More

    জাহাঙ্গীরনগরের ছাত্র জাহিদ নব্য জেএমবির বোমা কারিগর

    সিটিটিসি সূত্র জানায়, জঙ্গিদের বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ দিতে অনলাইন সেল খোলেন জাহিদ হাসান। এই সেলগুলোকে বলা ‘ইদাদ’, মোট তিনটি ইদাদ রয়েছে। প্রতিটি ইদাদে ২০ জন করে ৬০ জন সদস্য জাহিদ হাসানের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেন। এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলে অনলাইনের মাধ্যমে, যাদের বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

    নিজস্ব প্রতিবেদক:

    সাইনবোর্ডে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে বোমা রাখার অভিযোগে গত ১১ জুলাই রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে নব্য জেএমবির সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন ও কেরানীগঞ্জ থেকে নব্য জেএমবির আরেক সদস্য কাউসার হোসেন ওরফে মেজর ওসামাকে গ্রেফতার করা হয়।

    সিটিটিসি সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতার এই দুই জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদের নব্য জেএমবির বোমা তৈরির এক কারিগর জাহিদ হাসান ওরফে রাজু ওরফে ফোরকানের নাম উঠে আসে। হলি আর্টিসান হামলায় গ্রেফতার শরিফুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এর আগে জাহিদ হাসানের বিষয়ে প্রথম কিছু তথ্য পেলেও তার পরিচয় সেসময় নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।

    তারপর থেকেই শনাক্তের চেষ্টা চলছিল কিন্তু জঙ্গিবাদের দাওয়াতে জড়িত ওসামা ও আব্দুল্লাহ আল মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদের পরে তার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পায় সিটিটিসি।

    মূলত, ২০১৬ সালে হলি আর্টিসান হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একাধিক মাস্টারমাইন্ড জঙ্গিকে গ্রেফতার করলে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় জঙ্গি সংগঠনগুলো। তবে তিন বছর পর ২০১৯ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিভিন্ন পুলিশ বক্সে ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস ব্যবহার করে বোমা হামলার মাধ্যমে নতুন করে অস্তিত্ব জানান দেয় জঙ্গিরা।

    আর এর পেছনে নাম উঠে এসেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৬ সালে রসায়ন বিভাগে স্নাতক পাস করা জাহিদ হাসানের। ২০১৬ সালেই অনলাইন দাওয়াতের মাধ্যমে নব্য জেএমবিতে যোগ দেন তিনি। অবশ্য ২০১৪ সাল থেকেই জঙ্গিবাদের সঙ্গে জাহিদ হাসানের সংশ্লিষ্টতার অল্প কিছু প্রমাণও পেয়েছে সিটিটিসি। বর্তমানে জাহিদ হাসান পলাতক রয়েছেন।

    জাহিদ হাসান

    সিটিটিসি জানায়, ২০১৯ সালের ২৫ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে নব্য জেএমবির শীর্ষ জঙ্গি শরিফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। শরিফুল ইসলাম হলি আর্টিসান হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড ও জঙ্গিদের প্রশিক্ষক ছিলেন।

    তাকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে সিটিটিসি প্রথম জানতে পারে যে, কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের এক ছাত্র নব্য জেএমবির বোমা তৈরির শাখার প্রধান হিসেবে কাজ করছেন এবং বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তবে শরিফুলের থেকে এ বিষয়ে(জাহিদ) বিস্তারিত তথ্য পাননি তদন্ত কর্মকর্তারা।

    জাহিদের জঙ্গি বিষয়ে তথ্য প্রকাশ পেলো যেভাবে

    সিটিটিসি জানায়, পুলিশ বক্সে বোমা হামলাগুলোর ঘটনার তদন্তে হামলাগুলোর বিষয়ে মিল খুঁজে পায়। হামলায় ব্যবহার করা বোমাগুলোর একই ধরনের এবং সেগুলো দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি।

