যশোর ব্যুরো
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহযোগী গোলাম মোর্শেদ বার্ধক্য ও শ্বাসকষ্ট জনিত কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে মধ্যরাতে ইন্তেকাল করেছেন। গোলাম মোর্শেদ বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত ব্যক্তিগত সহকারী(অবৈতনিক) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
হাজী গোলাম মোর্শেদের জানাযার নামাজ ও দাফন তাঁর পৈত্রিক বাড়ি যশোরের বেনাপোল বাহাদুরপুরে সকাল সাড়ে ১০ টায় অনুষ্ঠিত হয়। সকালে বিশেষ ব্যবস্থায় হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা থেকে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। মৃত্যুকালে তিনি চার কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন।
যশোরের শার্শা উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামে জন্ম গোলাম মোর্শেদের। ১৯৪৫ সালের দিকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রথম দেখা হয় কলকাতায়। এর পর থেকেই ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। ১৯৫৩ সালে যশোর সদর মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। এরপর ১৯৬৪ সালে ঢাকায় এসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনীতির পুরোটা সময় সহযোগী হিসেবে রাজনীতি করেছেন।
ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেই গ্রেফতার হয়েছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী গোলাম মোর্শেদ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর অবৈতনিক সহযোগী হিসেবে নিয়োগ দেন। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সেই দায়িত্ব পালন শেষে তিনি পরিবার নিয়ে চলে যান যশোরের নিজ গ্রামে।
সে বছরের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার খবর শুনে তিনি পাগলের মতো ছুটে আসেন ঢাকায়। যান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। কিন্তু তাঁকে কবরটিও দেখতে দেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর কবরের পাশে রোপণ করেন একটি বকুলগাছ। তার পর থেকে প্রতিবছর ১৫ই আগস্টে ছুটে যেতেন বঙ্গবন্ধুর মাজারে।
গতবছর সাংবাদিকদের সাথে আলাপচারিতায় গোলাম মোর্শেদ বলেছিলেন, “১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাতে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বসে কথা বলছিলাম। একজনের সঙ্গে আমি টেলিফোনে কথা বলার সময় হঠাৎই একটি শব্দ কানে আসে, ‘মাত মারো।’ পেছনে তাকানোর আগেই মাথায় প্রচণ্ড আঘাত, সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে পড়ে যাই। জ্ঞান ফিরে নিজেকে দেখতে পাই ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট হাসপাতালে। সেখান থেকে এয়ারফোর্সের একটি শেডে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুটা সুস্থ হয়েই জানতে চাই, বঙ্গবন্ধু কোথায়? আমাকে তাঁর কাছে নিয়ে যাও। এ কথা বলতেই আমার ওপর চলে দফায় দফায় নির্মম নির্যাতন। দীর্ঘ আট মাস পর জেল থেকে ছাড়া পাই।”