নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
কর্মকর্তারা বলছেন, মানুষবিহীন অন্তত বছর খানেক ট্রায়াল রানের পর যাত্রী চলাচল শুরু হবে। সে হিসেবে আগামী বছরের আগস্ট মাসের আগে এ পথে মেট্রোরেল চলাচলের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
আগামী ডিসেম্বরে মেট্রোরেলের একটা অংশ চালু করার কথা থাকলেও আপাতত সেটা সম্ভব হচ্ছেনা। কাজের মধ্যে করোনার হানা দেয়াটাও একটা কারন।
কর্মকর্তারা বলছেন, মানুষবিহীন অন্তত বছর খানেক ট্রায়াল রানের পর যাত্রী চলাচল শুরু হবে। সে হিসেবে আগামী বছরের আগস্ট মাসের আগে এ পথে মেট্রোরেল চলাচলের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। অবশ্য ঠিক কবে নাগাদ মেট্রোরেল চালু হতে পারে সংশ্লিষ্টরা সে বিষয়ে এখনই কিছু বলছেন না।
দেশের প্রথম মেট্রোরেল (এমআরটি-৬) প্রকল্পে গত এক বছরে মাত্র ২১ শতাংশ কাজের অগ্রগতি হয়েছে । করোনা মহামারির কারণে কাজের গতি খানিকটা ধীর হয়েছিল, তবে সবমিলিয়ে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কাজ এরইমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
ঠিক যতটা এগোনোর কথা ছিল, করোনার কারনে কাজ ততোটা আগায়নি। অবশ্য ইতিমধ্যে চার সেট ট্রেন দেশে এসে পৌঁছেছে। তাই আগামী মাসে ভায়াডাক্টের (ট্র্যাক) ওপর পরীক্ষামূলক চলাচল করতে চায় সরকার।
মেট্রোরেল প্রকল্প-৬-এর বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের মোট ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। বিগত জুন পর্যন্ত কাজের মোট অগ্রগতি হয়েছে ৬৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ২০ দশমিক ১ কিলোমিটারের মধ্যে ইতোমধ্যে ১৬ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট বসানো হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে কাজের ধীরগতি থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে নির্মাণকাজ চলছে।
মেট্রোরেল চালু হয়ে ঢাকার যানজট কমবে৷ এছাড়া যাত্রীরা পাবে দ্রুত ও আরামদায়ক যাতায়াত সেবা। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) মেট্রোরেল প্রকল্পে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে।
কাজের অগ্রগতি
মেট্রোরেলের কাজকে তিনটি ভাগে ভাগ করে নেয়া হয়েছে। প্রথম অংশ উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত কাজের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। দ্বিতীয় অংশে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত কাজের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৬৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। তৃতীয় অংশে রাখা হয়েছে ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক (রেল কোচ) ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করা। এই কাজের সামগ্রিক অগ্রগতি হয়েছে ৫৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
এ ছাড়া মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার রেলপথ বর্ধিত করার জন্য ডিটেইল ডিজাইন ও ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান রয়েছে।
মোট আটটি প্যাকেজের আওতায় এমআরটি-৬-এর কাজ করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রথম দুই প্যাকেজে ডিপোর ভূমি উন্নয়নকাজ ও পূর্তকাজ শেষ হয়েছে । গত জুন পর্যন্ত প্যাকেজ-৩ ও ৪-এর আওতায় ভায়াডাক্ট নির্মাণ কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮২ দশমিক ১৭ শতাংশ। প্যাকেজ-৫-এর আওতায় আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত ভায়াডাক্ট ও তিনটি স্টেশন নির্মাণকাজের অগ্রগতি হয়েছে ৭০ শতাংশ।
প্যাকেজ-৬-এ ভায়াডাক্ট ও চারটি স্টেশন নির্মাণ কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৭০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। প্যাকেজ-৭-এর আওতায় ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড মেকানিক্যাল সিস্টেমে কাজের অগ্রগতি ৭২ শতাংশ। সব শেষ প্যাকেজ-৮ আওতাভুক্ত রোলিং স্টক (রেল কোচ) ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৫০ শতাংশ।
ডিএমটিসিএলের দেয়া তথ্যমতে, ২০২০ সালের জুনমাস পর্যন্ত এ প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি হয়েছিল ৪৬ দশমিক ১৩ শতাংশ। একবছরের মাথায় চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত অগ্রগতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। সে হিসাবে করোনাকালীন সময়ে ধীরগতি সত্ত্বেও কাজের মোট অগ্রগতি হয়েছে ২৩ দশমিক ৫১ শতাংশ।
আগামী মাসেই টেস্ট রান
এমআরটি-৬ রুটে মোট ২৪ সেট ট্রেন যাতায়াত করবে। প্রতি সেট ট্রেনে দুটি ইঞ্জিনসহ মোট ছয়টি বগি থাকবে। প্রথম সেট ট্রেন ঢাকায় এসেছে এপ্রিল মাসের ২৩ তারিখ। এরপর উত্তরায় ডিপোতে সেটির ১৯ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। প্রথমবার ১৪ মে ডিপোর ভেতর ট্রায়াল ট্র্যাকে চালিয়ে দেখা হয়।
বর্তমানে প্রথম সেট ট্রেনের ডিপোর ভেতরেই ফাংশনাল টেস্ট চলছে। সামনের মাসে (আগস্টে) ভায়াডাক্টের ওপর পারফরমেন্স টেস্ট বা টেস্ট রান করা হবে।
কবে নাগাদ মেট্রোরেল ট্রায়ালে যেতে পারবে, এ বিষয়ে এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, ‘ট্রায়াল অবশ্যই হবে, কবে শুরু হবে, তা অনেক দূরে। আমরা আগামী মাসে (আগস্ট) ভায়াডাক্টের ওপর টেস্ট রান করব। আপাতত এটাই আমাদের আগামী টার্গেট। আমরা টার্গেট সেট করে নিই এবং সেটা অর্জন করে এগিয়ে যাই। ।’