    তখন তদন্তকারীরা বুঝতে পারেন, বোমাগুলো নির্দিষ্ট একজনের ফর্মুলায় তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে এসব হামলার সঙ্গে জড়িতরা গ্রেফতার হলেও বোমার জোগান চলমান থাকায়, এই বোমা কোথা থেকে আসছে আর নতুন হামলা হচ্ছে সে সময় নির্দিষ্ট কাউকে সন্দেহ হয় তদন্তকারীদের।

    তারপর থেকেই শনাক্তের চেষ্টা চলছিল কিন্তু জঙ্গিবাদের দাওয়াতে জড়িত ওসামা ও আব্দুল্লাহ আল মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদের পরে তার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পায় সিটিটিসি।

    ডিএমপির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের প্রধান এডিসি রহমত উল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশে যখন ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ তৈরির প্রমাণ পাওয়া যায় তখন থেকেই ধারণা করছিলাম রসায়ন পড়ুয়া কোনো শিক্ষার্থী এটার সাথে জড়িত। তখন থেকেই আমরা মূল হোতাকে(জাহিদ) খুঁজছি।

    সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জের জঙ্গি আস্তানায় গ্রেফতার দুই জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও জাহিদের বিষয়ে তথ্য পাওয়ার পরে থেকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।

    অনলাইনেই বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দেয় জাহিদ

    সিটিটিসি সূত্র জানায়, এক সঙ্গে চার-পাঁচজনকে সঙ্গে নিয়ে ফ্ল্যাট বাসায় বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ দিতে গেলে গ্রেফতার হওয়ার আশঙ্কা থেকেই অনলাইনে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন জাহিদ। জাহিদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নব্য জেএমবির কোনো সদস্য বোমা বানানোর পর যদি কাজ না করতো তাহলে ভিডিও কলের মাধ্যমে সব কিছু আবারও বুঝিয়ে দিতেন।

    সর্বশেষ সাইনবোর্ড ট্রাফিক পুলিশ বক্সে হামলার সঙ্গে জড়িত গ্রেফতার নব্য জেএমবির সদস্য মামুন গ্রেফতার হওয়ার পরে সিটিটিসিকে জানান, তিনি তিন দিন বোমা বানানোর পরেও কাজ করেনি। নব্য জেএমবির শীর্ষ জঙ্গি মাহাদি হাসান জন তাকে একটি অনলাইন আইডি দিলে সে আইডিতে(জাহিদ) ভিডিও কলে কথা বলেন। তার(জাহিদ) পরামর্শ অনুযায়ী আবার বোমা বানান মামুন, পরে সেই বোমা কাজ করে।

    প্রসঙ্গত, ২০১৯ থেকে চলতি বছরে ১০-১২টি পুলিশ বক্সে বোমা হামলার চেষ্টা করে নব্য জেএমবির জঙ্গিরা। এসব ঘটনায় জড়িত নব্য জেএমবির বোমা বানানোর যে সেল রয়েছে, এই সেলের প্রধান জাহিদ হাসান।

    সিটিটিসি সূত্র জানায়, জঙ্গিদের বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ দিতে অনলাইন সেল খোলেন জাহিদ হাসান। এই সেলগুলোকে বলা ‘ইদাদ’, মোট তিনটি ইদাদ রয়েছে। প্রতিটি ইদাদে ২০ জন করে ৬০ জন সদস্য জাহিদ হাসানের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেন। এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলে অনলাইনের মাধ্যমে, যাদের বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

    প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তারা গ্রেফতারের এড়াতে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা করার জন্যই এই সেল চালু করা হয়।

    জাহিদ হাসানকে গ্রেফতারের বিষয়ে সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সে বড় মাপের জঙ্গি, শিক্ষাজীবন থেকেই জাহিদ হাসান জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত। তাকে গ্রেফতারের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে পুলিশ।

