নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
রাজধানীতে নকল ওষুধ তৈরির কারখানায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ জনকে আটক করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ।
গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, দেশের কিছু নীতিহীন চিকিৎসক উপহার বা কমিশন পাওয়ার লোভে অথবা রিকোয়েস্টেড হয়ে এসব নকল ওষুধ রোগীদের প্রেসক্রাইব করেন।
অনেকক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা না জেনেই প্রেসক্রাইব করতেন এসব নকল ওষুধ। এছাড়া বেশিরভাগ ফার্মেসিতে চিকিৎসক না থাকায় ফার্মেসি ব্যবসায়ীরা এসব ওষুধ চড়া দামে বিক্রি করতেন।
এমন অভিযোগ পাওয়ার পরে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের সহযোগিতায় অভিযান চালিয়ে নকল ওষুধ তৈরির কারখানার পরিচালকসহ পাঁচজনকে আটক করেছে ডিবি।
আটকরা হলেন- লুবনা আক্তার (২৬), আনোয়ার কাজী (২৭), রাম চন্দ্র বসাক (৬২), এসএম তাজমুল তারিক (৬৩) ও কনক কুমার শাহা (৫২)।
মঙ্গলবার (২৯ জুন) সকালে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘গতকাল সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে রাজধানীর হাতিরপুল, রামপুরা ও মালিবাগে ধারাবাহিক অভিযানে তাদেরকে আটক করে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম এবং গুলশান জোনাল টিম। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ, স্ট্রিপ, প্ল্যাস্টিকের মোড়ক জাতীয় বোতল উদ্ধার করা হয়।’
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এসব ওষুধ ও বোতলে “মেইড ইন চায়না ও মেইড ইন ইউএসএ” নাম উল্লেখ করে চটকদার বিজ্ঞাপন ও চটকদার নাম দিত তারা। এসব নকল ওষুধের ছিল না কোনো ড্রাগ (ডিএআর) রেজিস্ট্রেশন। একই নম্বর এবং একই রেজিস্ট্রেশন একাধিক ওষুধে ও বোতলে ব্যবহার করত তারা। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর এগুলো ভুয়া বলে জানায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘অভিযানের পর জানা যায়, ঢাকা মহানগরীর চিকিৎসকেরা জেনে কিংবা না জেনে এইসব ওষুধ প্রেসক্রাইব করতেন। এছাড়া বেশিরভাগ ফার্মেসিতে চিকিৎসক না থাকায় ফার্মেসি মালিকেরা এসব ওষুধ চড়া দামে বিক্রি করেন। এসব নকল ওষুধে একদিকে মানুষের যেমন স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে অন্যদিকে রোগীরা প্রতারিতও হচ্ছে।
ডিবি গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, ‘অননুমোদিত এ সমস্ত কারখানায় নারায়ণগঞ্জ জালকুড়িতে অবস্থিত আয়ুর্বেদিক দাওয়াখানা থেকে তৈরি অনুমোদনহীন বিভিন্ন ট্যাবলেট ও ক্যাপসুলকে কেজি দরে অথবা হাজার পিস ধরে কিনে নিয়ে যে যার ইচ্ছামতো জেনেরিক নেইম/ট্রেড নেইম দিয়ে কখনো হার্টের ওষুধ, কখনো লিভারের ওষুধ, কখনো হাড়ের ওষুধ এবং বেশিরভাগ সময় যৌন উত্তেজক ওষুধ হিসেবে আমেরিকা অথবা চায়না থেকে ইমপোর্ট করা হয়েছে বলে চালিয়ে দেয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘আটকরা রাজধানীর চকবাজার, মিটফোর্ড এলাকা থেকে বস্তা ভরা প্লাস্টিকের সাদা লাল সবুজ রঙের বোতল, সিপি, সিলিকন সংগ্রহ করে। হাতিরপুল, নীলক্ষেত, ফকিরাপুল ও মালিবাগের বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকান থেকে ইংরেজিতে অ্যাম্বুস করে লেখা বিভিন্ন হলোগ্রাম, মনোগ্রাম সম্বলিত ঝকঝকে রঙিন স্টিকার ও লেবেল তৈরি করে। ওইসব লেবেলে বিভিন্ন ট্রেড কোম্পানির নামে ইমপোর্ট এবং মার্কেটিং করা হয় মর্মে লেখা থাকে যার কোনো অস্তিত্বই নেই। তৈরিকৃত স্টিকার ও লেবেলগুলোকে ঘরে বসে প্লাস্টিকের বোতলে সেটে দিয়ে কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের মাধ্যমে এই সমস্ত ভেজাল ওষুধ গুলশান-বনানী, কাকরাইল, ধানমন্ডি, উত্তরা ও মিরপুরের বিভিন্ন নামিদামি এবং পরিচিত ডিসপেনসারিতে বিদেশি ওষুধ হিসেবে মার্কেটিং করা হয়।’
পুলিশ কর্মকর্তা মশিউর রহমান আরও বলেন, ‘আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, দেশের কিছু নীতিহীন চিকিৎসক উপহার বা কমিশন প্রাপ্তির লোভে অথবা রিকোয়েস্টেড হয়ে এসব নকল ওষুধ রোগীদের প্রেসক্রাইব করেন।’
ভেজাল এসব ওষুধ বিভিন্ন পাইকারদের একটি সিন্ডিকেট ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, কক্সবাজার, মানিকগঞ্জসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য অভিযুক্তদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া আটকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান মশিউর রহমান।