যশোর ব্যুরো
করোনা ও করোনা উপসর্গে একদিনের ব্যবধানে যশোরে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের করোনা ডেকিকেট আইসোলেশনের রেডজোনে ৯ জন ও সাধারণ ওয়ার্ডে করোনা উপসর্গ নিয়ে ৬ জন মারা যান।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আক্তারুজ্জামান জুয়েল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, হাসপাতালে বর্তমানে ১৩০ জন রেড জোনে ও ইয়েলো জোনে ৭২ জন চিকিৎসাধীন আছে। রেড জোনের ১৩০ জনের মধ্যে ১১ জন আইসিইউ’তে আছেন।
২৪ ঘন্টার ব্যবধানের জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন আরও ২৫০ জন। করোনা সংক্রমণ রোধে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে গত দুদিন ধরে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশের নেতৃত্বে একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে কাজ করছে।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজেস্ট্রেট কাজী মো. সায়েমুজ্জামান বলেন, আমরা যশোর জেলায় কঠোর লকডাউন কার্যকর করে চলেছি। আশা করেছিলাম সংক্রমণের হার কমবে কিন্তু সাধারণ মানুষের অসচেতনতা এবং বেপরোয়া চলাফেরার কারণে সংক্রমণ উর্ধ্বগতির হ্রাস হয়নি। আমরা আশা করবো যশোরের মানুষ আরো সচেতন হবে। করোনার হার উর্ধ্বগতি আপনার ঘরে থাকুন সুস্থ মাক্স স্বাস্থবিধি মেনে চলুন।
যশোর সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন বলেন, গ্রামের মানুষ করোনা উপসর্গকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। ঘরে সর্দি-কাশি জ্বর থাকলেও তারা এটিকে স্বাভাবিক জ্বর মনে করে নমুনা পরীক্ষা করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। এজন্য জেলায় করোনা আক্রান্ত ও মৃতের হার বেড়েই চলছে।
যশোরে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ৪২ শতাংশ ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট
যশোরে করোনার ভারতীয় ডেল্টা ধরণ ৪২ শতাংশ ও আফ্রিকার গামা ধরণ ৩০ শতাংশ ছড়িয়ে পড়েছে। যা এখন গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতীয় ধরণে আক্রান্ত একজন রোগী ৬ জনকে আক্রান্ত করছে। তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হবার আশংকা ৮৩ শতাংশ, আর আফ্রিকার ধরণে হৃদরোগে আক্রান্ত হবার আশংকা ৬০ শতাংশ।
যশোর জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এপর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দেড়শ’ ছাড়ালো। এই সময়ে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৪২ জনের। ৫৩৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে সনাক্তের এই সংখ্যা পাওয়া গেছে।
যশোর বিজ্ঞাণ ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টারের সহকারী পরিচালক অধ্যাপক ড, ইকবাল কবীর জাহিদ জানান, যশোরে করোনার ভারতীয় ডেল্টা ধরণ ৪২ শতাংশ ও আফ্রিকার গামা ধরণ ৩০ শতাংশ ছড়িয়ে পড়েছে। যা এখন গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে। ভারতীয় ধরণে আক্রান্ত একজন রোগী ৬ জনকে আক্রান্ত করছে। তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হবার আশংকা ৮৩ শতাংশ, আর আফ্রিকার ধরণে হৃদরোগে আক্রান্ত হবার আশংকা ৬০ শতাংশ। এটাকে আটকাতে হলে দ্রুত টিকাদান অথবা মানুষের শরীরে ইমিউনিটি বাড়াতে হবে। না পারলে সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতি আসতে পারে।
যশোরের জেলা প্রশাসক মো: তমিজুল ইসলাম খান জানান, যশোরে করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। শনাক্তের উর্ধ্বগতি রুখতে কঠোর বিধি-নিষেধ কার্যকরে কাজ করছে জেলা প্রশাসন। বিধিনিষেধ প্রতিপালনে গতকাল থেকে সেবাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের যৌথ অভিযান শুরু হয়েছে। করোনা রুখতে জনগণকেও সচেতন হওয়ার পাশাপাশি বিধিনিষেধ প্রতিপালনে সকলের সহযোগিতাও কামনা করেছেন তিনি।
যশোরে শাটডাউন পালনে কঠোরতা
আজ শনিবার যশোরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাদির হোসেন শামীম, হিল্লোল চাকমা ও আবু নাসিরের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত সকাল দশ’টায় যশোর সিভিল কোর্ট চত্বরে কয়েকজনকে জরিমানা করেছে।
শুক্রবার যশোরে শাট-ডাউনে করোনা বিধি না মানায় ১৩ অভিযানে ৫৪ জনকে ৩২,২৫০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছিলেন যশোরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাদির হোসেন শামীম।
করোনা’র দ্বিতীয় ধাক্কা প্রতিরোধে লকডাউন
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে শাটডাউন। শাটডাউন বাস্তবায়নে সরকার সর্বোচ্চ কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে।
শাটডাউনের সময় জরুরি কারণ ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে এলে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সরকারি এক তথ্য বিবরণী জারি করা হয়েছিল।
এতে বলা হয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে সারাদেশে সাতদিনের জন্য জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচল এবং বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এ সময়ে জরুরি পরিসেবা কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ছাড়া এবং জরুরি কারণ ছাড়া ঘরের বাইরে কেউ বের হতে পারবে না। যদি কেউ বের হয় তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গত বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বিধি নিষেধ ও নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রজ্ঞাপনে দেয়া হয়। সবাইকে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে সরকার।
মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে খোলা থাকবে কাঁচাবাজার। কিন্তু সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা করতে হবে। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন, বাজার কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় প্রশাসনকে দায়িত্ব দিয়েছে সরকার।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বৃহস্পতিবার থেকে সাত দিনের শাটডাউন বা কঠোর বিধিনিষেধে অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছে সরকার। এ নির্দেশ অমান্য করে কেউ বাড়ির বাইরে গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বুধবার দেয়া এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। এতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত এই শাটডাউন বা বিধিনিষেধ কার্যকর থাকবে।
তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আর জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্তরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তারা কারা সেটাও নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার।
এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন, বাজার কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় প্রশাসনকে দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। ফলে ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে এবং চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন বা সৎকারের জন্য বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে।
শাটডাউনে কারা বের হতে পারবে, কারা পারবে না?
যারা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকা নেবেন, তারা টিকা কার্ড দেখিয়ে বাইরে বের হতে পারবেন। আর খাবারের দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রি (অনলাইন/টেকওয়ে) করতে পারবে।
আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকায় বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট দেখিয়ে গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করতে পারবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় যেভাবে নির্দেশনা দেবে সেভাবে চলতে হবে।
সরকার শাটডাউন বাস্তবায়নে এবার সেনাবাহিনীকেও মাঠে নামাচ্ছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠপর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয়সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবে। এ ছাড়াও শাটডাউন বাস্তবায়নে মাঠে থাকবে বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও আনসার।
তারা কীভাবে টহল দেবে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সিদ্ধান্ত নেবেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। মাঠে থাকবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে।
আইনানুগ ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেবেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।