নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, চলতি মাসেই (জুলাই) রাশিয়ার তৈরি করোনা টিকা স্পুটনিক-৫ পাওয়া যাবে। তিনি জানান, আমরা টিকা পাওয়ার জন্য সবধরণের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।
মঙ্গলবার (৬ জুলাই) দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
মন্ত্রী বলেন, রাশিয়া থেকে টিকা কেনার সবরকম প্রস্তুতি আমাদের শেষ হয়েছে। আশা করছি, এই মাসের মধ্যেই একটা খবর হয়ত আমরা পেতে পারি।
তিনি বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে আমরা অনেকদিন কাজ করেছি। খুঁটিনাটি কিছু বিষয় ছিল, সেগুলো আমাদের ভ্যাকসিন কমিটি আলোচনা করে শেষ করেছে। এখন আমরা অপেক্ষায় আছি তারা কখন এবং কী পরিমাণ টিকা দেবে। তারা যখনই জানাবে, আমরা তখনই আমাদের প্রক্রিয়া শুরু করে দেব।
জাহিদ মালেক বলেন, আমরা তাদেরকে বলে দিয়েছি যত দ্রুত সম্ভব আমাদেরকে টিকা দেওয়ার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। তারা আমাদেরকে বিস্তারিত জানাবে যে অমুক দিন, এতো সংখ্যক টিকা আমরা দেব, তখন আমরা সে অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেব।
গত ২৭ এপ্রিল রাশিয়ার টিকা স্পুটনিক-৫ বাংলাদেশে জরুরী ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়। ওইদিন ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান এ তথ্য জানান।
এর আগে স্পুটনিক-৫ জরুরি ব্যবহারের অনুমোদনের সুপারিশ করে কোভিড-১৯ টেকনিক্যাল কমিটি।
রাশিয়ান করোনা টিকার উৎপাদন হবে বাংলাদেশে
রাশিয়ার স্পুটনিক টিকা বাংলাদেশে উৎপাদন হবে, যার ফলে বাংলাদেশে আর করোনা টিকার সংকট হবেনা। এ নিয়ে সমঝোতা চুক্তি করেছে বাংলাদেশ ও রাশিয়ান ফেডারেশন। ফর্মুলা গোপন রাখার শর্ত রাখা হয়েছে এ চুক্তিতে।
এ সমঝোতা সই রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন।
মন্ত্রীর মিন্টো রোডস্থ সরকারি বাসভবনে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত এখনও জানায়নি যে তারা টিকা দেবে না। আমরা টিকার অপেক্ষায় আছি।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে চীন তাদের তৈরি ৫ লাখ টিকা উপহার দেয়ার কথা বলেছে।
মোমেন জানান, চীনে যে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করছেন ও যারা দেশটিতে ব্যবসা করেন তারা চীনের তৈরি টিকা নিতে চায়। এর আগে বাংলাদেশে চীনের নাগরিক এবং রূপপুরে পারমাণবিক প্লান্টে রাশিয়ার নাগরিকদের তাদের দেশের তৈরি টিকা দিতে অনুমতি দেয়া হয়েছে। টিকা সংরক্ষণাগার নির্মাণে চীনের প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ।
এক ডোজের স্পুৎনিক টিকাও আনল রাশিয়া
কোভিড-১৯ প্রতিরোধে দুই ডোজের সঙ্গে এক ডোজের স্পুৎনিক টিকাও এসে গেছে, যা এই মুহূর্তে প্রচলিত অন্যান্য দুই ডোজের টিকার চেয়েও বেশি কার্যকর বলে রাশিয়ার দাবি।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক ডোজের টিকার নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্পুৎনিক লাইট’, আর তা প্রায় ৮০ শতাংশ কার্যকর বলে রাশিয়ার দাবি।স্পুৎনিক-ভি কিনতে এবং তৈরি করতে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে বৃহস্পতিবার রুশ গণমাধ্যমে এই খবর এসেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ব্লুমবার্গও প্রকাশ করেছে।
এই টিকা তৈরির পৃষ্ঠপোষকতায় থাকা আরডিআইএফ বলছে, দুই ডোজের স্পুৎনিক-ভি যেখানে ৯২ শতাংশ কার্যকর, সেখানে এক ডোজের স্পুৎনিক লাইটের কার্যকারিতা ৭৯ দশমিক ৪ শতাংশ।
আরডিআইএফের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কিরিল দিমিত্রিয়েভ ব্লমবার্গকে বলেছেন, যে সব দেশে করোনাভাইরাস দ্রুত গতিতে ছড়াচ্ছে, সেসব দেশকে লক্ষ্য করেই এক ডোজের টিকাটি তৈরি করেছেন তারা।
আগামী সপ্তাহের মধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ স্পুৎনিক লাইট অনুমোদন দেবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, মানসম্মত পরীক্ষামূলক প্রয়োগের মধ্য দিয়ে স্পুৎনিক লাইটের কার্যকারিতা যাচাই করে দেখা হয়নি, বরং সরাসরি প্রয়োগের ফল দেখে সিদ্ধান্ত টানা হয়েছে। আর অন্তর্বর্তীকালীন এই পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল এই মাসের শেষ নাগাদ পাওয়া যাবে।
এই টিকার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি বলেও জানিয়েছে আরডিআইএফ।
দুই ডোজের স্পুৎনিক টিকা বিশ্বের দুই কোটির বেশি মানুষ ইতোমধ্যে নিয়েছে বলে দাবি করেছে সংস্থাটি। যদিও রাশিয়ায় মাত্র ৮ শতাংশ মানুষ এই পর্যন্ত টিকা নিয়েছে।