন,সেই মেয়েটি মাস শেষে বেতন তুলে প্রথমে ছুটে বিকাস অফিসে ;
বাড়িতে অপেক্ষারত সন্তানের মুখে দুবেলার খাবারের যোগান দিতে,
হয়তো বা বাবার ঔষধের টাকা পাঠাতে
অথবা ভবিষ্যতে ভাই দেখবে এই ভরসায়
বেতনের সিংহ ভাগ তার বিলাসী শিক্ষা জীবনের
খরচ জোগাতে,
এভাবে ভেবেছেন কখনো ?
সে ইচ্ছে করে ঘর থেকে বাহিরে আসেনি,
প্রয়োজন তাকে করেছে বাধ্য,
হয়তো তার ভাগ্য আপনাদের পরিবারের
নারীর মত সুপ্রশস্ত নয়,
নয় ভাল ভাবে বেঁচে থাকার জন্য মশৃন!
মানুষ হিসেবে আমরাই পারি ,
এই অগ্রগামী নারীগুলোকে এগিয়ে যেতে
সহযোগিতা আর সন্মান দিয়ে পাশে থাকতে?
হয়তো সে আপনার কেউ না,
হয়তো তার ভাল থাকায় আপনার যায় আসে না ,
তাতে কি, মানুষ হয়ে তার পাশে দাঁড়িয়ে দেখেন,
দেখবেন আপনি কত আনন্দ পাচ্ছেন,
নারীর জন্য যথাযোগ্য বাসভূমি তৈরি করে দেখেন,
আপনি কত শান্তিতে, সুখে সমৃদ্ধিতে বেঁচে আছেন;
সত্যি কারের মানুষ হয়ে উঠার মজায় সেখানে।
তাই অবহেলা নয় ভালোবেসে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার
সময় এসে গেছে ,
এইতো সময় জেগে উঠার!
আপনি জাগলেই পরিবর্তন সম্ভব,
পরিবর্তন হবে সবাই কে ঘিরে।
লেখক: কবি, সাহিত্যিক ও উন্নয়ন কর্মী