নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ নামের একটি সংগঠন গঠনের ঘোষনা দিয়েছেন ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীর। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নাম যুক্ত করে নতুন সহযোগী সংগঠন গঠনের ঘোষণায় দলের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এ ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
এদিকে বিভিন্ন সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে হেলেনার তোলা ছবি নতুন করে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সেসব ছবি পোস্ট করে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা তার উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
সম্প্রতি ফেসবুকে নেতা বানানোর ঘোষণা দিয়ে একটি ব্যানার পোস্ট করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ নামের একটি সংগঠন। নামসর্বস্ব এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে হেলেনা জাহাঙ্গীর এবং সাধারণ সম্পাদক মাহবুব মনির এর নাম দেখা যাচ্ছে। তাদের নাম ও ছবি সংবলিত পোস্টারে ছেয়ে যায় ফেসবুক। পদ নিতে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ইঞ্জিঃ সাইফুল ইসলাম ইমনের সাথে যোগাযোগের কথা বলা হয়েছে।
পোস্টারে লেখা হয়েছে, সংগঠনটির জেলা, উপজেলা ও বিদেশি শাখায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ দেয়া হবে। সংগঠনটির দাবি, গত দুই-তিন বছর ধরেই তারা আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে কাজ করছে তারা। এছাড়া অফিশিয়ালি অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সংগঠনটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনোরকম সম্পর্ক নেই।
নানা সমালোচনার মধ্যে শুক্রবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেয়া চাকরিজীবী লীগ গঠনের উদ্দেশ্য তুলে ধরে এক স্ট্যাটাস দেন হেলেনা জাহাঙ্গীর।
তিনি লিখেছেন, ‘দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় আর সরকারের হাতকে শক্তিশালী করার প্রত্যাশায় বাংলাদেশের আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ।
‘নামটি অনেকের কাছে নতুন মনে হলেও এটি বেশ অনেক দিন ধরে কাজ করা একটি সংগঠন। এটির বয়স ৩ থেকে ৪ বছর। অনেক দিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে সারা বাংলাদেশব্যাপী। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৩২ জেলায় অফিসসহ কমিটি দেয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে এই সংগঠনটির সদস্য লক্ষ লক্ষ। অবসরপ্রাপ্ত নৌবাহিনী, পুলিশ, সেনাবাহিনী, ব্যাংকার, বেসরকারি অনেক চাকরিজীবী এখানে আছেন।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘প্রচার-প্রচারণা নেই হয়তো এই জন্য অনেকের অজানা। কিছুদিনের মধ্যেই সবাই জেনে যাবেন। কারণ প্রতিদিন জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে আগামীর কার্যক্রম আলোচনা চলছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলেই এটি অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে দেশ ও জনগণের জন্য নিবেদিত সহায়তাকারী সংগঠন হিসেবে কাজ করবে।’
হেলেনা জাহাঙ্গীরের এই স্ট্যাটাসের কমেন্টবক্সে সমালোচনামূলক মন্তব্য করতে দেখা যায় ফেসবুক ব্যবহারকারীদের। অনেকেই খালেদা জিয়া এবং হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে হেলেনা জাহাঙ্গীরের ছবি সংবলিত মন্তব্য প্রকাশ করেছেন ওই স্ট্যাটাসে।
হেলেনা জাহাঙ্গীরের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক ফেরদৌস আলম লিখেছেন, ‘আওয়ামী রাজনীতিতে আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড কী? অনেকে বলছেন, আপনি উড়ে এসে জুড়ে বসা লোক। আমরা তা বলতে চাই না, আপনি আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড তুলে ধরুন, সবাই জানুক আপনি হাইব্রিড না।’
জবাবে হেলেনা জাহাঙ্গীর লিখেছেন, ‘আমার সাথে থাকুন জেনে যাবেন।’
ফরিদ আহমেদ নামের একজন লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগের কি এতই দৈন্যদশা, চাকরিজীবী লীগ করতে হবে?’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে। শাহেদ, সাবরিনা, পাপিয়া…এবার হেলেনা।’
নেতিবাচক এসব মন্তব্য সহ্য করতে না পেরে শনিবার বেলা ১১টা ৩৮ মিনিটে আবারও একটি স্ট্যাটাস দেন হেলেনা। সেই স্ট্যাটাসে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির দুই শীর্ষ নেতার সঙ্গে ছবি থাকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি।
ওই স্টাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে কি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছবি নেই? তাতে কি কিছু বোঝা যায়? আমরা কি অশিক্ষিত যারা এই ভুলগুলো করছি। সবাইকে জানানোর জন্যই বলছি, আমি আমার নেতা ও নেত্রীর কথার বাহিরে এক পা-ও আগাইনা, কাজও করি না।
‘যাদের যোগ্যতা নেই, তারাই মানুষের পিছনে লেগে থাকে, মানুষ সামাজিক জীব সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই আমাদেরকে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে যেতে হয়, একটা ছবি মানুষের রাজনৈতিক পরিচয় বহন করে না।’
সমালোচনাকারীরা থেমে নেই, তাই এই স্ট্যাটাসের কমেন্টবক্সেও তাদের আধিপত্য।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হামজা রহমান অন্তর লিখেছেন, ‘আপনি ব্যবসায়ী, ব্যবসা করতেই এসেছেন। রাজনীতিও আপনাদের কাছে ব্যবসাই। আপনি যদি রাজনীতি করে এসে রাজনীতিবিদ হতে চাইতেন, তবে কখনোই বঙ্গবন্ধু কন্যার সাথে নিজের তুলনা করতেন না।
‘ভাত একটা টিপলেই হাঁড়ির সব ভাতের কোয়ালিটি টের পাওয়া যায়। আর বঙ্গবন্ধুর সৈনিক যদি হয়ে থাকেন, কোথায় ছিলেন ২০০১-১৩ সাল পর্যন্ত? নিশ্চয়ই বাচ্চাকাল ছিল না তখন। শিক্ষাদীক্ষা তো দূরের কথা, সামান্য লজ্জাশরম থাকলেও আবার গলাবাজি করতে আসতেন না। বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া দলটার ওপর আপনাদের মতো দুর্বৃত্তরা অভিশাপ। এই দুর্বৃত্তপনা বন্ধ করবেন বঙ্গবন্ধুকন্যাই।’
চারিদিকে হৈচৈ পড়ে গেলেও চাকরিজীবী লীগের সঙ্গে মূল দলের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম জানান, তারা তো মনোনয়ন দেবেনা। তাদের নিজেদেরই মনোনয়ন নেই। সংগঠনের নামের শেষে লীগ জুড়ে দিলেইই তা আওয়ামী লীগ হয়ে যায় না। মূলদল আওয়ামী লীগের সঙ্গে এদের কোনো সম্পর্ক নেই বলে তিনি জানান।