নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
প্রতি সনদে সই করতে উপাচার্য কে (ভিসি) দিতে হয় ৬ টাকা। এভাবে শুধু সই করে বছরে কমপক্ষে ১৬ লাখ টাকা করে আয় করেছেন তিনি।
এ ঘটনাটি ঘটেছে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাউবি)। স্বাক্ষরপ্রতি ৬ টাকা করে নেয়ার কথা নিজে স্বীকার করেছেন সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এ মাননান। বলেছেন, আইন অনুযায়ীই সব কিছু করা হয়েছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন বলছে, সনদে সই করা বাবদ টাকা নেয়ার কোনো বিধান আইনে নেই, বিষয়টি গুরুতর অপরাধ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. এম এ মাননান বলেন, ‘বিষয়টি অবশ্যই আইনসিদ্ধ। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে মেলালে হবে না। কারণ এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতি বছর ৪ লাখ সনদ দিয়ে থাকে। নিয়মিত সময়ে এ কাজ করা সম্ভব না। তাই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস থেকে যখন নিয়মিত কাজের বাইরে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছে, তখন আমরা সম্মতি দিয়িছে, যা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অনুমোদনও করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সনদের ৩০ শতাংশ কাজের বাইরে কাজ অতিরিক্ত কাজ হিসেবে গণ্য হবে। অর্থাৎ সনদসংক্রান্ত ৭০ শতাংশ কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাই অতিরিক্ত টাকা পাবে, যা আপনি ওভারটাইমও বলতে পারেন।’
তিনি নিজে প্রতি সনদে কত টাকা পেয়েছেন, এমন প্রশ্নে বিরক্তির সুরে এম এ মাননান বলেন, ‘ভিসি হিসেবে আমি ৬ টাকা পেয়েছি। এটা অন্যায়ের কিছু না, এটা একদম ওপেন সিক্রেট।’
প্রতি বছর ৪ লাখ সনদের ৭০ শতাংশ অর্থাৎ ২ লাখ ৮০ হাজার সনদে স্বাক্ষর বাড়তি কাজ হিসেবে গণ্য করা হলে ৬ টাকা হারে এ খাতে উপাচার্য বছরে ১৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা বিল নিয়ে থাকতে পারেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের অফিসে যোগাযোগ করা হলেও এ খাতে মোট কত টাকা আয় হয়েছে, এ বিষয়ে কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। একাধিকবার বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোস্তফা আজাদ কামালকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
২০১৩ সালের মার্চে বাউবির উপাচার্য পদে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. এম এ মাননান। দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন শেষে এ বছরের মার্চ মাসে বিদায় নেন তিনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, ‘আমার দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম শুনলাম। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিশনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় সংশিষ্ট সব কাজ করা উপাচার্যের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তাহলে সনদে সই করা কি উপাচার্যের কাজ না? এ ধরনের কাজ করার জন্য কোনো ভিসি টাকা নেন বলে আমার জানা নেই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বর্তমান উপাচার্য (অতিরিক্ত দায়িত্বে) অধ্যাপক ড. নাসিম বানু বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ধরনের ঘটনা যদি ঘটে থাকে, তাহলে খোঁজ নেয়া হবে।’
এ বিষয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের খবর তো আগে কখনো শুনি নাই, এটা অকল্পনীয়। এটা তদন্ত হওয়া উচিত। না হলে সব জায়গায় এ ধরনের ঘটনা ছড়িয়ে পড়বে।’