    জঙ্গিবাদে এর আগেও গ্রেফতার জাবি ছাত্র

    এর আগে ২০২০ সালে ১৯ জানুয়ারী জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঢাকার আশুলিয়ার গোকুলনগরের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এক নারীকে আটক করে পুলিশ। আটককৃত নারীর বাড়ি থেকে ড্রোন ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম পাওয়া যায়।

    আটক হওয়া নারীর নাম শায়লা শারমিন (২২)। সে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জঙ্গিবাদে জড়িত মোঃ তানভীরের স্ত্রী।

    সেসময় প্রেস ব্রিফিংয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার জানান, ওই বাড়িতে জঙ্গিরা আস্তানা গেড়েছে -এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় বাড়তি নিরাপত্তার জন্য পুলিশ বাড়িটি ঘিরে রাখে। অভিযান চলাকালে ওই বাড়িতে ড্রোন ও বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি পাওয়া গেছে। দোতলা বাড়িটির নিচতলায় শায়লা শারমিন ছিলেন। তাঁকে বাড়ির ভেতরেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

    পুলিশ তখন জানায়, তানভীর নব্য (নিউ) জে.এম.বির তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) শাখার প্রধান। এর আগে আশুলিয়ায় আরেকটি বাড়ি ভাড়া নেন তানভীর। পুলিশ সেখানেও অভিযান চালায়, তবে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি।

    ২০২০ সালের ২৩ জুলাই রাত আনুমানিক পৌনে ২টায় শিবগঞ্জের চণ্ডিহার এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছিলেন রাজশাহী রেঞ্জের ডি.আই.জি আব্দুল বাতেন।

    জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আই.টি বিভাগের ছাত্র ও গোপালগঞ্জের মকসুদপুর উপজেলার মোহাম্মদ আলীর ছেলে এবং নব্য জেএমবির আই.টি সদস্য তানভীর আহাম্মেদ ওরফে আবু ইব্রাহিম (২৫) গ্রেফতার হয়।

    তার সাথে সেসময় আরও আটক করা হয় নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ছাত্র, ময়মনসিংহ জেলা সদরের আব্দুর রহমানের ছেলে আতিকুর রহমান (২৮), টাঙ্গাইল জেলার ভূইয়াপুরের খন্দকার গোলাম সারোয়ারের ছেলে এবং এ দলের মিডিয়া শাখার প্রধান মোঃ জাকারিয়া (৩১), এবং ময়মনসিংহ জেলা সদরের আব্দুল হাকিমের ছেলে আবু সাঈদ (২৭)।

    গ্রেফতারের পরে সেসময় প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিআইজি আব্দুল বাতেন জানান, গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ১ বিদেশি রিভলবার, পিস্তলের একটি ম্যাগাজিন, ২টি রাউন্ড পিস্তলের গুলি, ১টি দেশি তৈরি ওয়ান শুটার গান, দুইটি কার্তুজ, ৩ অত্যাধুনিক বার্মিজ চাকু, একটি চাপাতি, এক কেজি বিস্ফোরক দ্রব্য পটাশিয়াম ক্লোরেট, দুইটি লাল টেপ, চারটি ব্যাটারি, কিছু পরিমাণ তার সহ জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়।

    তারও আগে ২০১৬ সালে ৭ আগষ্ট জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইব্রাহিম ইবনে মোল্লা মোশাররফকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আটককৃত জঙ্গি ইব্রাহিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন টেকনোলজি ইনস্টিটিউট-আইআইটি’র ৪৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।

    © এই নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
    / month
    placeholder text

    সর্বশেষ

    রাজনীাত

    বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্য বিদেশে হাসপাতাল খোজা হচ্ছে

    প্রভাতী সংবাদ ডেস্ক: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্যে আবেদন করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা মনে করেন আবেদনে সরকারের দিক থেকে ইতিবাচক...

    আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ

    আরো পড়ুন

    Leave a reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    spot_imgspot_img