প্রভাতি সংবাদ:
ধর্ম অবমাননার মামলায় মুন্সীগঞ্জের স্কুল শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। ১৯ দিন ধরে কারাবন্দী এই বিজ্ঞান শিক্ষকের জামিন শুনানি শেষে মঞ্জুর করেন মুন্সীগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত।
ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গত ২২ মার্চ আটক করা হয় বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত ও বিজ্ঞানের এই শিক্ষককে। ঐদিনই সদর থানায় মামলা করা হয়। ২৩ মার্চ তাকে আদালতে নেয়া হলে আদালত জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পরে গত ২৮ মার্চ মুন্সীগঞ্জ আমলি আদালত-১ এ আসামির জামিন আবেদন করা হলে ঐ আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল ইউসুফ জামিন নামঞ্জুর করেন। জামিন নামঞ্জুরের পরিপ্রেক্ষিতে তার আইনজীবী মুন্সীগঞ্জ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আসামির জামিনের জন্য ফৌজদারি মিস মামলা করেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অজয় চক্রবর্তী জানান, গত ৪ এপ্রিল ফৌজদারি মিস মামলাটি গ্রহণ করে নিম্ন আদালতের নথি তলব করে জামিন শুনানির জন্য ১০ এপ্রিল দিন ধার্য করেন মুন্সীগঞ্জ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আমজাদ হোসেন।
জানা গেছে, টিউশনিতে হৃদয় মন্ডলের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় অন্য শিক্ষকরা তাকে পছন্দ করতেন না। এসব কারণে দুটি হামলা হয় তার ওপর। মাস দেড়েক আগে হৃদয় মন্ডলের ওপর হামলা হয়। তার স্ত্রী ববিতা হাওলাদার জানান, হামলাকারীরা তার কপালে ইটের টুকরা ছুড়ে মারে।
ঘরের দরজায় লাথি মারার ঘটনাও ঘটে। ববিতা হাওলাদার আরো জানান, দুই বছর আগেও টিউশনি পড়িয়ে বাসায় ফেরার পথে কে বা কারা তার ওপর হামলা করেছিল।
এছাড়া প্রায়ই দরজায় লাথি মেরে ‘মন্ডল মন্ডল’ বলে তিরষ্কার করত কে বা কারা। এখন তা আরো বেড়ে গেছে। গণিতের শিক্ষক হলেও হৃদয় চন্দ্র মন্ডল বিজ্ঞান বিষয়েও পারদর্শী। সেজন্য গণিত ও বিজ্ঞান দুটি বিষয়ই শিক্ষার্থীদের ভাল বোঝাতে পারেন উল্লেখ করে তার স্ত্রী জানান, করোনার আগে প্রতিদিন তিনটি ব্যাচ পড়াতেন তিনি। মহামারীতে টিউশনি কমে গেলে বাড়িতেই পড়াতেন। তবে অন্য শিক্ষকদের চেয়ে হৃদয় মন্ডলের প্রাইভেটে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় অন্য শিক্ষকরা তাকে পছন্দ করতেন না।
এই তালিকায় কিছু শিক্ষার্থীও আছে। তবে এসব ব্যাপারে কখনো আলোচনা করতেন না হৃদয় মন্ডল। ববিতা হাওলাদার জানান, চাকরির সুবাদে ঢাকায় থাকলেও করোনার সময় ২০২০ সালের অক্টোবরের দিকে স্বামীর স্কুলের কোয়ার্টারে আসেন। তবে স্বামী এখানে গত ২০/২২ বছর ধরেই থাকেন। এখানে আসার পর বুঝতে পারেন অনেকেই কোয়ার্টারে থাকা পছন্দ করেন না।
এদিকে এ ঘটনাকে পূর্বপরিকল্পিত দাবি করে ববিতা হাওলাদার বলেন, এ ঘটনা শিক্ষার্থীদের পক্ষে একা ঘটানো সম্ভব না। স্কুলের ভেতরের বা বাইরের কেউ না কেউ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। পূর্বপরিকল্পিত না হলে বহিরাগতরা স্কুলের মধ্যে ঢুকবে কিভাবে?