মাহিদুল ইসলাম মাহি
মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের ঝিটকা বাজারে পাইকারি আড়তে মরিচের দাম ৫ টাকা প্রতিকেজি। অথচ ঢাকার কাওয়ানবাজার, হাতিরপুল, উত্তরা সহ বিভিন্ন খুচরা বাজারে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
মরিচ তোলা এবং পরিবহন খরচ ৭ টাকা হলেও কৃষক বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন ৪-৫ টাকায়। প্রতিদিন মরিচ না তুলতে পারলে মরিচের ফলন কমে যাবে। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে মরিচও তুলতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে সাজাপ্রাপ্ত আসামি আটক
ঢাকা থেকে পাইকার এসে কৃষকের কাছে থেকে মাত্র ৫ টাকা দিয়ে কিনে আনলেও সেটা কাওয়ানবাজার ও উত্তরার আড়ত গুলোতে তারা বিক্রি করছে ২৫ টাকা কেজি, আর হাত ঘুরে ঢাকার খুচরা বিক্রেতা’রা বেঁচে ৪৫ টাকা কেজি দরে। অথচ কৃষক তার উৎপাদন খরচই তুলতে পারছে না।
সরেজমিনে হরিরামপুর উপজেলার মরিচের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার ঝিটকাতে দেখা যায়, বৃষ্টির কারণে অনেক কৃষক ঠিকমতো মরিচ তুলতে না পারলেও অল্প কিছু মরিচ নিয়ে আসছেন, সে মরিচ ও দাম পাচ্ছে না। অনেকে বিক্রিও করতে পারছেননা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর হরিরামপুরে ১৬৬৫ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে। উপজেলার বাল্লা, গালা আর গোপীনাথপুর ইউনিয়নে মরিচের বেশি চাষ হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি চাষাবাদ হয়েছে উপজেলার বাল্লা ইউনিয়নে।
আরও পড়ুন: মানিকগঞ্জে কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকরে মাঠে পুলিশ
উপজেলার বাল্লা ইউনিয়নের বাস্তা এলাকার মরিচ চাষী আজাদ জানান, ১০ বিঘা জমিতে ২ ভাই মিলে মরিচ চাষ করেছেন। মাস খানেক আগে ১২-২০ টাকা পর্যন্ত মরিচ বিক্রি করলও এখন ৫ টাকা করে বিক্রি করতে হচ্ছে। তাদের প্রতি কেজি মরিচ তুলতেই খরচ হচ্ছে ৫ টাকা। পরিবহন খরচ কেজি প্রতি ১-২ টাকা। প্রতিদিন ২০০-২৫০ কেজি মরিচ বিক্রি করতে পারেন তিনি। ঝিটকা বাজার আর বাস্তা আড়তে তিনি মরিচ বিক্রি করে থাকেন বলেও জানান।
মরিচ চাষী মতি মিয়া জানান, ২ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন তবে মরিচের দাম কমে যাওয়ায় হতাশায় আছেন।
ঝিটকা বাজারের প্রদীপ সরকার নামের এক মরিচ বিক্রেতা জানান, ৪০ কেজি মরিচ ২ টাকা করে বিক্রি করেছেন। তবে তার তুলতে ৫ টাকা আর পরিবহন খরচ ২ টাকাসহ কেজিতে ৭ টাকা খরচ পড়েছে।
কৌড়ী গ্রামের নুরু মিয়া জানান, ৫ পাখি(১৫০ শতক) জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। ঝিটকা বাজারে ৬০ কেজি মরিচ এনে ৩ টাকা কেজি বিক্রি করেছেন। খরচের টাকা না উঠায় কিছু ফেলে দিয়েছেন। মরিচ তুলতেই ৫ টাকা চলে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
গোপীনাথপুর গ্রামের ফারুক ও ইউসুফ জানান, ৯০ শতক জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। ৬৮ কেজি মরিচ নিয়ে বাজারে এনেছেন। কেউ দাম ও জিজ্ঞেস করছেনা। মরিচ বিক্রি না হলে ফেলে দিবেন বলেও জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল গাফফার মুঠোফোনে জানান, এ বছর হরিরামপুরে ১২৬৫ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে। আগের চেয়ে উপজেলায় মরিচের উৎপাদন অনেকগুনে বেড়েছে। দাম কমের বিষয়ে জানান, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট এর দিকে নজর দিলে আমরা এ সমস্যা থেকে উৎরাতে পারবো।