নিজস্ব প্রতিবেদক:
ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে রাশিয়ার ওপর আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার ফলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
তিনি জানিয়েছেন, আগের চেয়ে দ্বিগুণ দামে এখন জ্বালানি তেল কিনতে হচ্ছে। এর ফলে সরকারকে বিপুল ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। যা দিন দিন অসম্ভব হয়ে উঠছে।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়ে বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে অডিও বার্তা পাঠিয়ে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
বার্তায় নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি প্রায় ৬ থেকে ৭ মাস ধরে তেলের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রচন্ডভাবে। যে তেল আমরা ৭০ থেকে ৭১ ডলারে কিনতাম সেটা এখন ১৭১ ডলার হয়ে গেছে। সেটা সবসময় বাড়তির দিকেই যাচ্ছে। আমরা বলে আসছি, প্রথম থেকেই যে আমরা তেলের দামে অ্যাডজাস্টমেন্টে যাব। আমরা নিজেদের অর্থে দিয়ে যাচ্ছি ভর্তুকিটা। তারপরও আমার মনে হয় আমাদের একটা সময় অ্যাডজাস্টমেন্টে যেতে হবে প্রাইসে।
এই সংকট সাময়িক জানিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করতে দেশবাসীকে পরিবর্তিত এই পরিস্থিতির বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান সংকট সাময়িক। তিনি গ্যাস ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে জনগণের কাছে আহ্বান জানান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তেলের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। তেলের দাম তারা সমন্বয় করেছে। ভারতের কথাই বলি পার্শ্ববর্তী দেশ, তাদের প্রায় ৩৫ থেকে ৫০ টাকা ডিফারেন্স লিটারপ্রতি বিভিন্ন তেলের ক্ষেত্রে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, গ্যাস দিয়ে আমাদের ৬৪ শতাংশ বিদ্যুৎ চলে। আমাদের যে নিজস্ব গ্যাস আমরা দিন দিন বাড়াচ্ছি, আবার দিন দিন কমছেও। দুটো দিকই আছে। আমরা বাড়াচ্ছি খনিগুলো থেকে আমরা পাচ্ছি সেটা স্বল্প পরিমাণে পাচ্ছি। আর যেটা কমছে সেটা কমছে দ্রুত গতিতে। সেটাও আমরা প্রায় ১০ বছর থেকে বলে আসছি, আস্তে আস্তে গ্যাস কিন্তু ডিকলাইনের দিকে যাবে। সেটা বড় কথা না, বড় কথা হলো আমরা যে অ্যাডজাস্টমেন্টটা করতাম, যে ঘাটতিটা ছিল গ্যাসে সেটা আমরা ইমপোর্ট গ্যাস দিয়ে পূরণ করতাম। এর মধ্যে আমার দুটি ধারা, একটি হলো লংটার্ম কনট্যাক্ট, সেই প্রাইসটা ফিক্স করা। তুলনামূলক এই দামটা তেলের সঙ্গে ওঠানামা করে। আরেকটা হলো স্পট মার্কেট। এই মার্কেটের ডিমান্ড বেড়ে গেছে প্রচন্ডভাবে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তেল এবং গ্যাসের দাম প্রচন্ডভাবে ইফেক্ট করেছে।
তিনি বলেন, ‘ইউরোপের অধিকাংশ দেশ গ্যাস নেয় রাশিয়া থেকে। সেটা তারা এখন বন্ধ করে দিচ্ছে বলেই সব দেশ এই গ্যাসের ওপর (স্পট মার্কেট) প্রচন্ডভাবে নির্ভরশীল হয়ে গেছে। এ কারণে যেটা চার ডলারের গ্যাস সেটা ৩০ ডলার হয়ে গেছে স্পট মার্কেটে। সেটা কিনতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। অর্থের জোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সরকারি ভর্তুকি দিয়েও এটা সম্ভব হবে না, এই পরিমাণ অর্থ জোগান দেওয়া।
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা যদি শুধু দাম বাড়াতেই থাকি তাহলে সাধারণ মানুষের ওপর প্রচন্ডভাবে চাপ তৈরি হবে। আমি আগে থেকেই বলে আসছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন কিছু করবেন না যাতে সাধারণ মানুষের ওপর বোঝা হয়ে থাকে। এর কারণে আমরা গ্যাসে সামান্য পরিমাণ মূল্য সংযোজন করেছি। এখনও আমরা তেলে করিনি। আমি আশা করব সকলেই বিষয়টি বুঝতে পারবেন আর ধৈর্য ধরবেন। এটা খুব সাময়িক। আমাদের প্রচুর পাওয়ার প্ল্যান্ট আছে। কিন্তু গ্যাসের কারণে সেগুলোতে আমরা পাওয়ার জেনারেশন কমিয়ে দিয়েছি। আমরা প্রায়োরিটি দিয়েছি গ্যাসটাকে যে সার উৎপাদনে বেশি খেয়াল রাখব আর ইন্ডাস্ট্রিতে গ্যাসটা বেশি দেব।
বার্তায় সবাইকে গ্যাস ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ভরসা রাখতে বলেছেন। ‘আমরা নিশ্চয়ই সংকট মোকাবিলা করতে পারব। নিশ্চয়ই অল্প সময়ের মধ্যে আমরা বিপদমুক্ত হব’-বলেন তিনি।