যশোর প্রতিনিধি:
যশোরের চৌগাছায় ৫০ দিনের ব্যবধানে দুই মানবপাচারকারী আটক হয়েছে। এ ঘটনায় এক নারী, তার দুই শিশু সন্তান এবং দুই কিশোরসহ ৬ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। আটক দুই মানবপাচারকারীর বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে মামলা করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
এরআগে রবিবার দিবগত গভীর রাতে উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের বড়আন্দুলিয়া মাঠ থেকে পাচারের উদ্দেশ্যে একত্রিত করা নারী-শিশুসহ ৬ জনকে উদ্ধার ও দুই মানবপাচারকারীকে আটক করে আন্দুলিয়া ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা।
গ্রেফতার দুই পাচারকারী হলো, উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের বড় আন্দুলিয়া গ্রামের ইউনুস আলী (৩০) ও জহুরুল ইসলাম (২৫)। তাদের বিরুদ্ধে চৌগাছা থানায় একাধিক মানবপাচারের মামলা রয়েছে।
বিজিবি ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতার ইউনুসের কাছ থেকে ১৬ হাজার ভারতীয় রুপি ও একটি ওয়ালটন স্মার্ট মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, আন্দুলিয়া ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যদের নিয়মিত টহলের সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের আন্দুলিয়া সীমান্তের ২/৩শ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মাঠের মধ্যে পাচারের উদ্দেশ্যে একত্রিত করে রাখা ভিকটিমদের উদ্ধার করা হয়। এসময় তাদের পাহারায় থাকা দুই পাচারকারী ইউনুস আলী ও জহুরুল ইসলামকে আটক করে বিজিবি।
এ ঘটনায় উদ্ধাররা হলেন, পাবনা জেলার একটি উপজেলার সজল মৃধা (৩০), যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার সাগর মন্ডলের ছেলে দিপ্ত মন্ডল (১৬), মনোহর মন্ডলের ছেলে সজিব মন্ডল (১৬) মনোহর মন্ডল, বাগেরহাট জেলার মড়েলগঞ্জল উপজেলার একটি গ্রামের রেহেনা খাতুন (৩০) ও তার দুই ছেলে সোহান সরদার (৯), সোহাগ সরদার (৭)।
বিজিবির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উদ্ধাররা জানান, তাদের ভারতে ভালো কাজ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে পাঠানোর উদ্দেশ্যে নিয়ে আসে ইউনুস ও জহুরুলসহ অন্যরা। গ্রেফতার ইউনুস আলী ও জহুরুল ইসলামও পাচারের উদ্দেশ্যে তাদের একজায়গায় করার কথা স্বীকার করেছেন।
বিজিবি ও চৌগাছা থানা সূত্রে জানা যায়, করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে চৌগাছার সীমান্তের অসাধু ব্যক্তিরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নারী, শিশু, তরুণ, তরুণীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষদের ভারতে ভালো কাজ দেয়ার নামে পাচার করে থাকে। এছাড়াও অবৈধ অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটতে থাকে। গত ৮ জানুয়ারি শহরের পাঁচনামা এলাকায় পাচারের উদ্দেশ্যে রাখা ৪ যুবতীকে উদ্ধার ও তিন পাচারকারীকে গ্রেফতার করে র্যাপিড এ্যাকশান ব্যাটেলিয়ান (র্যাব)। সে ঘটনায়ও চৌগাছা থানায় মামলা হয়। সর্বশেষ গত ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের তিনটি ঘটনায় পাচারকারীসহ ৮ নারী ও পুরুষকে গ্রেফতার করে বিজিবি। এ ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়।
পুলিশ ও বিজিবি সূত্রে আরো জানা যায়, ২০২১ সালের জুলাই মাস থেকে ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখ পর্যন্ত চৌগাছা থানায় মানবপাচারের অভিযোগে পাঁচটি মামলা হয়েছে। যার সর্বশেষটি সোমবার দায়ের করে বিজিবি। চলতি বছরে এনিয়ে ৫০ দিনের ব্যবধানে দুটি মানবপাচার মামলা নথিভূক্ত হলো চৌগাছা থানায়।
বিজিবি ও পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, বেশিরভাগ অভিযানের সময় পাচারকারী পালিয়ে যায়। ফলে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা করতে হয়। এতে পাচারকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, বিজিবি পাচারকারীদের আটক ও ভিকটিমদের উদ্ধার করে চৌগাছা থানায় সোপর্দ করেছে। পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে মামলা করেছে বিজিবি। জহুরুল ও ইউনুসকে মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তিনি বলেন গ্রেফতারকৃত ও উদ্ধারদের মঙ্গলবার যশোর আদালতে পাঠানো হবে।