প্রভাতী সংবাদ ডেস্ক:
যুক্তরাজ্যে প্রথমবার মায়ের একটি কিডনি মেয়ের শরীরে প্রতিস্থাপনের পূর্বে তার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ‘পুনঃপ্রোগ্রাম’ করা হয়েছিল। পরিকল্পিত কিডনি প্রতিস্থাপনের ছয় মাস আগে আট বছর বয়সী অদিতি শঙ্করকে তার মা দিব্যার অস্থিমজ্জা ব্যবহার করে স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়েছিল।
লন্ডনের গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতালে সম্পাদিত এই পদ্ধতির অর্থ হল আট বছর বয়সী শিশুটির দেহ অঙ্গটিকে তার নিজের হিসেবে গ্রহণ করেছে যা তাকে আজীবন ওষুধ খাওয়া থেকে বাঁচিয়েছে।
প্রতিস্থাপনের এক বছর পর সে এখন তার বয়সী মেয়েদের মতো আচরণ করতে সক্ষম, যেমন সাঁতার কাটা, নাচ এবং তার ট্রামপোলিনের উপর লাফানো সবই সে উপভোগ করছে।
অদিতি পাঁচ বছর বয়সে এমন এক বিরল (তিন মিলিয়নে এক জনের হয়) জেনেটিক রোগে আক্রান্ত হয়েছিল, যা তার ইমিউন সিস্টেম এবং কিডনিকে প্রভাবিত করে। চিকিৎসার জন্য উত্তর—পশ্চিম লন্ডনের গ্রিনফোর্ড এ নিজ বাড়ি থেকে সপ্তাহে অন্তত তিনবার তাকে চিলড্রেন হাসপাতালে যেতে হতো।
২০২১ সালের মার্চ মাসে, অদিতির কিডনির কার্যকারিতা মারাত্মকভাবে কমে গিয়েছিল, সেই সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটাই দুর্বল ছিল যে ঐতিহ্যগত ট্রাডিশনাল কিডনি প্রতিস্থাপন কাজ না করার বিষয়ে চিকিৎসকরা আশঙ্কা করেছিলেন।
গোশের রেনাল, ইমিউনোলজি এবং স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট টিমের বিশেষজ্ঞরা আন্তর্জাতিক সহকর্মীদের নিয়ে একটি চিকিত্সা পরিকল্পনা তৈরি করেন যার মধ্যে অস্থি মজ্জার ডাবল ট্রান্সপ্লান্ট এবং কিডনি রয়েছে।
অদিতি অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপনের পরে চার সপ্তাহ নিবিড় পরিচর্যায় কাটিয়েছেন, এই সময় ক্রমাগত কিডনি ডায়ালাইসিসও চলছিল। ছয় মাস পরে, ২০২৩ সালের মার্চ মাসে, অদিতি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য যথেষ্ট ফিট ছিল।
অদিতিকে এক মাস এন্টি—রিজেকশন ওষুধে নিতে হয়েছিল কিন্তু অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপন এবং কিডনি একই দাতার (মা) কাছ থেকে এসেছে বলে তার নতুন কিডনি সেগুলো ছাড়াই কাজ করছে।
অদিতির মা দিব্যা মেয়েকে অস্থি মজ্জা এবং তার একটি কিডনি দান করতে পেরে ‘খুশি এবং গর্বিত’ বলে জানিয়েছেন।
গশের শিশুদের কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক স্টিফেন মার্কস জানান অদিতি যুক্তরাজ্যে প্রথম রোগী যে কিডনি প্রতিস্থাপন করেছে যার জন্য ইমিউনোসপ্রেসিভ ওষুধের প্রয়োজন নেই।
তিনি আরো বলেন, ‘তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতি প্রথমে মায়ের অস্থিমজ্জার দ্বারা সংশোধন করতে হয়েছিল, এবং যেহেতু অদিতি তার মায়ের অস্থিমজ্জা গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছিল, তাই তার শরীর তখন তার মায়ের কিডনিকে তার অংশ হিসেবে দেখতে পাবে।
কিন্তু তিনি সতর্ক করে বলেন যে ডাবল ট্রান্সপ্লান্টের ঝুঁকি অনেক বেশি, তাই এটি শুধুমাত্র তাদের জন্যই বিবেচনা করা যেতে পারে যাদের অনুরূপ অবস্থা, যেমন আপোষহীন প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপনের এক বছর পরে এবং একটি কিডনি প্রতিস্থাপনের ছয় মাস পর অদিতির স্বাভাবিক জীবনযাত্রার চিত্র সকলের জন্যই হৃদয়গ্রাহী। সমুদ্র সৈকতে যাওয়া, গান গাওয়া, নাচ এবং স্কুলে যাওয়া এবং স্বাভাবিক শিশুরা যা কেও, অদিতিও তা করতে সক্ষম ।
মেয়েটির বাবা উদয় পুরো চিকিৎসা পদ্ধতিতে অদিতির সমর্থনের কথা উল্লেখ করে বলেন যে সেন প্রতিদিন ছয় থেকে আট ঘণ্টা ডায়ালাইসিসের জন্য যেত এবং বাড়ি ফিরে এসে পুরো ঘর আলোকিত করে রাখতো।’